স্টাফ রিপোর্টার: লোকসানে থাকা রেলওয়ে তাদের অব্যবহৃত জমির বাণিজ্যিক ব্যবহারের মাধ্যমে আয় বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। এ উদ্দেশ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও পাবনাসহ বিভিন্ন জেলায় রেলের মালিকানাধীন অব্যবহৃত জায়গায় মেডিকেল কলেজ, আধুনিক নার্সিং ইনস্টিটিউট, পাঁচ তারকা হোটেল ও শপিংমল নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত এ সংস্থাটি।
সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) এসব স্থাপনা নির্মাণ হবে। যার সম্ভাব্য ব্যয় দুই হাজার ৬০৭ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (সংশোধিত) এ-সংক্রান্ত প্রকল্পের তালিকা সংযুক্ত করা হয়েছে। এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে তা সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। রেল সচিব ফিরোজ সালাহ উদ্দিন বলেন, বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা এ প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।
তাদের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। দরপত্র আহ্বানের জন্য মন্ত্রণালয় কার্যক্রম শুরু করেছে। পিপিপি কর্তৃপক্ষ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। সম্প্রতি সংসদ ভবনে রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভায় আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে রেলওয়ের মালিকানাধীন অব্যবহৃত জমিকে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের সুপারিশ করা হয়। এতে হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, পাঁচ তারকা হোটেলসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়।
পিপিপি প্রণয়নসহ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদও দেওয়া হয়। রেল বিভাগের তথ্য মতে, দেশের বৃহত্তম রেলওয়ে স্টেশন ঢাকার কমলাপুরে রেলওয়ে হাসপাতাল সংলগ্ন অব্যবহৃত জমির ওপর ৫০ আসনের একটি মেডিকেল কলেজ ও ৫০ আসনের একটি নার্সিং ইনস্টিটিউট নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, রাজধানীর এ রেলওয়ে হাসপাতালকে আধুনিকায়ন করে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হবে। যার সম্ভাব্য ব্যয় ৮০ কোটি টাকা। এখানে অব্যবহৃত জমিতে একটি পাঁচ তারকা হোটেল এবং শপিংমলও নির্মাণ করা হবে। এজন্য বেসরকারি অর্থায়ন হবে ৭৫০ কোটি টাকা। চট্টগ্রামেও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করছে রেল। এখানেও রেলওয়ে হাসপাতালটিকে আধুনিকায়ন করে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হবে।এজন্য অর্থায়ন করা হবে ৮০ কোটি টাকা। হাসপাতালের পাশের অব্যবহৃত জমিতে প্রতিষ্ঠা হবে ৫০ আসনের একটি মেডিকেল কলেজ ও ৫০ আসনের একটি নার্সিং ইনস্টিটিউট। এ ছাড়াও চট্টগ্রাম রেলওয়ের পে অ্যান্ড ক্যাশ অফিসের পূর্ব পাশে অব্যবহৃত জমিতে নির্মাণ হবে আধুনিক শপিংমল কাম গেস্ট হাউস। এজন্য বেসরকারি অর্থায়ন ধরা হয়েছে ৯২ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
চট্টগ্রামে রেলওয়ের অব্যবহৃত জমিতে একটি আন্তর্জাতিক মানের পাঁচ তারকা হোটেলও নির্মাণ করা হবে। এতে বেসরকারি অর্থায়ন ধরা হয়েছে ৮৫০ কোটি টাকা। চট্টগ্রামের ধীরাশ্রম রেলওয়ে স্টেশনের কাছে একটি নতুন আইসিটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ কোটি টাকা। জিটুজি অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। খুলনায় ৮০ কোটি টাকার বেসরকারি অর্থায়নে নির্মাণ হবে নতুন একটি মেডিকেল কলেজ ও ২৫০ শয্যার আধুনিক হাসপাতাল। রেলস্টেশনের পাশের অব্যবহৃত জমিতে আধুনিক শপিংমল কাম গেস্ট হাউসও করা হবে। এতে সম্ভাব্য বেসরকারি অর্থায়ন হবে ২৪০ কোটি টাকা।
উত্তরাঞ্চলে নীলফামারীর সৈয়দপুর ও পাবনার পাকশী রেলওয়ে হাসপাতাল দুটিকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হবে। এ দুটি স্থানের অব্যবহৃত জমিতেও দুটি ৫০ আসনের মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা হবে। এসব কাজে উভয় স্থানে সম্ভাব্য বেসরকারি অর্থায়ন হবে ৬০ কোটি টাকা করে। এ ছাড়া কুমিল্লা রেলস্টেশনের কাছে রেস্ট হাউসের পাশে অব্যবহৃত জমিতে শপিংমল কাম গেস্ট হাউস করা হবে। এতে বেসরকারি অর্থায়ন হবে ২৯৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এছাড়া আন্তর্জাতিক মানের পাঁচতারকা হোটেল করার পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি জেলায় চারটি শপিংমল ও রেস্ট হাউজ করার পদক্ষেপ নিয়েছে তারা। এসব করা হবে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) এসব নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) প্রকল্পগুলো যুক্ত করার জন্য রেল মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা কমিশনের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে বিভিন্ন এলাকায় বাংলাদেশ রেলওয়ের অনেক অব্যবহৃত জায়গা রয়েছে। কিছুকিছু এলাকায় এসব জায়গা বেদখল হয়ে যাচ্ছে। এসব জায়গায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে ১১টি প্রকল্প হাতে নিয়েছে রেলওয়ে। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের আরএডিপিতে এই প্রকল্পগুলো অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
দাতাদের অর্থায়ন ও সরকারি অর্থে ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত পাঁচ হাজার ৬১৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৩টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ কর্মসূচির আওতায় ঢাকায় সাড়ে ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি পাঁচতারকা হোটেল ও শপিংমল নির্মাণ, এক হাজার ৬৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে জয়দেবপুর জেলায় ধীরাশ্রমে একটি আইসিডি নির্মাণ, সাড়ে ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামের জাকির হোসেন রোডে পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ করা হবে। ঢাকার কমলাপুরে রেলওয়ের হাসপাতাল সংলগ্ন অব্যবহৃত জমির ওপর ৫০ আসনের একটি মেডিকেল কলেজ এবং ৫০ আসনের একটি নার্সিং ইনস্টিটিউট নির্মাণ করা হবে। আর বিদ্যমান রেলওয়ের হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় নিয়ে আধুনিকায়ন করা হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮০০ কোটি টাকা।
< Prev | Next > |
---|