স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎতায়ন বোর্ডের (বিআরইবি) অধীনস্থ বিদ্যুৎ সমিতিগুলোর লোকসানের কারণে আর্থিক সংকটে পড়েছে সংস্থাটি। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে ৮৫ শতাংশ সমিতির লোকসানের কারণে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ঘাটতিতে পড়েছে সংস্থাটি। এমন অবস্থায় ভবিষ্যৎ কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে আয়কর রিটার্ন দাখিল ও কর প্রদান থেকে অব্যাহতি চেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বরাবর আবেদন করেছে সংস্থাটি। বিগত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিআরইবির অধীন ৭৭টি বিদ্যুৎ সমিতির মধ্যে ৬৩টি লোকসানে ছিল। ওই কারণে অর্থবছর শেষে প্রায় ৫২০ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয় বিআরইবিকে। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে ওই ধরনের লোকসানি বিদ্যুৎ সমিতির সংখ্যা আরো ৬টি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯টিতে। সরকারের কাছ থেকে সুদের ভিত্তিতে নেয়া ঋণের টাকায় ওসব বিদ্যুৎ সমিতি ও বিআরইবির কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় মুনাফাও পাওয়া যায় না। এজন্যই আয়কর রিটার্ন দাখিল ও কর দেয়া থেকে অব্যাহতি চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বিআরইবি এবং এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ভবিষ্যৎ কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থেই আয়কর রিটার্ন দাখিল ও কর প্রদান থেকে অব্যাহতির জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (্এনবিআর) আবেদন জানিয়েছে আরইবি। একই সাথে আয়কর আইন অনুযায়ী কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেয়ার জন্যও সংস্থাটির পক্ষ থেকে এনবিআরকে অনুরোধ করা হয়েছে। সম্প্রতি বিআরইবির পক্ষ থেকে ওই বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. নজিবুর রহমানের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে জানানো হয়, বিআরইবি অধীনস্থ ৮৩টি সমিতির মাধ্যমে বর্তমানে ১ কোটি ৮২ লাখ পরিবারকে বিদ্যুৎ বিতরণ করে আসছে। বিদ্যুৎ উন্নয়নে সরকারের কাছ থেকে ২ শতাংশ হারে সুদে ঋণ নিয়ে অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানগুলোকে তা ৩ শতাংশ হারে বিতরণ করে বিআরইবি। তবে সরকার নির্ধারিত বিদ্যুতের মূল্য কম হওয়ায় ওই সুদ পরিশোধ করে সমিতিগুলোর পক্ষে মুনাফা অর্জন সম্ভব হয় না। বিদ্যুৎ বিক্রিতে কমিশন ফিও যথাযথ না হওয়ার কারণে ধারাবাহিকভাবে লোকসান দিচ্ছে সংস্থার সমিতিগুলো। তারপরও গত ৩ বছরে ওসব সমিতি থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার ভ্যাট পরিশোধ করা হয়েছে। একই সময়ে আয়কর বাবদও পরিশোধ করা হয়েছে প্রায় ৩০০কোটি টাকা। টানা ২ বছরের লোকসানের কারণে বিআরইবি ও অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানগুলো এখন আর্থিক সংকটে রয়েছে।
সূত্র জানায়, অতীতে ভ্যাট ও আয়কর নিয়মিতভাবে পরিশোধ করা হলেও বর্তমান আর্থিক সংকটে বিআরইবির পক্ষে তা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে বিআরইবিকে আয়কর রিটার্ন ও আয়কর থেকে অব্যাহতি দেয়া প্রয়োজন। তবে বিআরইবির পক্ষ থেকে কর অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করা হলেও ওই ধরনের কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে এনবিআর। কারণ আয়কর আইন অনুযায়ী, সব প্রতিষ্ঠানকেই বছরশেষে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হয়। তাতে মুনাফায় থাকলে আয়ের ওপর নির্ধারিত হারে ও লোকসানে থাকলে সর্বনিম্ন কর পরিশোধ করতে হয়। বিআরইবির ক্ষেত্রেও একই আইন প্রযোজ্য হবে। কারণ সরকারি হলেও সব ব্যবসায়ি প্রতিষ্ঠানকে আয়কর দিতে হয়। বিআরইবিও ওই নিয়ম অনুযায়ী আয়কর ও ভ্যাট পরিশোধ করছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে অব্যাহতির আবেদন জানানোর বিষয়ে এনবিআরের নীতিনির্ধারকদের সভায় ওই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে কর ও ভ্যাটে অব্যাহতি পাওয়ার মতো কারণ সেক্ষেত্রে নেই।
সূত্র আরো জানায়, বিআরইবি সাধারণত বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছ থেকে সরাসরি বিদ্যুৎ কিনে থাকে। জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে বিআরইবি সমিতিগুলোকে সরকার সহজ শর্তে সব ধরনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি ও নগদ অর্থ ঋণ আকারে দিয়ে থাকে। তা সত্ত্বেও লোকসানের ঘেরাটোপ থেকে বের হতে পারছে না সংস্থাটির বেশির ভাগ সমিতি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিআরইবির ৭৮টি সমিতির মোট রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৮৬১ কোটি ৫ লাখ ৬৫ হাজার ৮০৫ টাকা। তার বিপরীতে ব্যয় হয় ১৩ হাজার ৩৮০ কোটি ৭৭ লাখ ২৪ হাজার ২৫৩ টাকা। অর্থবছর শেষে সমিতিগুলোর মোট লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫১৯ কোটি ৭১ লাখ ৫৮ হাজার ৪৪৮ টাকা। আর চলতি অর্থবছওে লোকসানি সমিতির সংখ্যা বাড়ায় ওই অংক আরো দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
< Prev | Next > |
---|