brebস্টাফ রিপোর্টার: বর্তমান সরকার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষায় নতুন করে ২৭ লাখ গ্রাহককে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারের লক্ষ্য দেশের সব ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া। তারই অংশ হিসেবে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (পবিবো) মাধ্যমে বিদ্যুতহীন গ্রামীণ ও প্রান্তিক এলাকায় ৭৭ হাজার কিলোমিটার নতুন বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন বসানো হবে। তাতে ব্যয় হবে ১৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি। ফলে নতুন করে বিদ্যুৎ সংযোগ পাবে ২৭ লাখ গ্রাহক। ওই লক্ষ্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় পৃথক দুটি প্রকল্প নিয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের লক্ষ্যে পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন সারাদেশকে পূর্ব ও পশ্চিম- এ দুই ভাগে ভাগ করে প্রকল্প নেয়া হয়েছে। পূর্বাঞ্চলের জন্য নেয়া শতভাগ পল্লী বিদ্যুতায়নের জন্য বিতরণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ (ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ)' প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। আর পশ্চিাঞ্চলের জন্য শতভাগ পল্লী বিদ্যুতায়নের জন্য বিতরণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ (রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগ) প্রকল্পের ব্যয় হবে ৬ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। পুরো অর্থই দেশীয় উৎস বা সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। এর মাধ্যমে বিদ্যুৎবিহীন এলাকাগুলোতে ২০২০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে।

সূত্র জানায়, দেশে বিদ্যুৎ বিতরণে কয়েকটি সংস্থা কাজ করলেও গ্রামীণ ও মফস্বলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও বিতরণ করছে পবিবো। শহর ছাড়িয়ে প্রত্যন্ত গ্রামেও বিদ্যুৎ সুবিধা দিতে সরকার ১৯৭৬ সালে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড গঠন করে। বোর্ড সমবায় ভিত্তিতে বিভিন্ন সমিতির মাধ্যমে নতুন নতুন এলকায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দিচ্ছে। আর সরকার ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুৎ দিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। সরকারের ওই লক্ষ্য পূরণে কাজ করছে পবিবোর ৭৯টি বিদ্যুৎ সমিতি। শতভাগ পল্লী বিদ্যুতায়নের জন্য সংস্থাটির বিতরণ এলকায় ৪ লাখ ৭২ হাজার কিলোমিটার বিতরণ লাইন স্থাপন করা প্রয়োজন। তার মধ্যে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত ৩ লাখ ১৫ হাজার কি.মি. বিতরণ লাইন নির্মাণ হয়েছে। একই সময়ে ১ কোটি ৬২ লাখ গ্রাহক সংযোগও দেয়া হয়েছে। তা ছাড়া চলমান ১৫টি প্রকল্পের আওতায় ৮০ হাজার কিমি. লাইন নির্মাণ ও কয়েক লাখ সংযোগের কাজ চলমান রয়েছে। অবশিষ্ট ৭৭ কিমি. লাইন নির্মাণ বাকি রয়েছে। এমন অবস্থায় শতভাগ পল্লী বিদ্যুতায়নে বাকি এলাকাগুলোয় বিরতণ লাইন বসানোর জন্য পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল ভিত্তিক দুটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। তার মধ্যে ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ পূর্বাঞ্চলের জন্য নেয়া প্রকল্পে ৩৯ হাজার ১০০ কিলোমিটার নতুন বিতরণ লাইন নির্মাণ, ৬১টি (৮৭০ এমভিএ) নতুন ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্র নির্মাণ, বিদ্যমান ৯৭টি ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্রের ৮৪৫ এমভিএ ক্ষমতা বর্ধন, ৩৯ সেট রিভার ক্রসিং টাওয়ার নির্মাণ, ২৬.৪০ একর ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্রয়, ১টি সুইচ স্টেশন নির্মাণ এবং ১৩ লাখ ৭০ হাজার নতুন গ্রাহক সংযোগ। আর রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশালসহ পশ্চিমাঞ্চলের জন্য নেয়া প্রকল্পের আওতায় ৩৮ হাজার ১০ কিলেমিটার নতুন বিতরণ লাইন নির্মাণ, ৪৮টি (৫০০ এমভিএ) নতুন ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্র নির্মাণ, বিদ্যমান ৫৬টি ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্রের ৩৭৫ এমভিএ ক্ষমতা বর্ধন, ৬২ সেট রিভার ক্রসিং টাওয়ার নির্মাণ, ১৯.২০ একর ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্রয়, ১টি সুইচ স্টেশন নির্মাণ এবং ১৩ লাখ ৩০ হাজার নতুন গ্রাহক সংযোগ।

সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে পল্লী বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার ক্ষমতাবর্ধন, পুনর্বাসন ও নিবিড়করণ; পল্লী বিদ্যুৎ সম্প্রসারণ ঢাকা বিভাগীয় কার্যক্রম-২, পল্লী বিদ্যুৎ সম্প্রসারণ খুলনা বিভাগীয় কার্যক্রম-২, পল্লী বিদ্যুতায়ন সম্প্রসারণ চট্টগ্রাম-সিলেট বিভাগীয় কার্যক্রম-২, সিলেট বিভাগ পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রম সম্প্রসারণ এবং পল্লী বিদ্যুতায়ন সম্প্রসারণের মাধ্যমে ১৫ লাখ নতুন গ্রাহক সংযোগসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্পের মাধ্যমেও নতুন লাইন ও উপকেন্দ্র নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। ওই তালিকার সাথে প্রস্তাবিত নতুন দুটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে শতভাগ এলাকায় বিদ্যুতায়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। তাছাড়া ওই দুটি প্রকল্পসহ চলমান অন্যান্য প্রকল্পের মাধ্যমে পুরনো, জরাজীর্ণ ও ওভারলোডেড বিতরণ লাইনের পুনর্বাসন, ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ ও বিদ্যুৎ সরবরাহের নিবিড়তা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ফলে বিতরণ ব্যবস্থায় সিস্টেম লস কমিয়ে আনার মাধ্যমে ৭৯টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যক্ষমতা ও আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া প্রান্তিক এলাকায় বিদ্যুতের সুবিধা নিয়ে কুটির, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পের বিকাশ ঘটবে, সেচের ম্যাধমে অধিক খাদ্য উৎপাদনের মাধ্যমে ওই খাতে ম্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, শিক্ষার হার বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নের মাধ্যমে শহর ও গ্রামাঞ্চলের জীবনযাত্রার মানের বৈষম্য হ্রাস পাবে।

এ প্রসঙ্গে পবিবোর পরিচালনা বোর্ডের সদস্য (বিতরণ ও সঞ্চালন) মো. মিজানুর রহমান খান জানান, অন্যান্য বিতরণ কোম্পানির মতো পল্লী বিদ্যুতের বিতরণ এলাকা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই ওসব এলকার সিংহভাগ এলাকা বিদ্যুৎ নেটওয়ার্কে চলে এসেছে। অবশিষ্ট এলাকা ওই নেটওয়ার্কে যুক্ত করতে ইস্ট জোনের ৪ বিভাগ ও ওয়েস্ট জোনের ৪ বিভাগের জন্য দুটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। বর্তমানে চলমান অন্যান্য প্রকল্পের পাশাপাশি ওই দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বিদ্যমান এলাকার শতভাগ এলাকা এবং শতভাগ গ্রাহক পল্লী বিদ্যুতের সুবিধা পাবে।

সাম্প্রতিক