স্টাফ রিপোর্টার: দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা বৃদ্ধির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগাম ব্যবস্থা নেওয়ায় ঘূর্ণিঝড় মোরায় ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে। বুধবার সংসদে নির্ধারিত প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দুর্যোগ মোকাবেলার ক্ষমতা রাখি এবারও রেখেছি। এমনভাবে সুন্দর ব্যবস্থা করে ফেলেছি যাতে এই ধরনের দুর্যোগের পূর্বাভাস পেলে কাজ শুরু হয়ে যায়। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের এখানে দুর্যোগ আসবে, ঘূর্ণিঝড় আসবে। আমাদের কাজ হচ্ছে সেগুলো মোকাবেলা করে মানুষের জীবন বাঁচানো। গভীর নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার পর মঙ্গলবার ভোরে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করে মোরা। এই ঝড়ের কারণে উপকূলীয় বিভিন্ন জেলায় বিপুল সংখ্যক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়, মৃত্যু হয় ছয়জনের। নিম্নচাপটি যখন ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়, প্রধানমন্ত্রী তখন দুই দিনের সফরে অস্ট্রিয়ায়। সেখান থেকেই তিনি নিয়মিত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দিক নির্দেশনা দেন বলে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বুধবার সকালে দেশে ফিরেই প্রধানমন্ত্রী অধিবেশনে যোগ দেন এবং প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন। আওয়ামী লীগের মাহাবুব-উল আলম হানিফের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা হাসিনা বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের খবর পেয়ে আমি অষ্ট্রিয়া বসেই আগাম ব্যবস্থা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। আমাদের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে।
তাছাড়া ঝড়টি ঘুরে যাওয়া এবং ওই সময় সমুদ্রে ভাটা থাকার কারণে আমরা সেটা আশঙ্কা করেছিলাম সেই পরিমাণ ক্ষতি হয়নি। তবে বেশকিছু ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। সরকারের পাশাপাশি দল হিসেবে আওয়ামী লীগও এই দুর্যোগ মোকাবিলায় তৎপর বলে জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, এ বিষয়ে প্রশাসনের পাশাপাশি আমরা রাজনৈতিক দল হিসেবে ব্যবস্থা নিচ্ছি। দল থেকে কয়েকটি টিম করে দিয়েছি। তারা ওইসব এলাকায় যাবে, সাহায্য দেওয়ার পাশাপাশি সমস্যা জানার চেষ্টা করবে। যাদের ঘরবাড়ি নষ্ট হয়েছে নিশ্চয়ই সেগুলো করে দেওয়া হবে। খাদ্যের অভাব তাদের হবে না। সেই ব্যবস্থা আমরা করছি। নৌ বাহিনীর দুটি জাহাজ ইতোমধ্যে কুতুবদিয়া ও সেন্টমার্টিনে ত্রাণ নিয়ে পৌঁছেছে এবং বিমান বাহিনীও প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান তিনি। হাওরে অকাল বন্যায় ফসল নষ্ট হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী এক প্রশ্নের জববে বলেন, হাওর অঞ্চলের খাদ্য নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আমি বিদেশ থেকে আরও খাদ্য ক্রয় করার নির্দেশ দিয়েছি। চাল কেনার জন্য ইতোমধ্যে খাদ্যমন্ত্রী ভিয়েতনামে গেছেন। এ ছাড়া অন্যান্য যেখানে পাওয়া যায় আমরা সেখান থেকে অতিরিক্ত চাল কিনব। একই সাথে ধান উৎপাদনের ব্যবস্থা নেব।
শষ্যের মজুদ ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে আসায় এবং হাওরে বোরো ফসল নষ্ট হওয়ায় মে মাসের শুরুতে সরকারিভাবে মোট ছয় লাখ টন চাল আমদানির পরিকল্পনা করা হয়। এর মধ্যে প্রথম এক লাখ টনের দরপত্রও দেওয়া হয়েছে। বন্যার কারণে হাওর অঞ্চলের জেলাগুলোতে ছয় লাখ টনের মতো ধান নষ্ট হয়েছে বলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব। তবে বেসরকারি সংস্থাগুলোর হিসাবে ফসলহানির পরিমাণ ২২ লাখ টন। তবে ঘূর্ণিঝড় মোরার কারণে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের খাদ্যের অভাব হবে না বলে সংসদে আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগের সাংসদ মো. আবদুল্লাহ ও স্বতন্ত্র সাংসদ রুস্তম আলী ফরাজীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে আরও গতিশীল হওয়ার নির্দেশনা দেন। নদীর ভাঙ্গন রোধ এবং হাওর ও উপকূলে বাঁধ নির্মাণ বিষয়ে এক সম্পূরক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নদী ভাঙ্গন রোধের দ্রুত কাজ শেষ করতে হবে। কাজ শেষের আগে বর্ষা চলে এলে নদী আবার ভাঙ্গনের কবলে পড়বে। নদী ভাঙ্গন রোধ ও বাঁধ নির্মাণে আরও উদ্যোগী হতে হবে। মন্ত্রণালয় যদি ঢিমে তালে চলে তাহলে কাজ হবে না। এর আগে সংসদ সদস্য হিসেবে ডিজিটাল পরিচয়পত্র ব্যবহার করে হাজিরা দেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অস্ট্রিয়া সফর শেষে বুধবার সকালে দেশে ফেরার পর বেলা ১১টায় সংসদ বসার ঠিক আগে অধিবেশনে হাজির হন সরকারপ্রধান।
সংসদ কক্ষে তাকে নীল ফিতায় সবুজ রঙের নতুন ওই পরিচয়পত্র ঝুলিয়ে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নিতে দেখা যায়। সংসদ সদস্যদের হাজিরা গণনার ব্যবস্থা ডিজিটাল করার অংশ হিসেবে নতুন এই পরিচয়পত্র দিচ্ছে সংসদ সচিবালয়। বুধবারই তা আইনপ্রণেতাদের সরবরাহ করা শুরু হয়েছে। নতুন এই পরিচয়পত্র পাওয়ার পর সংসদ সদস্যদের তা নির্দিষ্ট যন্ত্রে স্ক্যান করিয়ে সংসদ কক্ষে ঢুকতে হবে। সংসদের কোরাম ও হাজিরা গণনার সনাতন পদ্ধতির ডিজিটাইজেশনের জন্য এ নিয়ম করা হয়েছে। আগে সংসদ সদস্যরা নির্দিষ্ট খাতায় সই করে হাজিরা দিতেন। সংসদ সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, এই অধিবেশন থেকে হাজিরা গণনার ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও ডিজিটাল পদ্ধতিতে হাজিরা দিয়েছেন। সব সংসদ সদস্য নতুন পরিচয়পত্র পেলে এটা পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হবে। সংসদ ভবনের অধিবেশন কক্ষে শব্দযন্ত্রের ত্রুটির কারণে সংসদ সদস্যদের মাউথ পিস অন করতে হচ্ছে নিজেদের। বুধবার অধিবেশনের শুরুতে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সেন্ট্রাল সাউন্ড সিস্টেমের ত্রুটির কথা সংসদ সদস্যদের অবহিত করে বলেন, সেন্ট্রাল সাউন্ড সিস্টেম অন করা যাচ্ছে না। আমি নাম বলার পর নিজেরা নিজেদের মাইক্রেফোন অন করবেন। আমি এ ব্যাপারে সহযোগিতা করব। সংসদে স্পিকার কোনও সংসদ সদস্যকে ফ্লোর দিলে কেন্দ্রীয়ভাবে তার মাইকে চালু হয়ে যায়। স্পিকার তাকে বসতে বললে মাইক বন্ধ হয়ে যায়। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এখন সংসদ সদস্যদের নিজেদের মাইক সুইচ চেপে চালু করতে হচ্ছে। বুধবার সংসদে প্রধানমন্ত্রীর নির্ধারিত প্রশ্নোত্তরে প্রথমে প্রশ্ন করার জন্য স্পিকার লক্ষ্মীপুরের সংসদ সদস্য মো. আবদুল্লাহকে আহ্বান জানান। এ সময় স্পিকার তাকে সুইচ চেপে মাইক অন করার কথা স্মরণ করিয়ে দেন।
< Prev | Next > |
---|