এ.কে.এম শামছুল হক রেনু
কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি জনগণের বন্ধু, সাম্রাজ্যবাদ, সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদ, সম্প্রসারণ বাদ বিরুধী প্রবক্তা, প্রগতিশীল রাজনীতির ধারক বাহক, ভারতীয় আগ্রাসন ধনিক-বণিক শ্রেণীর শোষণ ও লুটেরাদের বিরুদ্ধে মাওলানা ভাসানীর একান্ত সহচর ভাটি এলাকার শার্দুল হিসেবে আখ্যায়িত প্রয়াত অধ্যাপক আইয়ুব রেজা চৌধুরীর অনুপ্রেরণা ও সান্নিধ্যে অনেকের মত আমিও ছাত্র অবস্থায় ভাসানী ন্যাপের ছাত্র সংগঠনের সুমহান আদর্শে বিশ্বাসী ও অনুপ্রানিত হয়ে শোষন মুক্ত ও প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতির অ, আ, ক, খ, গ এর হাতে খড়ি। পরবর্তী সময় ময়মনসিংহের মোশাররফ করিম মঞ্জু (বর্তমানে কবি ও সাহিত্যিক), ড. মাহবুব উল্লাহ, নূর মোহাম্মদ খান, নাজমুল হক নান্নু, জিয়াউল হক মিলু, আবু নাসের খান ভাসানীসহ অনেকের মাধ্যমে মাওলানা ভাসানীর ছাত্র, যুব সংগঠন ও ভাসানী ন্যাপের রাজনীতিতে আবির্ভূত হই এবং এক সময় ভাসানী ন্যাপ থেকে মনোনয়ন পেয়ে ১৯৭৯ সালে কিশোরগঞ্জে নির্বাচনী এলাকা- ২ (পাকুন্দিয়া-হোসেনপুর) থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহন করে থাকি। মাওলানা ভাসানীর জীবদ্দশাতে তারই পৃষ্ঠপোষকতায় সন্তোষ থেকে প্রকাশিক সাপ্তাহিক ‘হক কথার’ সাংবাদিক হিসেবে কাজ করে থাকি। বলা চলে সাপ্তাহিক হক কথাই আমার লেখালেখীর পাদপীট ও অনুপ্রেরণা।
১৯৭৪ সালের ২৬ এপ্রিল মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী তখন ভাসানী ন্যাপের চেয়ারম্যান ড. আলীম আল রাজী দলের ভাইস চেয়ারম্যান, কাজী জাফর আহমেদ দলের সেক্রেটারী জেনারেল, মশিউর রহমান (যাদু ভাই) দলের ভাইস চেয়ারম্যান। আয়ুব রেজা চৌধুরী, রাশেদ খান মেনন, এনায়েত উল্লাহ খান, আবুল বাশার, দেবেন শিকদার, ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন, আলাউদ্দিন, আনোয়ার জাহিদ, ব্যারিস্টার আবদুস সাত্তার, ব্যারিস্টার সলিমুল হক খান মিল্কী, গাজী শহীদুল্লাহ, ফজলে লোহানী, ড. মাহবুব উল্লাহ, আঃ করিম, ডাঃ ফজলুল করিম, নূর মোহাম্মদ খান, নাজমুল হক নান্নু, জিয়াউল হক মিলু, সুনীল গুপ্ত, শ্রমিক নেতা আঃ মোতালিব, মিছির আহম্মদ ভূঁইয়া, আবদুস সোবহান সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তখন ভাসানী ন্যাপ ও ইহার সহযোগী ছাত্র যুব কৃষক সমিতি ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত। সেই সময় দলের কেন্দ্রীয় অফিস ছিল ঢাকার শান্তিনগরে। দলের দপ্তর সম্পাদক ছিলেন আজাদ সুলতান।
শুধু রাজনৈতিক পরিসরেই নয় বিভিন্ন পরিসরে মাওলানা ভাসানী একটি বিশাল বটগাছ। যার ডালপালা পাক-ভারত, বাংলা উপমহাদেশসহ সারা দুনিয়ায় সুবিন্যস্থ ও সুবি¯তৃত। শুধু তাই নয়, তিনি ছিলেন এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকার সর্বহারা মানুষের নয়নমনি। এ নিবন্ধের সীমাবদ্ধ লেখার পরিসরে মাওলানা ভাসানীর রাজনীতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্ষদে সংশ্লিষ্ট মৃত ও জীবিত যাদের নাম আসেনি এবং যাদের নাম আগে ও পরে এসেছে তার জন্য আমি সবিনয়ে তাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
চলমান পাতা/২
পাতা: ২
১৯৭০ সালে আমি কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজ শাখা পূর্ব বাংলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি এবং তৎকালীন সময়ে বৃহৎ ময়মনসিংহ জেলার পূর্ব বাংলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিক মোশাররফ করিম মঞ্জু (মঞ্জু ভাই) তখন ছাত্র ইউনিয়ন দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। একদিকে পূর্ব বাংলা ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন রাশেদ খান মেনন এবং অপর দিকে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সভানেত্রী ছিলেন মতিয়া চৌধুরী। ছাত্র ইউনিয়নের দুই ভাগকে তখন চীনপন্থি এবং রাশিয়া পন্থি হিসেবে আখ্যায়িত করা হত। ৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পূর্ব বাংলা ছাত্র ইউনিয়ন বাংলা ছাত্র ইউনিয়ন হিসেবে আত্মপ্রকাশ লাভ করে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে ছিলেন বিশিষ্ট কলামিস্ট ড. মাহবুবউল্লাহ এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক, গবেষক ও বর্তমান বিএনপি চেয়ারপার্সনে উপদেষ্টা নাজমুল হক নান্নু (নান্নু ভাই)। তখন কিশোরগঞ্জ মহকুমা বাংলা ছাত্র ইউনিয়নের আমি সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। তৎপরবর্তী সময় জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে বাংলা ছাত্র ইউনিয়নের নাম হয় জাতীয় ছাত্রদল এবং সভাপতি হন নূর মোহাম্মদ খান (খান ভাই) এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন জিয়াউল হক মিলু (মিলু ভাই)। ১৯৭৪ সালের প্রথম দিকে আমি কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজ থেকে পড়াশুনা শেষ করে কিশোরগঞ্জ জেলা জাতীয় যুবদলের সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করি। তখন বাংলাদেশ জাতীয় যুবদলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছিল ১২৬, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায়।
১৯৭৬ সালের হোটেল ইডেনের সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই। সেই সময় কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ছিলেন যশোরের এডভোকেট মোঃ ইসহাক। যিনি পরবর্তী সময় যশোর পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সেই সময় ভাসানী ন্যাপের চেয়ারম্যান ছিলেন মশিউর রহমান (যাদু ভাই) এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এস.এ বারী এটি।
১৯৭৪ সালে মাওলানা ভাসানী সন্তোষে গৃহবন্দী থাকা অবস্থায় “আমি গৃহবন্দী আন্দোলন চালাইয়া যাও” এই মর্মে সারা দেশে সকল স্তরের নেতাকর্মীদের কাছে লিফলেটটি দলের নির্দেশনামা হিসেবে প্রচার করা হয়। মাওলানা ভাসানীর এই নির্দেশ পেয়ে ৭৪ সালের ২৮ এপ্রিল দলের কর্মী ও জনগণকে সুসংগঠিত করার অভিপ্রায়ে আমি, রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া, আজিজুল হক দুলাল, গোলাম কিবরিয়াসহ অপরাপররা পাকুন্দিয়ার পুরাতন হাসাপাতালের সামনে এক কর্মী সভায় যোগদান করি। সভা শেষ হওয়ার মুহুর্তে পাকুন্দিয়া থানা পুলিশ আমাদিগকে কোন কারণ ব্যতিরেখেই গ্রেফতার করে পাকুন্দিয়া থানায় নিয়ে যায়। থানায় আমাদিগকে রাতে খাবার দেয়া হয়। সেই রাতে তদানীন্তন সুখিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রাশিদ ভূঁইয়া, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রাশিদ শিকদার, নারান্দী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ডাঃ মোহাম্মদ আলী, পাকুন্দিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক, হোসেন্দী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু মিয়া, পাকুন্দিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বোরহান উদ্দিন বিএসসিসহ এলাকার বেশ কয়েকজন রাতে থানায় দেখা করে শান্তনা দেয়, ফলফলাদি, পাউরুটি ও কলা দিয়ে আসে। পরের দিন থানা থেকে কিশোরগঞ্জ কোর্টে বিশেষ ক্ষমতা আইনে (৭৪ ংঢ়বপরধষ ঢ়ড়বিৎ ধপঃ) চালান দিলে তদানীন্তন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চৌধুরী মাহবুব আহমেদ (সি.এম আহমেদ) কিশোরগঞ্জ সাব কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ করে থাকেন। সেই সময় এডভোকেট রইছ উদ্দিন আহমেদ, এমপি এম.এ কদ্দুছ এডভোকেট, এডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান চুন্নু মিয়া (সাবেক এমসিএ), এডভোকেট শামসুদ্দীন কোর্টে জামিন আবেদন করে থাকেন। থানা থেকে গ্রেফতার হয়ে কিশোরগঞ্জ কোর্টে আসার পথে এলাকার লোকজন ও আত্মীয়-স্বজন সুখিয়া বাজার এবং কোদালিয়া চৌরাস্তা বাজারে দেখা সাক্ষাৎ করে শান্তনা দিয়ে থাকে। যাক কোর্ট থেকে কারাগারে গিয়ে জানতে পাই আমাকে ডিটেনশান আদেশ দেওয়া হয়েছে। যে আদেশের কারণে আমার যেমনি বাহিরের দেখা সাক্ষাৎ বন্ধ, তেমনি বাহিরের খাওয়া দাওয়াও বন্ধ থাকে।
রাজনেতিক জীবনে যেমনি এটা আমার প্রথম গ্রেফতার তেমনি কারাগারে যাওয়াটাও প্রথম। পরবর্তী অধ্যায়ের দুঃসহ বেদনার কথা সংক্ষিপ্ত এ লেখার পরিসরকে না বাড়িয়ে অন্য একটি নিবন্ধে আলোকপাত করার ইচ্ছা রইল। প্রথম গ্রেফতার হয়ে থানায় একরাত এবং কারাগারে ২ মাস ২৫ দিন থাকার অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতাকে আজো ভুলতে পারিনা। কারাগারে গিয়ে বিভিন্ন অভূতপূর্ব নামের সাথে জীবনের প্রথম পরিচয় ঘটে, আমদানী ওয়ার্ড, গেইট ম্যাড, ওয়ার্ড ম্যাড, ফাইল ম্যাড, বিকেলাস, বাগানী, চৌকার ম্যাড, ছোট বাবু, বড় বাবু, ফালতু, মিঞাসাবসহ আরও কিছু বাহারী নামের টাইটেল। এ সমস্ত বাহারী নামের পেছনে রয়েছে অত্যাশ্বর্য ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও বিশেষন। যার শেষ নেই। যা এক বিরাট ফিরিস্তি। জানা যায়, তখন সাব কারাগারে সুপারের দায়িত্বে থাকতেন পদাধিকার বলে মহকুমা প্রশাসক বা এসডিও। কারাগার বাস্তবিকই দুনিয়া থেকে সম্পূর্ণ এক আলাদা ব্যবস্থাপনা। সেখানে স্বাভাবিক প্রশাসনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসলেও কারাগারের চার দেওয়ালের প্রশাসন রাষ্ট্রের সম্পূর্ন আলাদ অংশ বলেই মনে হয়। কারাগারের দায়িত্বে থাকা লোকদের বাহিরের অবয়ব ও ভিতরের দিকটা সম্পূর্ণ পৃথক ও আলাদা। অনেকের মাঝে মনুষত্বের চাপ পরিলক্ষিত হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এর বড় অভাব। অনেকের আচার আচরণ জাহান্নামের কারেদরজালের সাথে তুলনা করলেও অত্যুক্তি হওয়ার কথা নয়। কারাগারের কম বেশি সুখ শান্তি, আরাম আয়েশের টনিক হচ্ছে টাকা আর টাকা। যারা বন্দী হিসেবে কোনদিন কারাগারে যায়নি কোন
চলমান পাতা/৩
পাতা: ৩
মতেই তাদেরকে কারাগারে দুঃসহ বেদনার চিত্র তুলে ধরা ও বুঝানো সম্ভব নয়। প্রথম দিন কারাগারে নিয়ে রাখা হল আমদানী ওয়ার্ডে। পরের দিন গণনার ফাইল করে রাখা হল ৩ নং ওয়ার্ডে। যদিও তখন কিশোরগঞ্জ কারাগারে ১ নং, ২ নং, ৩ নং, ৪ নং ওয়ার্ড ও একটি সেল ছিল। সেই সময়ে সাব কারাগারে কোন ডিভিশন ওয়ার্ড ছিল না। তখন ৩ নং ওয়ার্ডে শিক্ষিত ও রাজনৈতিক বন্দীদেরকে যেমন রাখা হতো তেমনি সুপারিশের মাধ্যমেও কিছু বন্দীদেরকে রাখা হত।
সেখানে গিয়ে তদানীন্তন কটিয়াদী কলেজের অধ্যক্ষ মোজাফফর আহমেদ বাজিতপুর হুমায়ুনপুরের ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান খান, করগাঁওয়ের নূর মিয়া, যশোদল ইউনিয়নের চেয়ারমান আঃ আজিজসহ বেশ কয়েকজন বন্দীর সাথে পরিচয় ঘটে। যেহেতু ডিটেনশান আদেশের কারণে বাহির থেকে দেখা সাক্ষাতের সুযোগ ছিল না এবং বাহিরের কিছু খাওয়ার সুযোগ ছিল না সেইহেতু প্রায় সময়ই সন্তানতুল্য মনে করে আমার মত অনেক কেই অধ্যক্ষ মোজাফফর আহমেদ ও ফজলুর রহমান খান তাদের বাহির থেকে খাবার আসলে দিতে কার্পন্য করতেন না। যদিও জেলাখানায় সম্বল থাল, বাটি, কম্বল, সাবান, গামছা, লুঙ্গি বলে মুজিব পরদেশীর একটি গান রয়েছে। সেই গানটির তাৎপর্য জেল খানায় না গিয়ে শুধু রেকর্ড শুনে কারো বুঝার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। তবে সেই সময় মিঞা সাবদের (কারারক্ষি) মাধ্যমে মাঝে মাঝে বাহির থেকে এটা সেটা আনার কথা আজও ভুলা যায় না। তাদেরকে যথাসময়ে টাকা পরিশোধ না করতে পারলে এবং বাহিরে থাকা স্বজনদের মাধ্যমে তা বিলম্বে পরিশোধ করিলেও মিঞাসাবরা (কারারক্ষিরা) তা স্বাভাবিক বলেই মেনে নিতে দ্বিধা বা কুন্ঠাবোধ করেনি। সেই সময় পোকা সংযুক্ত আটার রুটি, ডালের ওপর পোকার কিলবিল, দুর্গন্ধযুক্ত লাল চিনি ও কাংকর সংযুক্ত ভাতের কথা মনে হলে এখনও গাঁ শিহরিয়ে উঠে। সেই সময়ে জেলার আঃ আউয়াল ও জমাদ্দার (বড় বাবু) আলী আহম্মদের বাসা থেকে ঈদের সময় ৩ নং ওয়ার্ডে দেয়া সেমাই ও বিরানির কথা আমার মত অনেক সহচরদের মনে থাকার কথা। একদিন হঠাৎ করে অন্য কয়েকজন বন্দীর সাথে আমাকে কিশোরগঞ্জ কারাগার থেকে ময়মনসিংহ কারাগারে পাঠানো হয়। সাথে ছিল ইটনার মুক্তিযোদ্ধা হাবিব ঠাকুর, যশোদল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আঃ আজিজ ও অপর দুইজন। ময়মনসিংহ কারাগারে বেশ কয়েকদিন থাকার পর পুনরায় আমাকে কিশোরগঞ্জ কারাগারে আনা হয়।
আমার বড় মামা আব্দুছ ছোবান আজাদ, আমার পিতা এলাকার রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে আমার গ্রেফতারের কথা জেনে তদানীন্তন পাকুন্দিয়া হোসেনপুরের এমপি এবং গণপ্রজাতন্ত্রীয় বাংলাদেশ সরকারের পাট প্রতিমন্ত্রী আছাদুজ্জামান খান জেনে দুঃখ প্রকাশ করেন। পরবর্তী সময় একদিন রাত ৮টার দিকে তদানীন্তন কিশোরগঞ্জের মহকুমা প্রশাসক আব্দুস সাত্তার খান, ম্যাজিস্ট্রেট সি.এম আহমেদ ও জেলার ৩ নং ওয়ার্ডের দরজায় আমাকে ডেকে এনে খোঁজখবর নেন, সান্তনা দেন এবং পাট প্রতিমন্ত্রীর পক্ষ থেকে কিছু খাবার দিয়ে আসেন। তারপর ৫/৬ দিন পর স্বাভাবিক আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করে থাকি।
বর্তমানে “রাখিবো নিরাপদ, দেখাবো আলোর পথ” কারাগারে এই সুন্দর শ্লোগানের পরও গণমাধ্যম এবং মিডিয়াতে প্রায়শই কারাগারে যে লোমহর্ষক ও বিভীষিকাময় চিত্র প্রকাশিত ও প্রচারিত হয় রক্ত মাংসের কোন মানুষের দ্বারা তা মেনে নেয়া সম্ভব না হওয়ারই কথা। এই নিবন্ধটি লেখার বেশ কয়েকদিন পূর্বে ডাকযোগে একটি পত্র পাই। তাতে কারাগার থেকে সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পাওয়া এক বন্দী কারাগারের অনিয়ম, দুর্নীতি ও মধ্যযুগীয় আচরণের যে বিভীষিকার চিত্র উল্লেখ করেছে যা খুবই মর্মান্তিক, হৃদয় বিদারক, দুঃখজনক ও মর্মস্পর্শী। যা পড়ে মনে হয়েছে, হায়রে কপাল মন্দ চোখ থাকিতে অন্ধ। একটি স্বাধীন দেশ ও সভ্য সমাজে যা ভাবতে গিয়েও কষ্ট হয়। যা প্রকাশ পেলে অনেকেরই বড় বড় কথা ও মুখ দেখানোর কথা নয়। পদ পদবী ও ইজ্জত সম্মানের কথা ভেবে পত্রটিকে নিয়ে সামনে আর এগুনো হয়নি। তবে সাধু সাবধান।
এখনো কারাগারের বিভীষিকার কথা শুনে এক সময় দশম শ্রেণীর পাঠ্য বইয়ে প্রাবন্ধিক ও স্বনামধন্য কথা সাহিত্যিক শওকত ওসমান তার এক সুত্রে গল্পে উল্লেখ করেছিলেন আসুক তোফান, আসুক ঝড়, ঝড় তোফানরে আর ডরাইনা। মনে পড়ে স্বাধীনতার প্রায় ৪৭ বছর অতিবাহিত হতে চলছে তারপরও “রাখিব নিরাপদ, দেখাবো আলোর পথ” এই সমীকরণ ধারণ করে এখনও কারাগারে যদি মধ্যযুগীয় কারবার দরবার চলে তবে দুঃখ, কষ্ট, যাতনা নিয়ে ব্রিটিশ রচিত ১৯৩০ সালের কারা কোডের বিভীষিকার উদাহরণ টেনে শওকত ওসমানের সুরে দুঃখ করে বলতে হবে “আসুক তোফান, আসুক ঝড়, তোফানরে আর ডরাইনা। কারাগারের অত্যাচার ও বিভীষিকা তিরোহিত হয়ে স্বাধীন দেশের কারাগার হিসেবে পরিগনিত হোক ইহার ভোক্তভোগী ও দেশের মানুষের প্রত্যাশা।
(এ.কে.এম শামছুল হক রেনু)
লেখক কলামিষ্ট
< Prev | Next > |
---|