স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডবিল্গউটিএ) দুর্ঘটনা কবলিত নৌযান উদ্ধারে পর্যাপ্ত সক্ষমতা নেই। কোনো যাত্রীবাহী লঞ্চ বা পণ্যবাহী নৌযান ডুবে গেলে রাষ্ট্রায়ত্ত ওই সংস্থার চারটি উদ্ধারকারী জাহাজ সম্মিলিতভাবেও তা টেনে তুলতে পারে না। ফলে বড় কোনো দুর্ঘটনার পরে মুখরক্ষায় বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী ইউনিট শুধুমাত্র লোক দেখানো উদ্ধার তৎপরতা চালায়। তাছাড়া সংস্থাটিতে ডুবুরিসহ জনবল সংকটও তীব্র। সম্প্রতি কীর্তনখোলা নদীতে মুখোমুখি সংঘর্ষে যাত্রীবাহী লঞ্চ গ্রিনলাইন-২ ও কয়লাবোঝাই একটি বাল্কহেড ডুবে গেলে দুই নৌযানের একটিও উদ্ধার করতে পারেনি উদ্ধারকারী জাহাজ নির্ভীক। বিআইডব্লিউটিএ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধার ইউনিটে রয়েছে হামজা, রুস্তম, নির্ভীক ও প্রত্যয় নামে চারটি জাহাজ। তার মধ্যে হামজা কেনা হয় ১৯৬৪ সালে আর রুস্তম ১৯৮২ সালে। হামজা ও রুস্তমের উত্তোলন সক্ষমতা ৬০ টন করে। আর ২০১২ সালে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে কোরিয়া থেকে আনা হয় উদ্ধারকারী জাহাজ নির্ভীক ও প্রত্যয়। ওই জাহাজ দুটির প্রত্যেকটির উত্তোলন সক্ষমতা ২৫০ টন। ফলে চারটি জাহাজের সম্মিলিত উত্তোলন সক্ষমতা মাত্র ৬২০ টন। তবে বর্তমানে হামজা ও রুস্তমের সক্ষমতা ৪০-৫০ টনের বেশি নেই। আর কারিগরি জটিলতার কারণে নির্ভীক ও প্রত্যয় একসাথে উদ্ধার কার্যক্রম চালাতে পারে না। ফলে বড় কোনো নৌ-দুর্ঘটনার পর সফল হয় না উদ্ধার অভিযান। ২০১৪ সালের আগস্টে পদ্মায় ডুবে যাওয়া পিনাক-৬ লঞ্চ উদ্ধারে নির্ভীক ও প্রত্যয় একযোগে চেষ্টা করেও উদ্ধার তো দূরের কথা, লঞ্চটি শনাক্তই করতে পারেনি।
সূত্র জানায়, সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর ৫০০ থেকে দুই হাজার টনের বেশি পণ্য ও যাত্রীবাহী নৌযান চলাচলে অনুমোদন দিচ্ছে। ফলে ওই ধরনের নৌযান উদ্ধারে আরো বেশি সক্ষমতার উদ্ধারকারী জাহাজ বিআইডব্লিউটিএর থাকা প্রয়োজন। তাছাড়া বরিশাল থেকে দক্ষিণাঞ্চলে চলাচলকারী যাত্রীবাহী লঞ্চগুলোর ওজন এক হাজার থেকে ১৫০০ টন। আর ৫০০ থেকে দুই হাজার টনের বেশি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ দেশের বিভিন্ন নৌপথে পণ্য পরিবহন করছে। কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটলে ওসব জাহাজ উদ্ধারে কর্তৃপক্ষের সামর্থ্য নেই। বর্তমানে উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা ও রুস্তম প্রায় জীবনীশক্তিহীন। তাছাড়া ওই দুটি জাহাজে রয়েছে নানা সংকটও। উভয় জাহাজের জেনারেটর প্রায়ই বিকল থাকে। ডিসি ইঞ্জিন ও উইঞ্চ যথাযথভাবে কাজ করে না। আবার নির্ভীক ও প্রত্যয় জাহাজেও রয়েছে নানা সমস্যা। প্রত্যয়ের ক্রেন বার্জের লোডমিটার প্রায়ই বিকল হয়ে পড়ে। সার্ভিস উইঞ্চগুলো পর্যাপ্ত লোড নিতে পারে না। নির্ভীকে এখনো বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়া হয়নি। সার্ভিস উইঞ্চগুলোও নাজুক। চলতি দুর্যোগ মৌসুমে নৌ-দুর্ঘটনা ঘটলে দ্রুত উদ্ধার তৎপরতার জন্য রুস্তমকে পদ্মার মাওয়া ঘাটে, প্রত্যয় নারায়ণগঞ্জে, হামজা আরিচা ঘাটে এবং নির্ভীক বরিশালে রাখা হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী চার জাহাজের প্রত্যেকটিতে কমপক্ষে ১০ জন করে ডুবুরি থাকার কথা থাকলেও হামজায় আছে ৩ জন, রুস্তমে ২ জন, নির্ভীকে ৩ জন এবং প্রত্যয়ে ২ জন। হামজায় স্যালভেস সুপারভাইজার, কমপ্রেসার অ্যাটেনডেন্ট, ক্রেন ড্রাইভার নেই। রুস্তমেও স্যালভেস সুপারভাইজার ও ক্রেন ড্রাইভার নেই। তাছাড়া চার জাহাজেই ওয়্যারলেস অপারেটর, লস্কর, তোপাসসহ বিভিন্ন পদে জনবল সংকট রয়েছে।
এদিকে গত ২২ এপ্রিল বিকেলে বরিশাল নগরীর অদূরে চরবাড়িয়া সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীতে মুখোমুখি সংঘর্ষে ডুবে যায় ঢাকাগামী যাত্রীবাহী লঞ্চ গ্রিনলাইন-২ ও কয়লা বোঝাই একটি বাল্কহেড। সক্ষমতা না থাকায় ওই দুটি নৌযানের একটিও উদ্ধার করতে পারেনি নির্ভীক। তবে ওই দুর্ঘটনা এবং নির্ভীকের ব্যর্থতায় বিআইডব্লিউটিএর টনক নড়ছে। কর্তৃপক্ষ এখন বড় মাপের উদ্ধারকারী নৌযান ক্রয়ে উদ্যোগী হয়েছে। সেজন্য সম্প্রতি বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানসহ ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত উচ্চ সক্ষমতার ফ্লটিং ক্রেন পরিদর্শনে যান। ওই ধরনের বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন উদ্ধারকারী জাহাজ কেনার ব্যাপারে প্রতিনিধি দল সিদ্ধান্ত নেবে।
অন্যদিকে দুর্ঘটনা কবলিত নৌযান উদ্ধার কাজে বিআইডবিল্গউটিএর অক্ষমতা এবং জনবল সংকটের কথা স্বীকার করে সংস্থার যুগ্ম-পরিচালক (উদ্ধার) মো. ফজলুর রহমান জানান, বাস্তবতা বিবেচনায় এক হাজার থেকে দুই হাজার টন পর্যন্ত উত্তোলন সক্ষমতার উদ্ধারকারী জাহাজ ক্রয়ের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার তাগাদা দেয়া হচ্ছে। আর ডুবুরি সংকটের কারণে সংস্থাটিকে নৌবাহিনী কিংবা ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদের সহায়তা নিতে হয়। অন্যান্য কারিগরি পদে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
< Prev | Next > |
---|