ঢাকা : ১৫ শতাংশ হারে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন এবং প্রস্তাবিত বাজেটের সামগ্রিক কর কাঠামোর কারণে পণ্য মূল্যের ওপর কোন প্রভাব পড়বে না বলে আশা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।
তিনি বলেন, ‘নতুন ভ্যাট আইনে ভ্যাট অব্যাহতির সীমা ৩০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৩৬ লাখ এবং টার্নওভার করের সীমা ৮০ লাখ থেকে বৃদ্ধি করে দেড় কোটি করা হয়েছে। এতে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভ্যাটের আওতার বাইরে থাকবে। পাশাপাশি টার্নওভার করের সীমা বৃদ্ধি করার ফলে অধিকাংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারী প্রতিষ্ঠান এই সুযোগ পাবে। এর ফলে পণ্য মূল্য বৃদ্ধি পাবে না বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সাথে সংযোজন করে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বলেছেন, নতুন ভ্যাট আইনে বিদ্যমান ৫৩৬টি পন্যের পরিবর্তে ১০৪৩টি পণ্যে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এতে অনেক নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ভ্যাটের বাইরে থাকছে। আশা করি আগামী অর্থবছরে পণ্য মূল্য বাড়বে না বরং অনেক পণ্যের মূল্য কমে যাবে।
শুক্রবার বিকেলে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থসচিব হেতায়েতুল্লাহ আল মামুন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান, পরিকল্পনা সচিব মো. জিয়াউল ইসলাম, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। তারা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে অর্থমন্ত্রীকে সহায়তা করেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, এবারের বাজেট আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ বাজেট। বাজেট বাস্তবায়নের দক্ষতায় আমাদের যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। এর বড় প্রমাণ হলোÑ আমরা যখন যাত্রা শুরু করি, তখন ৯১ হাজার কোটি টাকার বাজেট বাস্তবায়ন করা হয়। এই প্রশাসন সেই বাজেট বাস্তবায়নকে ৩ লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকায় নিয়ে গেছে।
বেসরকারি বিনিয়োগ প্রবাহ সম্প্রসারণে বাজেটারী উদ্যোগ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে মুহিত বলেন, এবারের বাজেটে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কারণ-সরকারের উপলদ্ধি হলো দেশের মোট অর্থনীতির ৮০ শতাংশ বেসরকারি খাত নিয়ন্ত্রণ করে। তাই বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ ছাড়া সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য ২০১৪ সালের আগ পর্যন্ত দেশে বিনিয়োগবান্ধব স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশের অভাব ছিল। এরপর থেকে এই পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এর সুফল হিসেবে এ বছর দেশে বিনিয়োগ বেড়ে জিডিপির ৩০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
তিনি বলেন, এই ৩০ শতাংশ বিনিয়োগের মধ্যে ২৩ শতাংশ বেসরকারি খাতের। এই অবস্থা ভবিষ্যতেও চলতে থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
ব্যাংক-আমানতের ওপর আবগারী শুল্ক আরোপ সম্পর্কিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রবীণ অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারী শুল্ক আগে থেকেই ছিল। লাখ টাকার ওপরের ক্ষেত্রে এবার সেটা ৫০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৮০০ টাকা করা হয়েছে। তিনি বলেন,‘আমাদের দেশে যারা এক লাখ টাকার ওপরে ব্যাংকে আমানত রাখে, আমি মনে করি-এসব সম্পদশালী মানুষরা এই আবগারী শুল্ক দেওয়ার জন্য সার্মথ্যবান।’
মুহিত বলেন, আগামী ২/১ মাসের মধ্যে সঞ্চয়পত্রের সুদহার পর্যালোচনা করা হবে। এখন থেকে বছরে এটা একবার করে করা হবে। তবে সঞ্চয়পত্রের সুদহার যেন অন্যান্য ক্ষেত্রে বিদ্যমান সুদহারের সঙ্গে অসামঞ্চস্য না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা হবে বলে তিনি জানান।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে ১১ বার বাজেট উপস্থাপনকারী এই অর্থমন্ত্রী বলেন,গ্যাসের দাম কিন্তু আমরা এখন বাড়ায়নি। গ্যাসের দামের কোন পরিবর্তন করা হয়নি। গ্যাসের দাম ২০১৮ সালে বাড়ানো হবে-যখন আন্তর্জাকিভাবে গ্যাস আমদানি শুরু হবে।
সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এবারের বাজেটে অব্যশই আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দর্শন-আদর্শ প্রতিফলিত হয়েছে। তবে যেকোন বাজেটের উদ্দেশ্য থাকে জনকল্যাণ করা এবং সেই জনকল্যাণ যেন সবার জন্য নিশ্চিত হয়। আমি বাজেটে দেশের সব নাগরিকের জন্য জনকল্যাণ নিশ্চিত করার কথা বলেছি।’
চালের মূল্য বৃদ্ধি সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, হাওর অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির কারণে চালের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। দামের এই চাপ কমাতে চাল আমদানির জন্য ভিয়েতনামের সঙ্গে ইতোমধ্যে চুক্তি হয়েছে। জি-টু-জি পদ্ধতিতে আমরা চাল আমদানি করছি। খুব শিগগির চাল আমদানি শুরু হবে,এতে মূল্য চাপ কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, উচ্চাভিলাষ বা আকাঙ্খা না থাকলে কোন কিছু অর্জন করা যায় না। এজন্য আমাদের সরকার প্রতিবছর উচ্চাভিলাষী বাজেট দিয়ে আসছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
৭ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে গতকাল জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৮ শতাংশ এবং মোট রাজস্ব আয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৩ শতাংশ। এতে ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা।
< Prev | Next > |
---|