nbr-lgoস্টাফ রিপোর্টার: নতুন ভ্যাট আইনে প্রায় হাজারখানেক পণ্য ও সেবায় ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা দিচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। থাকছে বেশ কিছু পণ্যে রেয়াতি হারে ভ্যাট অব্যাহতির সুযোগও। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, নতুন আইনে প্রায় সাড়ে ১১শ’ পণ্যে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হলেও তা থেকে সরে এসেছে এনবিআর। সংশোধনীতে আমদানি পর্যায়ে সম্পূরক শুল্ক ১৯৯১ সালের আইনের মতোই রাখা হচ্ছে। এর বাইরে ভ্যাট আইনে উৎসে করসহ বেশ কিছু বিষয় চূড়ান্ত করে ভেটিংয়ের জন্য তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সূত্র মতে, ভ্যাট অব্যাহতিপ্রাপ্ত মৌলিক খাদ্যপণ্যের মধ্যে রয়েছে- চাল, ডাল, ডিম, ফল, তরল দুধ, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, রসুন, হলুদ, মরিচ, মাংস, মুড়ি, চিঁড়া, আলুসহ সব ধরনের সবজি। তবে প্যাকেটজাত ও আড়াই কেজির বেশি হলে তরল দুধ, পেঁয়াজ, রসুন, গম, আটাসহ কিছু ভোগ্যপণ্যে ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে। রুটি ও বিস্কুটসহ সব ধরনের ফাস্টফুড ও বেকারি পণ্যেও ভ্যাট প্রযোজ্য হবে।

আবার ভ্যাট দিতে হবে আদা, জিরা, লবঙ্গ, ধনিয়া, দারচিনি, এলাচসহ অন্যান্য মসলার আমদানি ও সরবরাহ পর্যায়ে। এছাড়া হাসপাতালের বিছানার ভাড়া, বিভিন্ন ধরনের প্রোভিটামিন ও ভিটামিন, ইনসুলিন, সব ধরনের জন্মনিরোধক সামগ্রী, ভ্যাকসিন ফর হিউম্যান মেডিসিন, হেপাটাইটিস সি নিরাময়কারী, হোমিওপ্যাথিক, আয়ুর্বেদিক, ইউনানি ও ভেষজ ওষুধ সামগ্রী, কিডনি ডায়ালাইসিস সলিউশন, ক্যান্সার, ম্যালেরিয়া ও কুষ্ঠরোগ নিরোধক ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক, কার্ডিওভাসকুলার ওষুধ, অ্যান্টি হেপাটিক, অ্যান্টি হেপাটিক এনসেফালোপ্যাথি, বায়োকেমিক ও সাইকিয়াট্রিক ওষুধ, অ্যানেসথেটিক, কিডনি রোগের ওষুধ, বিভিন্ন ধরনের থেরাপি, যন্ত্র ও উপকরণসহ বেশকিছু ওষুধও রাখা হয়েছে ভ্যাট অব্যাহতির তালিকায়। কৃষিজাত পণ্যও ভ্যাট অব্যাহতির আওতায় আসছে। এর মধ্যে থাকছে- পাটজাত পণ্য, ধান, শস্য, কৃষি খাতে ব্যবহৃত সব ধরনের বীজ, সেচ ও কীটনাশক, ফুল ও ফুলের তোড়াসহ আরো কিছু পণ্য। কৃষিকাজে ব্যবহৃত সব ধরনের যন্ত্রাংশ আমদানি, সরবরাহ ও স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদনও ভ্যাটমুক্ত থাকছে। ট্যাক্সি, বাস, মিনিবাস, লঞ্চ, স্টিমার ও ফেরি পরিবহন ব্যবস্থাসহ পরিবহন খাতেও থাকছে ভ্যাট অব্যাহতি।

এ ছাড়া প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক সরবরাহের ক্ষেত্রে, শিশু প্রতিপালন কার্যক্রম, বয়স্ক, অক্ষম, দরিদ্র বা যাদের স্থায়ী যতœ আবশ্যক, সে ধরনের অক্ষম লোকদের জন্য আবাসিক পরিচর্যা সেবাও ভ্যাট অব্যাহতির আওতায় থাকছে। এর বাইরে সাংবাদিক, অভিনেতা, গায়ক, বেতার ও টেলিভিশন পারফরমার, লেখক, পেশাদার ক্রীড়াবিদ, অনুবাদক, নিকাহ্সহ বিভিন্ন পেশার কমিশনকে ভ্যাটমুক্ত রাখা হয়েছে। তবে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে যেকোনো কনসালট্যান্সিকে ভ্যাটের আওতায় রাখা হয়েছে। এছাড়া ফার্স্ট ট্র্যাকভুক্ত বড় প্রকল্পগুলোর নির্মাণ সংস্থা, পণ্য মেরামতকারী সংস্থা, কনসালট্যান্সি ও সুপারভাইজারি ফার্ম, পরিবহন ঠিকাদার, ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম, মানবসম্পদ সরবরাহ বা ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান, বন্দরসহ বেশকিছু সেবায় ভ্যাট অব্যাহতি থাকছে। রেয়াতি হারে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে দেশি-বিদেশি মালিকানায় সরকারের বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ ও উন্নয়ন কার্যক্রমকে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, পণ্য ও সেবা খাতে ভ্যাট অব্যাহতি আগের চেয়ে অনেক বাড়ানো হয়েছে। নতুন ভ্যাট আইনটি মূলত ব্যবসায়ীবান্ধব। এটি বাস্তবায়িত হলে নিত্যপণ্যের কোনো দাম বাড়ার সম্ভাবনাও থাকছে না। কেউ কেউ সবকিছুর দাম বাড়বে বললেও এর কোনো যৌক্তিকতা নতুন ভ্যাট আইনে নেই। সরকারের উন্নয়নকে আরও বেশি বেগবান করতে সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে এনবিআর। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।

সাম্প্রতিক