স্টাফ রিপোর্টার: সরকার জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে পুলিশের নতুন একটি বিশেষায়িত ইউনিট গঠন করতে যাচ্ছে। ওই ইউনিট সারাদেশে সমন্বিতভাবে জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে দায়িত্ব পালন করবে। নতুন বিশেষ ইউনিট গঠনের প্রস্তাব ইতিমধ্যে পুলিশ সদর দপ্তর হয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেয়েছে। প্রস্তাবটি এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। সেখান থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অনুমোদন পেলেই পুলিশ বিভাগের কাক্সিক্ষত এ ইউনিট কার্যক্রম শুরু করতে পারবে। পুলিশ অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট নামে ৫৯২ সদস্যের এই ইউনিটের নেতৃত্বে থাকবেন পুলিশের একজন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি)। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জঙ্গি দমনে ২০১৬ সালের ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অধীন কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) নামে বিশেষ ইউনিট কার্যক্রম শুরু করে। দেশের বিভিন্ন এলাকায়ও জঙ্গিবিরোধী বেশ কয়েকটি অভিযানে সফলতা পেয়েছে ওই ইউনিট। কিন্তু সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন এলাকায় জঙ্গি তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশ সদর দপ্তরের অধীন নতুন ইউনিট গঠনের প্রক্রিয়া জোরদার করা হয়। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশা আগামী এক মাসের মধ্যেই পুলিশ এন্টি টেররিজম ইউনিট কার্যক্রম শুরু করতে পারবে। নতুন ওই বিশেষ ইউনিটের সদর দপ্তর হবে ঢাকায়। তবে প্রয়োজন অনুসারে বিভাগীয় পর্যায়েও কার্যালয় থাকতে পারে।
সূত্র জানায়, দেশব্যাপী জঙ্গি সন্ত্রাস দমনে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ২০১১ সালের আগস্টে পুলিশ ব্যুরো অব কাউন্টার টেররিজম ইউনিট নামে আলাদা একটি ইউনিট গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়। ওই প্রস্তাবটিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলেও অর্থ মন্ত্রণালয়ে তা আটকে থাকে। তবে গতবছর নতুন করে জঙ্গি দমনে পুলিশের আলাদা ইউনিট গঠনের প্রস্তাব পাঠানো হয়। কারণ সাম্প্রতিক সময়ের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ, পর্যালোচনা এবং কর্মপন্থা নির্ধারণে পুলিশ সদর দপ্তরে বিশেষ বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে পুলিশের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তারা জঙ্গি দমনে ওই ইউনিট গঠনের বিষয়ে একমত হন। মূলত জঙ্গিবিরোধী একের পর এক অভিযানে সফলতা এলেও নব্য জেএমবি এখনো নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় হুমকি। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাদের আস্তানার খোঁজ ও অভিযান তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। ভবিষ্যতে জঙ্গিরা বড় ধরনের নাশকতা ঘটানোর চেষ্টা করতে পারে। সেজন্যই জঙ্গি দমনে দেশব্যাপী সমন্বিত ইউনিট গঠন বিশেষভাবে প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, পুলিশ এন্টি টেররিজম ইউনিটের জন্য ৫৯২ জন জনবলের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। নতুন ওই ইউনিটের প্রধান হবেন একজন অতিরিক্ত আইজিপি। তাছাড়া ওই ইউনিটে একজন ডিআইজি, একজন অতিরিক্ত ডিআইজি ও ৮ জন পুলিশ সুপার থাকবেন। নতুন ইউনিটে খাগড়াছড়িতে বিশেষায়িত ট্রেনিং সেন্টারে কমান্ডো প্রশিক্ষণ নেয়া পুলিশের ২০ সদস্যকে যুক্ত করা হবে। তাছাড়া ওই ট্রেনিং সেন্টারে নিয়মিতই নতুন সদস্যদের কমান্ডো প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া পুলিশের ৫২ সদস্য বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণে রয়েছে। দেশে ফেরার পর তাদেরও পুলিশ এন্টি টেররিজম ইউনিটে যুক্ত করা হবে। তার আগে ভারত থেকে কমান্ডো প্রশিক্ষণ নেওয়া ৪০ সদস্যও নতুন ইউনিটে যুক্ত হবে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, খাগড়াছড়িতে প্রশিক্ষণ নেয়া ২০ জন কমান্ডোকে আপাতত খুলনা ও রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশে যুক্ত করা হয়েছে। বিশেষায়িত নতুন ইউনিটের কার্যক্রম শুরু হলে প্রয়োজনে তাদের সেখানে যুক্ত করা হবে। তাছাড়া ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ইতিমধ্যে জঙ্গি দমনে ব্যাপক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। নতুন ইউনিটটি যাত্রা শুরু করলে ডিএমপির সিটিটিসির অভিজ্ঞতা ও তাদের জ্ঞান কাজে লাগানো হবে।
এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, এতোদিন ডিএমপির অধীন সিটিটিসি দায়িত্ব পালন করলেও এখন পুলিশ সদর দপ্তরের অধীনে নতুন ইউনিট গঠন করা হচ্ছে। যারা দেশব্যাপী দায়িত্ব পালন করতে পারবে। গুরুত্ব বিবেচনায় ডিএমপির ইউনিটও কার্যকর থাকবে।
< Prev | Next > |
---|