স্টাফ রিপোর্টার: রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কপোরেশন (বিআরটিসি) বিকল বাসের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। সংস্থাটির বহরে থাকা ১ হাজার ৫৩৮টি বাসের মধ্যে ৫৪৫টিই বিকল। আর নতুন কেনা বাসেরও ৩০ ভাগ বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। সচল বাসের সংখ্যা কম থাকায় রাজধানীতে পরিবহন সঙ্কটে যাত্রীদের জন্য বিকল্প হতে পারছে না বিআরটিসি। সম্প্রতি সিটিং সার্ভিস বিরোধী অভিযান চলাকালে অনেক পরিবহন মালিক রাস্তায় বাস নামায়নি। ওই সংকটেও বিআরটিসি বাসযাত্রীদের ভরসা হতে পারেনি। রাজধানীতে গণপরিবহন হিসেবে সংস্থাটির ৫৮০টি বাস চলাচল করে। তবে তার বড় অংশই বিকল। বিআরটিসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ৭ বছরে বিআরটিসির বহরে যুক্ত হয়েছে ৯৫৮টি বাস। সরকার ওসব বাস বিআরটিসিকে কিনে দিয়েছে। কিন্তু তারপরও প্রতিষ্ঠানটি ঘুরে দাড়াতে পারছে না। সরকারিভাবে কেনা ৯৫৮টি বাসের ৩৩টি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অনুদান হিসেবে দেয়া হয়েছে। বাকি ৯২৫টি বিআরটিসির বহরে যুক্ত হয়। ওসব বাসের আয়ুষ্কাল কমপক্ষে ১৫ বছর হওয়ার কথা থাকলেও বাস কেনার সাড়ে ৩ থেকে ৭ বছরের মধ্যেই ৯২৫ বাসের ২৭৩টি বিকল হয়ে পড়েছে। এখন ওসব বাস মেরামতেই প্রয়োজন অর্ধশত কোটি টাকা। আর টাকা না থাকায় মেরামত হচ্ছে না। ফলে সংস্থাটির ডিপোতে পড়েই নষ্ট হচ্ছে শত কোটি টাকার নতুন ২৭৩টি বাস। তাছাড়া ২০১৩ ও ২০১৫ সালে বিএনপির ডাকা অবরোধের আগুনে পুড়ে যায় আরো ৯টি নতুন বাস। সেগুলো মেরামতেরও অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
সূত্র জানায়, বিআরটিসির জন্য বিগত ২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে চীন থেকে ২৭৫টি সিএনজিচালিত বাস কেনা হয়। তার মধ্যে ৩০টি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে অনুদান হিসেবে দেয়া হয়। বাকি ২৪৫টি যুক্ত হয় বিআরটিসির বহরে। ওসব বাসের আয়ুষ্কাল ধরা হয়েছিল ১৫ বছর। ওই হিসাবে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ওসব বাস চলার কথা। কিন্তু সচল রয়েছে মাত্র ১২১টি বাস। বাকিগুলো এর মধ্যেই বিকল হয়ে পড়েছে। তার মধ্যে ১১৫টিরই ভারি মেরামত প্রয়োজন। আর ৬টি বাস মেরামতেরও অযোগ্য। তাছাড়া বিআরটিসির জন্য ২০১৩ সালে ভারতীয় ঋণে ওই দেশ থেকে ৩০৪ কোটি টাকায় ২৯০টি দ্বিতল, ৮৮টি এসি এবং ৫০টি আর্টিকুলেটেড বাস কেনা হয়। প্রতিটি আর্টিকুলেটেড বাসের দাম পড়ে ১ কোটি ১১ লাখ টাকা। ওই বাসের আয়ুষ্কাল ধরা হয়েছিল ১৫ বছর। বিআরটিসির হিসাবেই সাড়ে ৩ বছরেই ৭টি বাস বিকল হয়ে পড়েছে। আরো ৭টির মেরামত প্রয়োজন। কিন্তু টাকার সংস্থান করতে না পারায় আর্টিকুলেটেড বাস মেরামত করতে পারছে না বিআরটিসি।
একইভাবে সংস্থাটির দ্বিতল বাসের ২২টি বিকল পড়ে আছে। আর একই সময়ে কেনা অশোক লেল্যান্ডের একতলা ৮৮টি এসি বাসের ৪টি ভারি মেরামত প্রয়োজন। সেগুলোও ডিপোতে বিকল পড়ে রয়েছে। তাছাড়া কোরিয়া সরকারের ঋণে ওই দেশ থেকে ২০১১ সালে ২৫৫টি বাস কেনে বিআরটিসি। তার মধ্যে ১০০টি এসি ও ১৫৫টি নন-এসি বাস। তাতে ব্যয় হয় ২৪৩ কোটি টাকা। দুটি নন-এসি বাস অনুদান হিসেবে দেয়া হয়েছে। বাকি ২৫৩টি যুক্ত হয় বিআরটিসির বহরে। নন-এসি ১০৩টি বাসের মধ্যে ৪৪টিই বিকল হয়ে পড়েছে। সেগুলোর ভারি মেরামত প্রয়োজন। বর্তমানে সংস্থাটির ১৫০টি এসি বাসের ১১৭টি সচল রয়েছে। ৩২টি বিকল। বাকি একটি মেরামতেরও অযোগ্য। তবে বিআরটিসির বহরে থাকা পুরনো বাসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ভলভো। ২০০২ সালে সুইডেন থেকে ৫০টি ভলভো বাস কেনা হয়। ওই সময়েই অত্যাধুনিক ওসব বাসের প্রতিটির দাম পড়েছিল ১ কোটি ৩ লাখ টাকা। ৫০টি বাসের ৪৯টিই ৭ বছর ধরে ডিপোতে বিকল পড়ে রয়েছে। গতবছর মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় টাকা না পাওয়ায় আর মেরামত করা হয়নি।
সূত্র আরো জানায়, বিআরটিসির বতমানে সচল বাসের সংখ্যা ৮৭৯টি। গত সেপ্টেম্বরেও ওই সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪৯। কিন্তু দৈনিক গড়ে অর্ধেক বাসও রাস্তায় নামে না। গত দুই বছরে একদিন সর্বোচ্চ ৮২১টি বাস রাস্তায় নেমেছিল। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের একাধিকবার বিআরটিসির ডিপো পরিদর্শন করে বাস বসিয়ে রাখার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করলেও কোনো ফল হয়নি। বরং ডিপোগুলো ইচ্ছা করেই বাস বন্ধ রাখছে। গতবছরের আগস্টে সংস্থার নিজস্ব অনুসন্ধানে এই তথ্য বেরিয়ে আসে।
এ প্রসঙ্গে বিআরটিসির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের দাবি, গাড়ি বিকল অস্বাভাবিক নয়। রাস্তায় চললে নানা কারণে গাড়ি বিকল হতে পারে। চীন থেকে যেসব গাড়ি কেনা হয়েছিল সেগুলো ভালো মানের ছিল না। আর প্রতিটি গাড়ি বিকল হওয়ার কারণও ভিন্ন।
< Prev | Next > |
---|