dhgv3স্টাফ রিপোর্টার: যশোরে দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে। সরকার শুল্কহার যৌক্তিক করলে, হয়রানি বন্ধ ও বন্দরের অবকাঠামোর উন্নয়নের পাশাপাশি দীর্ঘদিনের দাবিকৃত ক্লিয়ারিং হাউস চালু হলে পণ্য আমদানি-রফতানি আরো বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন আমদানিকারকরা। গত অর্থবছরের চেয়ে চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে এক লাখ তিন হাজার ৩০০ মেট্রিক টন পণ্য বেশি আমদানি হয়েছে। গত অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে আমদানি হয়েছিল সাত লাখ ৫৭ হাজার ৭৯৮ দশমিক ৩৭ টন পণ্য। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে আমদানি হয়েছে আট লাখ ৬১ হাজার ৯৪ দশমিক ৪ টন। চলতি অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক হাজার ৭১১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। এই সময়কালে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই হাজার ৮৩৬ কোটি চার লাখ টাকা। বিপরীতে আদায়ে হয়েছে চার হাজার ৫৪৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।

বেনাপোল কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে আমদানি হয়েছে ৫৩ হাজার ৫৯৭ দশমিক ৪২ মেট্রিক টন পণ্য, আগস্টে ৭৬ হাজার ৮৩২ দশমিক ৬১ টন, সেপ্টেম্বরে ৫৫ হাজার ৩৫৩ দশমিক ১২ টন, অক্টোবরে আমদানি হয়েছে ৬৮ হাজার ৮৭০ দশমিক ৬৬ টন, নভেম্বরে আমদানি হয়েছে ৯৫ হাজার ৭৮ দশমিক ৪৯ টন, ডিসেম্বরে আমদানি হয়েছে ৯৪ হাজার ৫২৫ দশমিক ১২ টন। এছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৯৭ হাজার ৯০৮ দশমিক ১৮ টন, ফেব্রুয়ারিতে ৬৮ হাজার ৪০৬ দশমিক ৪৬ টন, মার্চে ৮৬ হাজার ৭ দশমিক ১৪ টন, এপ্রিলে ৯৫ হাজার ৬৪৮ দশমিক ৫৮ টন এবং এপ্রিলে আমদানি হয়েছে ৮০ হাজার ৭২৮ দশমিক ৯৫ টন পণ্য। বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি আলহাজ নুরুজ্জামান বলেন, ‘আমদানিকারকরা কমপক্ষে দুই মাস আগে পণ্য আমদানির এলসি খুলে থাকেন। যেকারণে গত মাসে ঘোষণাকৃত পণ্য তারা আনতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু কাস্টম জোর করে আমদানিকৃত পণ্যের শুল্ক দ্বিগুণ করে দিচ্ছে। এতে করে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। তাদের অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে। এতে করে ব্যবসায়ীরা পরবর্তীতে এলসি দিতে পারছেন না। যার প্রভাব আগামীতে পড়বে। তিনি বলেন, ‘হয়রানি বন্ধ, বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি দীর্ঘদিনের দাবিকৃত ক্লিয়ারিং হাউস চালু হলে আমদানি-রফতানি আরো বাড়বে।

দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলের অধিকাংশ ক্রেন ও ফর্কলিফট অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে বছরের পর বছর। এতে বন্দরের মালামাল খালাস প্রক্রিয়া ধীর গতিতে চলে। আমদানিকারকরা বন্দর থেকে সময়মতো তাদের পণ্য খালাস করতে পারেন না। জায়গা সংকটের কারণে পণ্যবোঝাই ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকছে দিনের পর দিন। ট্রাক থেকে পণ্য নামানোর অনুমতি মিললেও ক্রেন মিলছে না। ফলে জায়গা ও ক্রেন সংকটে বিপাকে পড়েছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। বন্দর ব্যবহারকারীদের মেশিনারিসহ ভারি মালামাল লোড-আনলোডের সময় দিনের পর দিন অপেক্ষা করে থাকতে হয় সিরিয়াল দিয়ে। এমন অবস্থায়ও আমদানি বৃদ্ধি ও রাজস্ব আদায় বাড়ছে। বেনাপোল কাস্টম হাউজের কমিশনার মো. শওকাত হোসেন বলেন, ‘উচ্চ শুল্কযুক্ত পণ্যে আমদানি বেড়েছে। যেকারণে রাজস্ব আদায় বাড়ছে। তাছাড়া আমদানি বাড়ানোর জন্য আমরা ব্যবসায়ীদের সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার চেষ্টা করছি। যাতে তারা হয়রানি ছাড়া পণ্য আনতে পারেন। বেনাপোলকে আরো গতিশীল করতে ব্যবসায়ীদের সাথে আমরা একসাথে কাজ করছি। এব্যাপারে যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি ও আমদানিকারক মিজানুর রহমান খান বলেন, ‘অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি বেশি করে থাকেন। কেননা এসময় ব্যবসার জন্য ভালো। বিশেষ করে গাড়ি আমদানি বেশি হয়ে থাকে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ শুল্কহার বাড়ানোর কারণে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়লেও ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন। তার মতে, সরকার শুল্কহার যৌক্তিক করলে আমদানির হার আরো বাড়বে।

 

সাম্প্রতিক