স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে অর্ধেক জনবল দিয়ে। অথচ ওই অঞ্চলে প্রতি বছরই নতুন নতুন ট্রেন সার্ভিস চালু হচ্ছে। কিন্তু নিয়োগ হচ্ছে না কোনো কর্মী। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী ৪৭ শতাংশ কম কর্মী নিয়েই কার্যক্রম চালাচ্ছে রেলের ওই বিভাগটি। ফলে যাত্রীসেবার মানোন্নয়নে পিছিয়ে পড়ছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ওই রেল অঞ্চল। রেলের ওই অঞ্চলে পরিবহন বিভাগের জন্য অনুমোদিত জনবলের সংখ্যা ২ হাজার ৫৩৭ জন। কিন্তু তার বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত রয়েছে মাত্র ১ হাজার ৩৬৪ জন। অর্থাৎ বিভাগটিতে লোকবলের ঘাটতি রয়েছে ১ হাজার ১৭৩ জন, যা মোট অনুমোদিত জনবলের ৪৬ দশমিক ২৪ শতাংশ। তার মধ্যে ২০২০ সালের মধ্যে বিভিন্ন মেয়াদে অবসর প্রস্তুতি ছুটিতে যাবেন আরো ৩৫৭ জন রেলকর্মী। তাতে বিভাগটিতে ঘাটতি লোকবল ৬০ দশমিক ৩১ শতাংশে উন্নীত হবে, যা রেলের সুষ্ঠু ও নিরাপদ সেবা প্রদানে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রেলসেবায় পরিবহন কর্মীদের ভূমিকাই প্রধান। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেক কর্মী দিয়ে ওই সেবার মান কোনোভাবেই বাড়ানো সম্ভব নয়। সরাসরি পরিবহনের সাথে যুক্ত কাজগুলো গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় রেলকর্মীদের পর্যাপ্ত বিশ্রামেরও প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু কর্মী সংকটের কারণে অধিকাংশ সময়ই বর্তমান কর্মী ওভারটাইম করতে হচ্ছে। তাতে রেলের নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ছে। পাশাপাশি সেবার মানেও পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। বিগত ২০১২ সালে রেলে নিয়োগ-সংক্রান্ত অর্থ কেলেঙ্কারির পর হাইকোর্টে রিট মামলার কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। রেলের অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি কোচ ও ইঞ্জিন সংকট কিছুটা কমলেও পরিবহন বিভাগে কর্মী সংকটে যাত্রীসেবার মান বাড়ানো যাচ্ছে না।
সূত্র জানায়, রেলের পূর্বাঞ্চলে বর্তমানে দ্বিতীয় শ্রেণীর ১৭টি মঞ্জুরিকৃত পদের মধ্যে কর্মরত আছে ১৩ জন। তাছাড়া তৃতীয় শ্রেণীর ১ হাজার ২৯৫ পদের বিপরীতে ৭৭৫ জন, চতুর্থ শ্রেণীর ১ হাজার ২২৫ পদের বিপরীতে ৫৭৬ জন কর্মরত আছেন। মূলত রেলের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মীরাই ট্রেন পরিবহনসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত। অথচ ওই দুই ধাপেই সবচেয়ে বেশি জনবল ঘাটতি রয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণী পর্যায়ে যথাক্রমে ৫২০টি ও ৬৪৯টি পদ শূন্য রয়েছে। আর চলতি বছরই রেলের পরিবহন বিভাগ থেকে অবসর প্রস্তুতি ছুটিতে (পিআরএল) যাবেন ৯০ জন রেলকর্মী। পরের বছর আরো ৮৭ জন, ২০১৯ সালে ৮৬ জন ও ২০২০ সালে পিআরএলে যাবেন ৯৪ জন কর্মী। সব মিলিয়ে আগামী সাড়ে ৩ বছরে পরিবহন বিভাগ থেকে ৩৫৭ জন অবসরে যাবেন। তাতে ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পরিবহন শাখায় শূন্য পদের সংখ্যা দাঁড়াবে ১ হাজার ৫৩০ জনে, যা ওই শাখার মঞ্জুরিকৃত মোট লোকবলের ৬০ দশমিক ৩১ শতাংশ। তাতে রেলের সেবা আরো বিঘিœত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, কয়েক মাস আগেও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ৫২টি স্টেশন বন্ধ ছিল শুধুমাত্র লোকবল সংকটের কারণে। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের ১৪টি স্টেশনই বন্ধ ছিল। তবে ২৫৭ জন সহকারী স্টেশন মাস্টার নিয়োগের পর পূর্বাঞ্চলের ২৫টি স্টেশন চালু হয়েছে। তবে এখনো বন্ধ রয়েছে ২৭টি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন। তাতে রেলের গতিবেগ কমে যাওয়া ছাড়াও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল। লোকবল সংকটের কারণে চট্টগ্রাম বিভাগে বি-ক্লাস স্টেশনের মধ্যে স্থায়ীভাবে বন্ধ রয়েছে ভাটিয়ারী, বাড়বকু-, বারৈয়াঢালা, মীরসরাই, মস্তাননগর, মুহুরীগঞ্জ, কালীদহ, শর্শদী, নাওটি, আলী শহর, ময়নামতি, রাজাপুর, মন্দবাগ, খিলা, দৌলতগঞ্জ, বজরা, শাহাতলী, ঝাউতলা, সরকারহাট। আর আংশিকভাবে বন্ধ রয়েছে হাসানপুর, চিতোষী রোড ও মেহের স্টেশন। অন্যদিকে ঢাকা বিভাগে বন্ধ স্টেশনগুলো হলো- বেগুনবাড়ী, বাউসি, কালিয়াপ্রসাদ, লস্করপুর, টিলাগাঁও, ভাটেরাবাজার, খাজাঞ্চিগাঁও, আফজালাবাদ, ইজ্জতপুর, নরসিংদী, সুতিয়াখালী, নীলগঞ্জ, মোশারফগঞ্জ, ঠাকুরাকোনা, ইটাখোলা ও বিষকা। আর ওই বিভাগে আংশিকভাবে বন্ধ স্টেশনের মধ্যে রয়েছে কেন্দুয়া, জামালপুর, ছাতকবাজার, শহীদনগর, বারৈপটল, হরষপুর ও বারহাট্টা। প্রতিটি বি-ক্লাস স্টেশনে সর্বনিম্ন ৩ জন স্টেশন মাস্টারের প্রয়োজন। তবে ডি-ক্লাস স্টেশন পরিচালনা শুধু বুকিং ক্লার্ক থাকলেই হয়। কিন্তু স্টেশন মাস্টারের পাশাপাশি পর্যাপ্ত বুকিং সহকারী না থাকায় ওসব স্টেশন বন্ধ রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক আবদুল হাই জানান, রেলের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা-ের সাথে সমন্বয় করে লোকবল নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। খুব শিগগিরই নতুন নিয়োগ পাওয়া ১১২ জন সহকারী স্টেশন মাস্টার বিভিন্ন সেকশনে দায়িত্ব নেবেন। তারপর আগামীতে আরো ১৫০ সহকারী স্টেশন মাস্টার নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। ফলে সময়ের সাথে সাথে রেলের পরিবহন খাতের জনবল ঘাটতি কমে আসবে।
< Prev | Next > |
---|