উন্নয়নের জোয়ার চলছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে। সমৃদ্ধির নানা সোপান অতিক্রম করে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। নানা অর্জন বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে সম্মানজনক অবস্থানে অধিষ্ঠিত করেছে। কিন্তু খেলাপি ঋণের অভিশাপ বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। আমাদের ব্যাংকিং খাত শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারছে না খেলাপি ঋণের কারণে। রেজাউল করিম খোকন খেলাপিদের কাছেই জিম্মি হয়ে পড়েছে দেশের ব্যাংকিং খাত। শীর্ষ ১০০ ঋণখেলাপির কাছে বিভিন্ন ব্যাংকের পাওনা ১ লাখ ১১ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা আটকে রয়েছে। কিছুদিন আগে জাতীয় সংসদে এই তালিকা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তালিকার মধ্যে রয়েছেন দুই ব্যক্তি। বাকি সব প্রতিষ্ঠান। বিশ্লেষকদের অভিমত হলো, খেলাপি ঋণের এই টাকা আর আদায় হবে না। যে কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকে বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হবে। ব্যাংকের অন্যতম কাজ হলো দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসার চাকা সচল রাখতে ঋণ দেয়া এবং সময়মতো সে ঋণ আদায় করা। ব্যাংকের প্রধান সম্পদই হলো এ ঋণ। যে কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শক্তিশালী ব্যাংকিং ব্যবস্থা অপরিহার্য। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে অনিয়ম রেখে সুষম উন্নয়ন ও উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয়। কাজেই এ খাতে আমূল সংস্কার এখন সময়ের দাবি।
আগেই বলেছি, খেলাপি ঋণের বিশাল অঙ্কের এই টাকা আদৌ আদায় হবে কিনা তা নিয়ে দারুণ সংশয় রয়েছে, ঋণখেলাপিদের কেউ কেউ দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন ব্যাংক ও সরকারের চোখ ফাঁকি দিয়ে। জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে বিশাল অঙ্কের ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করায় ঋণখেলাপিদের কেউ কেউ গ্রেপ্তার হলেও তাদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের পথও অনেকাংশে রুদ্ধ। কারণ ঋণ নেয়া অর্থের সিংহভাগ তারা হয় বিদেশে পাচার করে দিয়েছেন নতুবা স্বজনদের কারও নামে হস্তান্তর করে দিয়েছেন। ব্যাংক থেকে একজন কৃষক কিংবা সাধারণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে ২০-৫০ হাজার টাকা ঋণ নিতে হলেও জামানত রাখতে হয়। অথচ শত শত কোটি টাকা ব্যাংক ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর কাছে যে সব সম্পত্তি রাখা হয়েছে তার দলিলপত্রের বেশির ভাগই ভুয়া। ব্যাংক ঋণপ্রাপ্তির পেছনে মোটা অঙ্কের উৎকোচ নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কাজ করেছে রাজনৈতিক প্রভাব। ঋণখেলাপিরা ঋণ লোপাটের ক্ষেত্র হিসেবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বেছে নিয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকাধীন ব্যাংকগুলোকে। ২০-২৫ হাজার টাকার ব্যাংক ঋণ শোধ না হওয়ায় কৃষকের কোমরে দড়ি বেঁধে গ্রেপ্তার করার ঘটনা ঘটলেও শত শত কোটি টাকার ঋণখেলাপিদের ব্যাপারে ব্যাংকগুলো খুবই উদার। জালিয়াতির অভিযোগে ঋণখেলাপিদের কেউ কেউ গ্রেপ্তার হলেও তাদের রাখা হয় জামাই আদরে।
শীর্ষ ১০০ ঋণখেলাপির তালিকাটি নিয়ে নানা প্রশ্নের অবকাশ থাকলেও এ ধরনের তালিকা প্রকাশ ব্যাংকগুলোকে খেলাপি ঋণ আদায়ে এবং ঋণগ্রহীতাদের খেলাপি না হতে উৎসাহিত করতে পারে। অস্বীকার করার উপায় নেই, শীর্ষ ঋণখেলাপিরা রাজনৈতিক ছত্রছায়া ও উচ্চ মহলের আশীর্বাদ পেয়ে এসেছেন সব সময়। খেলাপি ঋণ আদায়ে এবং ভবিষ্যতে খেলাপি হওয়ার লাগাম টেনে ধরতে হলে সব খেলাপির বিরুদ্ধেই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। রাজনৈতিক প্রভাবশালী ও উচ্চ মহলের আস্থাভাজনরা ছাড় পেলে তালিকা প্রকাশসহ যে কোনো উদ্যোগ যে ফলপ্রসূ হবে না, তা বলাই বাহুল্য। শীর্ষ ১০০ ঋণখেলাপির যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তার বেশির ভাগই সরকারি ব্যাংকের গ্রাহক। বছরের পর বছর চলতে থাকা অনিয়ম ও দুর্নীতি ঋণ বিতরণে রাজনৈতিক প্রভাব, সুশাসনের অভাব, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ কম থাকাসহ নানা কারণে এসব ব্যাংক ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। ঋণখেলাপিদের মধ্যে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা একাধিক সরকারি ব্যাংকে খেলাপি। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকেও খেলাপি। অর্থমন্ত্রী যে তালিকা দিয়েছেন তারা বর্তমানে কাগজে-কলমে খেলাপি। কিন্তু আরও অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা ঋণ পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠন এবং আদালতে রিট করে খেলাপির তালিকার বাইরে রয়েছেন। এ ছাড়া ব্যাংকগুলো অনেক প্রতিষ্ঠানের ঋণ অবলোপন করে হিসাবের খাতার বাইরে রেখেছে। এগুলোকে যদি হিসাবে ধরা হয় তাহলে খেলাপি ঋণের চিত্র আরও ভয়াবহ হবে।
সরকারি ব্যাংকগুলো হাজার হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ে অসমর্থ হওয়ায় ক্ষোভ-অসন্তোষ বাড়ছে ক্রমেই। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন মহল ব্যাংক ঋণ অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি খেলাপি ঋণ আদায়ে পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ভবিষ্যতে ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে উপযুক্ত ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান মূল্যায়ন করার পরামর্শ দিয়েছেন। ব্যাংক খাতে আদায় হবে না এমন মন্দ ঋণের হার বাড়ছেই। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রাজনৈতিক সুবিধায় ঋণ পুনর্গঠন ও বিশেষ সুবিধায় পুনঃতফসিল করার সুযোগ দেয়ার পরও খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমছে না। প্রতিনিয়ত খেলাপির পরিমাণ বাড়ছে। রাজনৈতিক প্রভাব এবং যাচাই-বাছাই ছাড়াই ঋণ বিতরণের কারণে এটি হচ্ছে। এর সঙ্গে ব্যাংক কর্মকর্তাদের অদক্ষতা ও দুর্নীতিও রয়েছে। ব্যাংকাররা যেমন দুর্নীতির মাধ্যমে ঋণ দিয়েছেন, তেমনি প্রকল্প প্রস্তাব নিয়ম মাফিক পরীক্ষা না করেও ঋণ দিয়েছেন। ফলে আদায় অযোগ্য ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে।
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ সংস্কৃতি দুরারোগ্য ক্যান্সারের মতো বাসা বেঁধেছে দীর্ঘদিন ধরে। কোনোভাবেই এ অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পারছে না আমাদের ব্যাংক ব্যবস্থা। অর্থনৈতিক উন্নয়নের নানা সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতির এবং সমৃদ্ধির উজ্জ্বল চিত্র আমাদের উল্লসিত করলেও আমাদের সব উচ্ছ্বাস থেমে যায় ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির অঙ্ক দেখলে। এ বিষয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে সবাই সচেতন এবং ওয়াকিবহাল। বিষয়টি সবাইকে বিব্রত করে, এ নিয়ে সরকারি বিভিন্ন মহলে এবং ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টদের মধ্যে দারুণ অস্বস্তি রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, সংসদীয় কমিটি নানা দিক-নির্দেশনা প্রদান করেছেন খেলাপি ঋণের অভিশাপ ঘোচাতে। রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা, পরামর্শ অনুযায়ী তাদের ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি, পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। নিয়মিত সভা আয়োজন করে মাঠপর্যায়ে গৃহীত কার্যপদক্ষেপের ফলাফল মনিটর করছেন। শাখাগুলো খেলাপি ঋণ আদায়ে সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর অর্জিত সাফল্য আশাব্যঞ্জক নয় বলে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
আমাদের দেশের বড় বড় ঋণগ্রহীতাদের ঋণ পরিশোধ না করা এক ধরনের কালচার রয়ে গেছে। আইনের বাস্তবায়ন না থাকায় তাদের মধ্যে এ প্রবণতা দেখা দেয়। আবার একশ্রেণির পরিচালক রয়েছেন, যারা নিজের ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সদস্যদের অনৈতিকভাবে ঋণ দেন এবং নিজে অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। এ ছাড়া রাজনৈতিক প্রভাবেও কিছু ঋণ দেয়া হয়। এসব কারণে অযোগ্য ঋণ বাড়ছে। এ কারণে আমানতকারী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ব্যাংক খাতে এ কারণে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। বাছবিচারহীন ঋণ বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও আইনের বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে। পাশাপাশি ঋণ বিতরণে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার রোধ করতে হবে।
খেলাপি ঋণ আদায় না হওয়াটা ব্যাংক খাতের জন্য অশনি সংকেত। যাচাই-বাছাই ছাড়াই ঋণ দেয়ার কারণে এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে। সুদের হার ও বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ঋণ আদায় অযোগ্য হয়ে পড়ার পেছনে বড় কারণ রাজনৈতিক বিবেচনায় এবং ব্যাংকের চেয়ারম্যান, পরিচালক ও এমডির যোগসাজশে ঋণ দেয়া। যোগসাজশে যাচাই-বাছাই ছাড়াই ঋণ দেয়ার পথ বন্ধ করতে হবে। তা না হলে মন্দ ঋণের পরিমাণ আরও বেড়ে যেতে পারে।
বিগত কয়েক বছর ধরে ঋণ পুনর্গঠন ও পুনঃতফসিলসহ নানামুখী সুবিধা পেয়েছেন বড় ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সুবিধা নেয়া ব্যবসায়ীরা ঋণের টাকা সময়মতো ফেরত দিচ্ছেন না। অথচ যেসব ছোট ব্যবসায়ী পুনর্গঠন ও ঋণ পুনঃতফসিল থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, তারাই ঋণের টাকা পরিশোধে এগিয়ে রয়েছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণায় এমন তথ্য জানা গেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, পুনঃতফসিল করা বড় অঙ্কের ঋণের মধ্যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে টাকা আদায় করতে পারেনি ব্যাংক। কিন্তু ছোট অঙ্কের ঋণের আদায় সন্তোষজনক। তবুও ব্যাংকগুলো ক্ষুদ্র ও ছোট গ্রাহকের চেয়ে বড় গ্রাহকের দিকে ঝুঁকছে।
ছোট উদ্যোক্তাদের বঞ্চিত করে বড় উদ্যোক্তাদের সুযোগ-সুবিধা দেয়ার কারণেই প্রতি মাসে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। ব্যাংকের টাকা ফেরত না দেয়ার সংস্কৃতি বড় ব্যবসায়ীদের মধ্যেই বেশি, যদিও বড় ব্যবসায়ীরাও অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন।' 'ক্ষুদ্র ও ছোট ব্যবসায়ীরা ব্যাংকের টাকা ফেরত দেয়ার জন্য উদগ্রীব থাকেন। ব্যাংকও ছোট ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে স্বস্তি পায়। কিন্তু প্রভাবশালীরা টাকা ফেরত না দেয়ার জন্য টালবাহানা করে। এ কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ে।'
খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি গোটা অর্থনীতির জন্য মোটেও সুখকর নয়। এর ফলে বরং চরম অস্বস্তির সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকিং খাত নাজুক অবস্থার মধ্যে পড়ে গেছে- একথা স্বীকার না করে উপায় নেই। সামগ্রিক অর্থনীতিতে এক ধরনের শংকাভাব সৃষ্টি হয়েছে এর ফলে। খেলাপি ঋণের প্রকোপে ব্যাংক ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে ক্রমেই।
উন্নয়নের জোয়ার চলছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে। সমৃদ্ধির নানা সোপান অতিক্রম করে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। নানা অর্জন বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে সম্মানজনক অবস্থানে অধিষ্ঠিত করেছে। কিন্তু খেলাপি ঋণের অভিশাপ বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। আমাদের ব্যাংকিং খাত শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারছে না খেলাপি ঋণের কারণে।
হাজার হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণের বোঝা আমাদের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাঁধে চেপে থাকায় অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকার পরও তাদের সেই সাফল্য মস্নান হয়ে যাচ্ছে। কিছু অসৎ কর্মকর্তার দায়িত্বহীনতা, অসৎ মনোবৃত্তি, দুর্নীতি এ ক্ষেত্রে দায়ী থাকলেও বেশির ভাগ ব্যাংকার আন্তরিকভাবে সততার প্রকাশ ঘটিয়ে কাজ করছেন। তারা রাতদিন নিরলসভাবে পরিশ্রম করছেন, খেলাপি ঋণের জঞ্জালমুক্ত করতে বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সত্যিকারভাবে নিঃস্বার্থ মন নিয়ে কাজ করছেন। ছুটির দিনগুলোয়ও তারা এজন্য অফিস করছেন নিরলসভাবে। তারা খেলাপি ঋণ আদায়ের নতুন নতুন কর্মকৌশল উদ্ভাবন করছেন, পরিকল্পনা গ্রহণ করে তার বাস্তবায়নে মেধা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতার যথার্থ ব্যবহার করছেন। তাদের দিক-নির্দেশনা ব্যাংকের সর্বস্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্দীপনার সঞ্চার করছে। আমাদের দৃঢ় প্রত্যাশা, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের ব্যাংক ব্যবস্থা খেলাপি ঋণের অভিশাপ থেকে মুক্ত হবেই। আমরা সেই সময়ের প্রতীক্ষায় রয়েছি।
জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী ঋণখেলাপিদের যে একটি তালিকা প্রকাশ করেছেন সেটাকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখতে চাই। এখন আমরা চাই তালিকা অনুযায়ী এবং তালিকার বাইরে থাকা সব ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আর এ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাটি অবশ্যই হতে হবে খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে। রাজনৈতিক বিবেচনায় বা অনিয়ম দুর্নীতি করে ঋণ অবলোপন করার প্রক্রিয়া আমরা আর দেখতে চাই না। ঋণ পুনর্গঠনের বিতর্কিত সুযোগ-সুবিধা দিয়ে রাখব বোয়ালদের পিঠ বাঁচানোর অপচেষ্টা থেকে সংশ্লিষ্টদের বিরত থাকতে হবে। ঋণ আদায়ে সরকার কেন কঠোর হচ্ছে না। সেটা মানুষ জানতে চায়। খেলাপি ঋণ আদায়ে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করার দাবি উঠেছে অনেকদিন ধরেই। ব্যাংকিং কমিশন গঠন, কেন্দ্রীয় ব্যাংককে শক্তিশালীকরণ ব্যাংকগুলোয় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা প্রভৃতি প্রশ্নে সরকারকে তার স্পষ্ট জোরালো অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। সামাজিকভাবে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলারও সময় এসেছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক সংগঠনকে দলমত নির্বিশেষে সাহসী, পক্ষপাতহীন, আন্তরিক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
রেজাউল করিম খোকন: ব্যাংকার
< Prev | Next > |
---|