স্টাফ রিপোর্টার: দেশে কর্মরত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মাত্রাতিরিক্ত খরচ, যোগ্য শিক্ষকের অভাব ও বিতর্কেও কারণে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। বরং প্রায় অর্ধেক আসনই প্রতি শিক্ষাবর্ষে খালি থাকছে। অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ই শিক্ষার গুণগত মান ও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবে শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে কোনো কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। কিন্তু তারপরও প্রতি বছর যোগ হচ্ছে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গত ও চলতি বছরের মধ্যে আবেদন জমা পড়েছে শতাধিক। সেগুলোর মধ্যে ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয় চলতি বছর অনুমোদন পেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নতুনভাবে যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পাচ্ছে তার বেশিরভাগই দলীয় ও রাজনৈতিক বিবেচনায় পাচ্ছে। কারণ শিক্ষা সম্পর্কিত খাতে কোনো কার্যক্রমই নেই এমন উদ্যোক্তারাও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে বাণিজ্য শুরু করার আশঙ্কা বাড়ছে। আর শিক্ষা কার্যক্রম চলমান ৮৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫ সালে আসন ছিল ২ লাখ ৭৯ হাজার ৮৯০টি। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলিয়েই ছিল ওই আসনসংখ্যা। কিন্তু নির্ধারিত আসনের বিপরীতে ২০১৫ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থী পেয়েছে মাত্র ১ লাখ ২০ হাজার ৮৪২ জন। ওই হিসাবে সেবছর ৫৭ শতাংশ আসনই খালি ছিল।
সূত্র জানায়, হাতেগোনা চার থেকে পাঁচটি ছাড়া বাকি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নির্দিষ্ট আসন অনুপাতে শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। বিগত ২০১৪ সালে দেশে শিক্ষা কার্যক্রমে ছিল ৭৫টি বিশ্ববিদ্যালয়। ওই বছর আসন ছিল ২ লাখ ৩৫ হাজার দুটি। তবে সব বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে ওই শিক্ষা বছর ১ লাখ ২১ হাজার ১৯৪ জন শিক্ষার্থী পায়। খালি ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৮০৮টি আসন। ২০১৩ সালে শিক্ষা কার্যক্রমে ছিল ৬৮টি বিশ্ববিদ্যালয়। তখন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলে আসন ছিল ২ লাখ ১৪ হাজার ৩৬৯টি। ওই বছর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থী পায় মাত্র ১ লাখ ১৯ হাজার ৭৬৫ জন শিক্ষার্থী। ওই শিক্ষাবর্ষেও আসন খালি ছিল শতকরা ৪৪ ভাগ। আর চলতি বছরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরো কমার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ জঙ্গি হামলার সাথে কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সম্পৃক্ততার খবরে অনেক অভিভাবকই উদ্বিগ্ন। তাছাড়া গতবছরের নভেম্বরে ইউজিসি এক বিজ্ঞপ্তিতে ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ অবৈধ বলে ঘোষণা করে। যদিও এক সপ্তাহের মধ্যেই ইউজিসি ওই ঘোষণা থেকে সরে এসে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সনদ গ্রহণযোগ্য বলে বিবৃতি দেয়। তারপরও ওই ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে অনেক অভিভাবক বিভ্রান্তিতে আছেন। ওসব প্রতিষ্ঠানে তারা সন্তানকে ভর্তি করাতে রাজি হচ্ছেন না।
সূত্র আরো জানায়, পুরনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যথেষ্ট শিক্ষার্থী না পেলেও থেমে নেই নতুন অনুমোদন। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন জেলা মিলিয়ে ১৭টি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় এ বছর অনুমোদন পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। আর অনুমোদন চেয়ে আবেদন জমা পড়েছে শতাধিক। প্রস্তাবিত ১৭টি অনুমোদন পেলে এখনকার ৯৫টিসহ দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়াবে ১১২টি। প্রস্তাবিত ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রাজধানীতে ৪টি, গাজীপুরে ২টিসহ চাঁদপুর, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পটুয়াখালী, ময়মনসিংহ, খুলনা, রাজশাহী, রংপুরসহ বিভিন্ন জেলায় প্রতিষ্ঠার কথা আবেদনপত্রে উল্লেখ করেছেন উদ্যোক্তারা। সেগুলোর মধ্যে আছে-খুলনার সোনাডাঙ্গায় ‘খুলনা খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি’, রাজশাহীতে ‘আহসানিয়া মিশন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চিনাইরে ‘ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়া’, ঢাকার মিরপুরের সেনপাড়া পার্বতায় ‘সিঙ্গাপুর ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ’, চাঁদপুরের বাবুরহাটে ‘অ্যাপোলা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’, পটুয়াখালীর লাউকাঠিতে ‘সাউথ রিজন ইউনিভার্সিটি’, ময়মনসিংহের ক্রিস্টাপুরে ‘রওশন এরশাদ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ’, ঢাকার মহাখালীতে ‘ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটি’, গাজীপুরে ‘কামাল উদ্দিন আহমেদ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’, সিলেটে ‘আরটিএম আল কবির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি’, রংপুরে ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়’, গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ‘ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্স বাংলাদেশ’, রাজধানীর বনানীতে ‘ইউনিভার্সিটি অব মডার্ন টেকনোলজি’ এবং রংপুরের মিঠাপুকুরে ‘নর্থ বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি, রংপুর’। ১৯৯২ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত দুই দশকে অনুমোদন পায় ৫২টি বিশ্ববিদ্যালয়। আর ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে অনুমোদন পায় ৪৩টি।
এদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাধিক্য প্রসঙ্গে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেনে জানান, দেশে উচ্চশিক্ষার প্রসার কাম্য। কিন্তু এতোগুলো নতুন বিশ্ববিদ্যালয়কে সুষ্ঠুভাবে শিক্ষা দেয়ার জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে কি না সেটাও বিবেচনা করা দরকার।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দেশের জন্য একটি বিরাট সম্ভাবনাময় খাত। তাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। কিন্ত ওসব প্রতিষ্ঠানে ব্যয় বেশি হওয়ায় অনেকেই পড়ার সুযোগ পাচ্ছে না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ করতে হবে।
< Prev | Next > |
---|