anisul waterস্টাফ রিপোর্টার: বাঁধ ভেঙে হাওরের মানুষের দুর্গতির পেছনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতি আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে জানিয়ে পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, বর্তমান বিপদে এ থেকে শিক্ষা নেওয়া ছাড়া করার কিছু নেই।

হাওরে বাঁধ ভাঙার পেছনে যে পরিমাণ আর্থিক দুর্নীতির কথা পত্রিকায় লেখা হচ্ছে, তা সঠিক নয় বলেও দাবি করেছেন তিনি। গতকাল রোববার পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ওই এলাকায় বাঁধ ছিল ৬ দশমিক ৫ মিটার উচ্চতার। কিন্তু পানির উচ্চতা ছিল সাড়ে আট মিটারের মত। এইরকম পানির চাপ থাকলে অনেক সময় টেকসই বাঁধও টেকে না।
এ পরিস্থিতিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কী করার আছে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এ মূহুর্তে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় যেটা করতে পারে, টু লার্ন দা লেসন ফ্রম হোয়াট ইজ হ্যাপেনিং। এর বাইরে করার কিছু নাই। আমাদের এখানে কিছু কথা উঠেছে। ক্লাইমেট চেইঞ্জের ব্যাপারটা আসছে, আগাম বৃষ্টির প্রশ্ন আসছে। সুতরাং এগুলো থেকে আমাদের শিক্ষা নিয়ে পুরো বিষয়টা পর্যালোচনা করতে হবে। বাঁধের উচ্চতা কত রাখবৃ ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের দুর্বিপাক না হয় সেজন্য আমরা এক মিটার হাইট বাড়াব কি না, বাড়ালে পরিবেশগত অসুবিধা কী হতে পারে, সেটাও দেখতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, ওই এলাকায় বিআর-২৯ ধানের চাষ হয়, যা কেটে ঘরে তুলতে ১৬০ দিন সময় লেগে যায়। সেখানে অন্য প্রজাতির ধান উৎপাদন করা যায় কি-না তাও ভাবতে হবে।
বর্ষায় হাওর এলাকা প্লাবিত হওয়ার ঘটনা প্রতিবছরই ঘটে। কিন্তু এবার এপ্রিলের শুরুতে উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢল ও অতিবৃষ্টিতে বাঁধ ভেঙে সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা, মৌলভীবাজার, সিলেট ও হবিগঞ্জের বিস্তীর্ণ হাওর এলাকা প্লাবিত হয়।
অসময়ের এই পানিতে তলিয়ে যায় হাওর এলাকায় চাষ করা বোরো ধান। এরপর হাওরে মাছ ও হাঁস মরা শুরু হলে দেখা দেয় নতুন বিপদ।
হাওরাঞ্চলের দুর্বল ও অসমাপ্ত বাঁধ ভেঙে প্লাবন ও ফসলহানির পেছনে বাঁধ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের দুনীর্তিকে দায়ী করে ঢাকায় মানববন্ধন ও সভা সমাবেশ হয়েছে। সুনামগঞ্জের হাওরে ২৮টি বাঁধ নির্মাণ না করে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়ার পর ইতোমধ্যে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ও খতিয়ে দেখছে জানিয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, পত্র-পত্রিকায় যেভাবে ফলাও করে লেখা হচ্ছে ৮০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে, এটা ঠিক না। ওই প্রকল্পই ২০ কোটি টাকার। গত বছর সেখানে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় প্রায় ৫০ শতাংশ টাকা কর্তন করা হয়েছিল।
কী ধরনের দুর্নীতি গত বছর হয়েছিল জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, বাঁধের কাছ থেকে মাটি কাটার নিয়ম নেই। ওই ধরনের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গিয়েছিল। এ বছরও যদি কিছু হয়ে থাকে তাহলে আমরা তদন্ত করে দেখব।
গত ২০ বছরের পরিসংখ্যান তুলে ধরে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ২৯ শে মার্চ ওই এলাকা প্লাবিত হওয়ার নজির সেখানে নেই। কিন্তু এ বছর ২৯ শে মার্চ থেকে পহেলা এপ্রিল পর্যন্ত চারদিনে বাঁধের ওপর অতি উচ্চতায় পানি প্লাবিত হয়।
তিনি বলেন, সিলেট-সুনামগঞ্জ এলাকায় বাঁধের জন্য ইতোমধ্যে ৮১২টি জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। ৫২০টি জায়গায় কৃষকরা নিজেরাই নৌকায় যাতায়াতের জন্য কেটে দিয়ে থাকেন। এটাই সেখানকার রীতি। পরে তারা নিজেরাই আবার বাঁধ ঠিক করে নেন।

সাম্প্রতিক