স্টাফ রিপোর্টার: দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সরকারি-আধাসরকারি বিভিন্ন দফতরের ঘুষখোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ফাঁদ পেতে ধরার কার্যক্রম জোরদার করেছে। সেজন্য ইতোমধ্যে একজন পরিচালকের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের টিম গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে ঘুষখোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকাও। দুদকের ফাঁদ টিমের সদস্যরা যেখানে ঘুষ লেনদেনের খবর সেখানেই ছদ্মবেশে হানা দিচ্ছে। এভাবে ৫ মাসে ৬টি বড় ধরনের অভিযান সফলভাবে সম্পন্ন করেছে দুদক। তাছাড়া ঘুষপ্রবণ সরকারি-আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন দফতরে দুদক গোপনে নজরদারিও চালাচ্ছে। দুদক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ঘুষ গ্রহণকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ-দুর্নীতির আগাম তথ্য প্রদানকারীদের দুদক সার্বিক সহায়তা দিচ্ছে। কারণ এদেশ থেকে ঘুষ লেনদেনের এ কুৎসিত সংস্কৃতি নির্মূলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ দুদক। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তাকে ফাঁদ পেতে ঘুষের টাকাসহ নাতেনাতে আটক করেছে দুদক কর্মকর্তারা। পাশাপাশি ঘুষপ্রবণ অফিসগুলোতে দুদকের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নানাভাবে ঘুষখোর কর্মকর্তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) উপসচিব (অ্যাস্টেট ও আইন শাখা) মো. মিজানুর রহমানকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষসহ গ্রেফতার করা হয়। মঈনউদ্দিন চৌধুরী নামে একজন ব্যবসায়ি দুদকের কাছে অভিযোগ করেন, ঢাকা-মাওয়া (যাত্রাবাড়ী-বুড়িগঙ্গা সেতু-১) সড়কের পাশে তার সিফাত সিএনজি ফিলিং স্টেশন স্থাপনের জন্য আইনি মতামত চাইলে মিজানুর রহমান মোটা অংকের অর্থ দাবি করে। পরে ৫০ হাজার টাকায় রফাদফা হয়। তবে ওই ব্যবসায়ি বিষয়টি লিখিতভাবে দুদককে জানালে ঘুষের টাকাসহ মিজানুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। ওই ঘটনায় রাজধানীর খিলগাঁও থানায় দুদক মামলা দায়ের করেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমানকে ঘুষের ২ লাখ টাকাসহ ৩০ মে রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকা থেকে গ্রেফতার করে দুদক টিম। পরে তার দেহ তল্লাশি করে আরো ৯৮ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। টাকা নেয়ার সময় দুদক টিম তাকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে। একইভাবে ১ ফেব্রুয়ারি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তেজগাঁও রেশনিং জোনের রেশনিং কর্মকর্তা বিউটি বেগমকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষসহ হাতেনাতে গ্রেফতার করে দুদক টিম। সরকার প্রদত্ত ওএমএস (ট্রাক-সেল) পদ্ধতির ৩টি ডিলারশিপের অনুকূলে ৫টি ডিও ইস্যুর জন্য সিএসডির দায়িত্বপ্রাপ্ত এরিয়া রেশনিং কর্মকর্তা বিউটি বেগম প্রতিটি ডিওর জন্য ১০ হাজার টাকা করে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। তাছাড়া চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উপ-কর কর্মকর্তা আলী আকবরকে ঘুষের ২০ হাজার টাকা, মাদারীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) মজুমদার মাহফুজুর রহমানকে ২৫ হাজার টাকাসহ গ্রেফতার করা হয়।
এদিকে ফাঁদ পেতে ঘুষখোরদের হাতেনাতে ধরা প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ জানান, যেসব দফতরে ঘুষ লেনদেন বেশি হয় বলে অভিযোগ আছে, সেসব দফতরের কার্যক্রম বিশেষ নজরদারির আওতায় আনতে ইতোমধ্যেই কমিশন থেকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাছাড়া যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী সেবাগ্রহীতাদের কাছে ঘুষ দাবি করে তাদের ঘুষ গ্রহণকালে ফাঁদ পেতে আইনের আওতায় নিয়ে আসার বিষয়েও বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দুদক আশা করে সেবাগ্রহীতা মানুষ ঘুষ দেয়ার আগেই দুদককে বিষয়টি জানাবে এবং ঘুষ গ্রহণকারী এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেফতারে সহযোগিতা করবেন।
< Prev | Next > |
---|