মোমিন মেহেদী
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি আয়োজিত ৫৭ ধারা বাতিল ও নারী নির্যাতন বন্ধের দাবীতে প্রতিবাদ সমাবেশ এবং তুফান সরকারের কুশপুত্তলিকা দাহ কর্মসূচীতে পুলিশী বাঁধা শুধু আমাকে অবাকই করে দেয়নি; সচেতন করে দিয়েছে। চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে দেশের মানুষ সত্যিকার্থেই ভালো নেই। যে দেশের মানুষ ভালো থাকে, সে দেশে অন্তত এভাবে বাঁধাগ্রস্থ করতে পারে না গণতান্ত্রিক কোন চাওয়া পাওয়ার আন্দোলনকে।
আগস্ট মানে নতুন প্রজন্ম জানে শোকের মাস; পিতা হারাবার মাস। আর সেই আগস্টেরই ৪ তারিখ ছিলো আমার জীবনে নতুন করে ব্যথিত হওয়ার দিন। এই দিন নতুনধারার রাজনীতিকগণ তাদের বক্তব্যে বলেছিলেন, দেশের মানুষ নৈরাজ্য থেকে মুক্তি চায়। নতুন প্রজন্ম অন্যায় আর অপরাধের রাজত্ব থেকে মুক্তির জন্য নারী নির্যাতন মুক্ত সমাজ চায়। ৫৭ ধারা বাতিলের মধ্য দিয়ে অবাধ মুক্ত প্রবাহের গণমাধ্যম চায়। তাদের সেই চাওয়া পাওয়াকে বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই কেবল বায়ান্নর প্রেরণা, একাত্তরের চেতনাকে সজিব রাখা সম্ভব। তা না হলে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ মুখ থুবরে পড়বে। যা নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিরা চায় না।
সমাবেশে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান শান্তা ফারজানা, প্রেসিডিয়াম মেম্বার আহমেদুল কবির খান কিরণ, মহাসচিব চঞ্চল মেহমুদ কাশেম, ভাইস চেয়ারম্যান শেখ হাবিব খোকন, ডা. নূরজাহান নীরা, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাহামুদ হাসান তাহের, যুগ্ম মহাসচিব ইব্রাহিম খলিল প্রধান, মনির জামান, টিএম আলী ফরহাদ শিমুল, সাংগঠনিক সম্পাদক হাসিবুল হক পুণম, শাহাদাত সাগর, আলতাফ হোসাইন রায়হান, গিয়াস হায়দার, শেখ রেজাউল করিম, সাবেক সেনা কর্মকর্তা রহমাতুল্লাহ আলম প্রমুখের মত আমিও অবিরত এগিয়ে চলার স্বপ্ন নিয়ে কথা বলেছি। মাঝ পথে বাঁধ সাধে পুলিশ। ধর্ষক তুফান সরকারের কুশপুত্তলিকা দাহ করার পর মিছিল পর্যন্ত করতে দেয় নি। বাঁধাগ্রস্থ করেছে ছাত্র-যুব-জনতার রাজনৈতিক আন্দোলনকে। অথচ এই তুফান সরকারের রাজনৈতিক ক্ষমতায় অন্ধকার নেমে এসেছিলো বগুড়াতে।
বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক ও কিশোরী ছাত্রী ধর্ষণের হোতা তুফান বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক বনে গিয়েছিলো। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী আওয়ামী শ্রমিক লীগের আহ্বায়কের পদকে হাতিয়ার করে অল্প সময়ের মধ্যেই তার এই উত্থান। পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে মাদক ব্যবসা, দখলবাজি ও বাণিজ্যমেলায় জুয়ার আসর বসিয়ে টাকা কামিয়েছেন দুই হাতে। তিনি এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। বাবা মজিবর রহমান রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করলেও তার ছেলে তুফান থাকেন বিলাসবহুল বাড়িতে, চড়েন দামি গাড়িতে। নিজের নামে গড়ে তুলেছেন ‘তুফান বাহিনী’। হত্যাচেষ্টা, মাদক, চোরাচালানসহ কয়েকটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি এক ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় তিনি এখন পুলিশ হেফাজতে। অনৈতিক কাজে জড়িত থাকায় সংগঠন থেকে তাকে বহিষ্কারের রঙধনু ওঠালেও পুলিশী সর্বাত্মক সহযোগিতা এই ধর্ষকের সাথেই আছে। যে কারনে নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি ধর্ষক তুফানের বিচারের দাবীতে- ৩ মাসের মধ্যে ধর্ষকের ফাঁসির দাবীতে অনুষ্ঠিত সমাবেশ ও কুশপুত্তলিকা দাহ কর্মসূচীতে বাঁধা প্রদান করা হয়েছিলো বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি।
যারা বাঁধা দিতে এসেছিলেন, সেই পুলিশ ভাইদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই- মনে রাখবেন আপনারও বোন আছে মেয়ে আছে। আজ যদি ৩ মাসের মধ্যে ফাঁসির উদ্যেগ না নেয়; তাহলে আগামীতে মুক্তি পাবে না আমাদের মা বোনেরাও। যা আমাদের কারোই কাম্য নয়; কাম্য নয় বিধায়ই উত্তরণ চাই, প্রতিরোধ চাই। সকলের জানা প্রয়োজন যে, এই সব ধর্ষক হায়েনারা রাতারাতি দলীয় প্রভাব খাটিয়ে অর্থ-বিত্তশালী হওয়ায় অন্ধকার আর আলোর পার্থক্য বোঝে না। যেমন বোঝেনি, বগুড়া শহরের চকসুত্রাপুর চামড়া গুদাম এলাকার মজিবর রহমানের সাত ছেলের মধ্যে সবার ছোট তুফান সরকার। গণমাধ্যম বলছে, মজিবর রহমান আগে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করলেও স্বাধীনতার পর এলাকায় রাস্তায় চামড়া কেনাবেচা শুরু করেন। পরে পরিবারের অনেকে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি, ভূমি দখল ও চোলাচালানসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হন। শহরে কোনো জায়গা দখল বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য তুফানের ডাক পড়তে থাকে। এর পরই তিনি গড়ে তোলেন ‘তুফান বাহিনী’।
তুফান মাত্র দুই-তিন বছরে অবৈধ ব্যবসা করে কোটিপতি হয়েছেন। একাধিক প্রাইভেট গাড়িতে চলাফেরা করেন। অধিকাংশ সময় পরিবার নিয়ে ঢাকায় পারিবারিক ফ্লাটে থাকেন। শহরের চকসুত্রাপুর চামড়া গুদাম এলাকায় অত্যাধুনিক পাঁচতলা ভবন নির্মাণ চলছে। সম্প্রতি শহরের চকযাদু লেনে কোটি টাকা ব্যয়ে ছেলে তুর্যের নামে অত্যাধুনিক ‘তুর্য সেনেটারি স্টোর’ উদ্বোধন করা হয়েছে। ২০১২ সালে তুফান সরকারের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা ও মাদক সংক্রান্ত মামলা হয়। ২০১৫ সালে র্যাব সদস্যরা তাকে দুই বস্তা ফেনসিডিল ও বিপুল অংকের টাকাসহ গ্রেফতার করে। পরে শ্রমিক লীগে যোগদান করেন। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে রয়েছে তার সুসম্পর্ক। বড় ভাই জেলা যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা। তুফান সরকার ২০১৫ সালে শহরের চকসুত্রাপুর এলাকায় বাণিজ্যমেলার নামে প্রায় দেড় বছর জুয়া পরিচালনা করেন। অভিযোগ রয়েছে সেখান থেকেই কয়েক কোটি টাকা আয় হয়। চোরাই গাড়ি কেনাবেচার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। প্রায় দু’বছর বগুড়া শহরে অন্তত ১০ হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা থেকে বিপুল অংকের টাকা চাঁদাবাজি করেছেন। তার স্টিকার ছাড়া কোনো রিকশা সড়কে চলত না। প্রতিটি রিকশায় এককালীন দেড় হাজার টাকা ও দৈনিক ২০ টাকা চাঁদা নেয়া হয়েছে। শুধু ব্যাটারিচালিত রিকশা থেকেই প্রতিদিন আয় হয়েছে অন্তত ১০ হাজার টাকা। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নজরে এলে তার নির্দেশের পর তুফান বাহিনী বগুড়ার ব্যাটারি রিকশা থেকে চাঁদাবাজি বন্ধ করে। বাংলার ফাটাকেস্ট খ্যাত মন্ত্রী-সাংবাদিক-কবি ওবায়দুল কাদের কেষ্ট ঠাকুর হিসেবে ভালো পদক্ষেপ নিলেও তুফানের পেছনে নিকৃষ্টধরনের রাজনৈতিক গডফাদার থাকায় অহমিকায় অন্ধকারে ডুবে যায় তুফান। সেই তুফানসহ সারাদেশে সকল ধর্ষকের ৩ মাসের মধ্যে ফাঁসি কার্যকরের উদ্যেগ এখন সময়ের ব্যপার। একই সাথে নারী-শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে কার্যকর ট্রাইবুনাল নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃতত্বাধীন মহাজোট সরকারকে।
বাংলাদেশে ৫৭ ধারা বাতিলের মধ্য দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে নতুন প্রজন্মের ভূমিকা রাখার সুযোগ তৈরি করতে হবে। বাংলাদেশে স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও যদি ধর্ষণ-নির্যাতনের সংখ্যা গড়ে ৬৭ টি। এভাবে বাংলাদেশে স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও ধর্ষণ-নির্যাতন চলতে পারে তা নতুন প্রজন্মের রাজনীতি-শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি-অর্থনীতি-কূটনৈতিক কর্মী হিসেবে মনে করি না। তাই চাই আশু সমাধান। চাই উত্তরণ নারী নির্যাতন থেকে, উত্তরণ চাই ৫৭ ধারার মত একটি যাচ্ছে তাই কর্মকান্ড থেকে...
মোমিন মেহেদী : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ-এনডিবি এবং উপদেষ্টা, জাতীয় শিক্ষাধারা
< Prev | Next > |
---|