gov-lgoস্টাফ রিপোর্টার: দেশের অনেক উদ্যোক্তাই বিদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। কয়েকটি দেশে তারা ব্যবসা সম্প্রসারণে বিনিয়োগ করতে চান। এমন পরিস্থিতিতে বিদেশে দেশী উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের অনুমতি দেয়ার বিষয়ে কাজ করছে সরকার। কী পরিমাণ ও কোন কোন খাতে বিনিয়োগের অনুমতি দেয়া যেতে পারে তা যাচাই বাছাই করছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। আর তারই অংশ হিসেবে বিদেশে দেশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের খসড়া নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, বিভিন্ন শ্রেণীর উদ্যোক্তা ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতামত নেয়া হচ্ছে। শিগগির আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে খসড়া নীতিমালার প্রাথমিক প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করা হবে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে দেশের বাইরে অর্থ নেয়া বৈধ নয়। মূলধনী খাতে আন্তর্জাতিক লেনদেনের জন্য বাংলাদেশি মুদ্রা অবাধ রূপান্তরযোগ্য না হওয়ায় কেউ চাইলেই দেশের বাইরে বিনিয়োগ করতে পারেন না। বিনিয়োগের আগ্রহ থাকলে বেশকিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক শর্তসাপেক্ষে ওই অনুমতি দেয়। অনুমতি নিয়ে বৈধ উপায়ে এখন পর্যন্ত মাত্র ৫টি প্রতিষ্ঠান বিদেশে বিনিয়োগ করেছে।
সূত্র জানায়, পোশাক খাতের অন্তত ১০টি প্রতিষ্ঠান বিদেশি বিনিয়োগের অনুমতি চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন জানিয়েছে। কারণ বিদেশি ক্রেতারা তৃতীয় কোনো দেশ থেকে উৎপাদন করে সরবরাহ নিশ্চিত করার বিষয়ে অনেক দিন ধরে চাপ দিচ্ছে। ক্রেতাদের শঙ্কা কোনো কারণে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ হলে তারা সময়মতো পণ্য বুঝে পাবে না। তাতে তাদের বছরের ব্যবসায়িক পরিকল্পনা ব্যাহত হয়। এমনকি মাঝে মাঝে ক্রেতারা তৃতীয় দেশে উৎপাদনের ব্যবস্থা না রাখলে রফতানি আদেশ দেয়া বন্ধেরও হুমকি দেন। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে রফতানি আদেশ দেয়ার সময় দর কষাকষিতেও এই ইস্যুটি আলোচনায় চলে আসে। ফলে প্রতিযোগিতার বাজার বাস্তবতায় সক্ষম উদ্যোক্তাদের বিদেশে বিনিয়োগের অনুমতি দেয়া হলে সেটা অর্থনীতির জন্য মঙ্গলই বয়ে আনবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

সূত্র আরো জানায়, রফতানিকারকরা অন্য দেশে লিয়াজোঁ বা সাবসিডিয়ারি অফিস খোলা ও ব্যয় নির্বাহের জন্য বছরে ৩০ হাজার ডলার পর্যন্ত নিতে পারেন। আইনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ থাকলেও তা নিরুৎসাহিত করা হয়। তবে বিগত ২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো মবিল যমুনাকে বাইরে বিনিয়োগের অনুমতি দেয়া হয়। তার আগে ২০০৯ সাল থেকেই বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিদেশে বিনিয়েগের আবেদন করলে তা নাকচ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক সময় নিটল নিলয় গ্রুপ আফ্রিকার উগান্ডায় কৃষি জমি কেনার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করলে তা নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। শেষ পর্যন্ত নিটল নিলয় বিনিয়োগের অনুমতি পায়নি। সিঙ্গাপুরে শিপইয়ার্ড কারখানা স্থাপনের অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছিল সামিট গ্রুপ। বিদেশে আখনির্ভর চিনিকল স্থাপনের জন্য দেশবন্ধু গ্রুপ অর্থ নেয়ার অনুমতি চেয়েছিল। কম্বোডিয়ায় জমি কিনে শিল্প স্থাপনের অনুমোদন চেয়েছিল মেঘনা গ্রুপ। আর ভারতে কোম্পানি খোলার জন্য প্রাণ গ্রুপ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আবেদন করলে তা নাকচ করা হয়।

এদিকে দেশীয় উদ্যোক্তাদের বিদেশী বিনিয়োগ প্রসঙ্গে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম জানান, দেশী উদ্যোক্তাদের পক্ষে বিদেশে বিনিয়োগের বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। তার সুবিধা ও অসুবিধা দুটোই আছে। দেশ ও উদ্যোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করেই বিদেশে বিনিয়োগের অনুমতি দেয়ার কথা চিন্তা-ভাবনা চলছে। সেজন্য নীতিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে। বিডার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক, সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি করা হবে। ইতিমধ্যে বিডা নিজস্ব একটি কমিটি গঠন করেছে। কারণ দেশে এখন বিশ্বমানের উদ্যোক্তা শ্রেণী তৈরি হয়েছে। তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে অন্যান্য দেশও উপকৃত হতে পারে। বাংলাদেশের পতাকাও উড়বে সেসব দেশে।

 

সাম্প্রতিক