স্টাফ রিপোর্টার: দেশে শত শত বেসরকারি পলিটেকনিকগুলো কারিগরি শিক্ষার বিদ্যমান নীতিমালার তোয়াক্কা করছে না। ফলে ৪৬১টি বেসরকারি পলিটেকনিকের মধ্যে মাত্র ৩০টির মান ভালো। বাকিগুলোর মান নিয়ে খোদ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডই সন্দিহান। বছরের পর বছর ধরে এ অবস্থা চলছে। অভিযোগ রয়েছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারী মানহীন পলিটেকনিকগুলোর কাছ থেকে অনৈতিকভাবে আর্থিক সুবিধা নিয়ে থাকে। ফলে ওসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। আর পুরনো প্রতিষ্ঠানগুলোর মান তদারকিতে ব্যর্থ হলেও নতুন করে প্রতিষ্ঠান অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। গত এক বছরে অনুমোদন পেয়েছে ৩০টি নতুন বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। কারিগরি শিক্ষা বোর্ড সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে গঠিত কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। বিভিন্ন কোর্সের পাশাপাশি শিক্ষাবোর্ড চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং অনুমোদন দিয়ে থাকে। দেশে কর্মরত বেসরকারি পলিটেকনিকগুলোর মান তদারকির জন্য কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরিদর্শকের নেতৃত্বে একাধিক কর্মকর্তা রয়েছে। তাদেরই নিয়মিত ওসব প্রতিষ্ঠানের মান দেখার কথা। কিন্তু নানা অজুহাতে ওই কর্মকর্তারা নিয়মিত বেসরকারি পলিটেকনিকগুলো পরিদর্শনে যায় না। আবার পরিদর্শনে গেলেও উপরি পেয়ে তারা চলে আসছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরিদর্শকরা এমন অভিযোগ মানতে নারাজ। তাদের দাবি, যখন পরিদর্শনে যাওয়া হয় তখন দেখা যায় যন্ত্রপাতি, ল্যাব সাজানো। কিন্তু পরিদর্শন শেষে সেগুলো আবার নিয়ে যাওয়া হয়। আর হাতেনাতে প্রমাণ না পাওয়ার কারণে ওসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না।
সূত্র জানায়, বেসরকারি পলিটেকনিকের প্রতিষ্ঠান অনুমোদনের জন্য একটি নীতিমালা রয়েছে। ওই নীতিমালা অনুযায়ী, শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষক কর্মচারী বাছাই কমিটি কারিগরি শিক্ষাবোর্ড গঠন করবে। কিন্তু নিয়োগের ক্ষেত্রে কারিগরি বোর্ড এমন কোনো কমিটি গঠন করেনি। তাছাড়া বোর্ডের নীতিমালায় দেখা যায়, একটি পলিটেকনিকের জন্য ১৫০ থেকে ২শ বর্গফুট বিশিষ্ট ৯টি সাধারণ কক্ষ, প্রতিটি টেকনোলজির জন্য ৪টি শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষকদের বসার জন্য দুটি পৃথক কক্ষ, পদার্থ ও রসায়নের জন্য ২শ বর্গফুটের জন্য ২টি পৃথক কক্ষ থাকতে হবে। আর সিভিল/আর্কিটেকচার কোর্সের জন্য ৪০০ থেকে ৬শ বর্গফুটের ১০টি ল্যাবরেটরি/ওয়ার্কশপ, মেকানিক্যাল টেকনোলজির জন্য ৪শ থেকে ৬শ বর্গফুটের ৮টি, ইলেকট্রিক্যাল টেকনোলজির জন্য ৬টি, ইলেকট্রনিক্স টেকনোলজির জন্য ৫টি, কম্পিউটার টেকনোলজির জন্য ৬টি, পাওয়ার টেকনোলজির জন্য ৫টি পৃথক ল্যাবরেটরি/ওয়ার্কশপ থাকতে হবে। কিন্তু দেশে যেসব পলিটেকনিক রয়েছে তার একটিতেও নীতিমালা অনুযায়ী অবকাঠামো সুবিধা নেই।
সূত্র আরো জানায়, সম্প্রতি বেসরকারি পলিটেকনিকগুলোকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার ব্যর্থতায় স্বীকৃতি এবং পাঠদান কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে এক মাসের মধ্যে জবাব চেয়ে বোর্ডের পক্ষ থেকে ৮৭ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ৪ শতাধিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থা ভালো নয়। নীতিমালা মানছে না। তবে ভালো মানের কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা প্রচুর অর্থ ব্যয় করে ভবন তৈরি করেছে। অবশ্য কারিগরি শিক্ষায় উদ্যোক্তাদের আগ্রহ বৃদ্ধির জন্য নীতিমালার ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দেয়া হয়েছে। তবে এখন কোনো ছাড় দেয়া হয় না। মান বৃদ্ধির জন্য ভবিষ্যতে উদ্যোগ নেয়া হবে।
< Prev | Next > |
---|