মোমিন মেহেদী
motamotরোহিঙ্গা সমস্যা নিরসনে জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে খোলা চিঠি পাঠিয়েছেন নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি ও সদস্যদের বরাবর লেখা খোলা চিঠিতে ইউনূস বলেন, ‘আপনারা অবগত আছেন যে, মিয়ানমারের রাখাইন এলাকায় মানবীয় ট্র্যাজেডি ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ একটি ভয়ংকর রূপ নিয়েছে, যে বিষয়ে অবিলম্বে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।’ এমন একটা সময়ে যখন আমরা বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম নতুনধারা ৩৯ টি বন্যাক্রান্ত জেলার মানুষের জন্য নিবেদিত ত্রাণ দিচ্ছি; দিচ্ছি ভালোবাসা; যখন আমরা রোহিঙ্গা ইসু সমাধানের দাবীতে সোচ্চার আন্দোলনের পাশাপাশি সামর্থানুযায়ী সাহায্য করছি সংকটাপন্ন রোহিঙ্গাদেরকে; যখন রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানের লক্ষে সারা বিশ্বে সচেতন মানুষেরা ঐক্যবদ্ধ ঠিক তখনই চিরঞ্জীব বিপ্লবী ফিদেল ক্যাস্ত্রোর কিউবায় আঘাত হেনেছে হারিকেন ইরমার। গতি বাড়িয়ে এগোচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় সরছে লাখো মানুষ। এমন একটা খবর রাজনীতি-শিক্ষা-সাহিত্য-সমাজ-সংস্কৃতি-অর্থনৈতিক নগণ্য কর্মী হিসেবে ব্যথিত করেছে আমাকে। কেননা, নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশের অন্য হাজার নয়; লাখো তরুণের চেয়ে আমরা নতুনধারার কর্মীরা এগিয়ে আছি কিউবা, ডেনমার্ক, ভেনিজুয়েলা, শ্রীলঙ্কা আর বলিভিয়ার রাজনৈতিক বর্তমানের সাথে পরিচয়ের সূত্রতায়। এই তো সেদিন বাংলাদেশে কিউবার প্রতিনিধি হিসেবে ব্যক্তি উদ্যেগে এগিয়ে চলা লোভ মোহহীন নিরন্তর রাজনীতি গবেষক-দার্শনিক-তাত্বিক ও সংগঠক ওবায়েদ জাইগীরদার-এর বনানীস্থ কার্যালয়ে সমবেত হয়েছিলাম ‘কিউবান এমপি-মন্ত্রী ও রাজনীতিকদের’ সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে। সেখানে দেখেছি যে, জীবন নয়; কর্মকে কতটা ভালোবাসেন একজন কিউবান। সেই কিউবায় এমন নির্মম প্রকৃতিক আঘাতের খবরে শুধু আমি নই, নতুনধারার রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত প্রতিটি মানুষ ব্যথিত-মর্মহাত।

জানতে পেরেছি যে, পাঁচ মাত্রার ভয়াল হারিকেন 'ইরমা'র তা-বে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে এরই মধ্যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নিহত হয়েছে ২১ জন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ১২ লাখ মানুষ। ঝড়টি শুক্রবার আঘাত হেনেছে কিউবায়। গত এক শতাব্দির মধ্যে আটলান্টিক মহাসাগরে সৃষ্ট সবচেয়ে শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড়টি আজ রোববার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় আঘাত হানতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টির আঘাতে এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় হল্যান্ড নিয়ন্ত্রিত দ্বীপ সেইন্ট মার্টিনে থরয়টার্স কিউবায় আঘাত হানার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলা কিউবার পথকে কন্টকাকীর্ণ করলো প্রকৃত। আমরা একমন একটা পরিস্থিতিতে তাদের জন্য শুধু সমবেদনাই নয়; আন্তরিকভাবে চলুন নিজেদের যার যা আছে তা দিয়ে একটি ফান্ড তৈরি করে পৌছে দেয়ার ব্যবস্থা করি কিউবায়। তাতে করে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বলা ‘হিমালয়ের মত উদার তিনি(বঙ্গবন্ধু) এবং তাঁর বাংলাদেশ।’ কথাটি আলোর ঝলকানিতে হেসে উঠবে আরেকবার। পাশাপাশি স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও যে জনগনকে সাথে নিয়ে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশের জন্য নিবেদিত থাকা নতুন প্রজন্ম-নতুনধারা; তাঁর খবর পৌছে যাবে বিপ্লবীদের কিউবায়-ভালোবাসার কিউবায়। যা আমাদেরকে শুধু রোহিঙ্গা ইস্যু, বন্যা ইস্যুতেই কর্মঠ-আন্তরিক রাখবে না; পৌছে দেবে বিশ্বের দরবারে যে- বাংলাদেশের জন্য নিবেদিত তরুণগণ শুধু দেশেই নয়; দেশের বাইরেও রেখেছে তাদের ভালোবাসার হাত। যে হাত ধরে ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু কিউবা; সেই হাত তৈরি থাকুক সবসময় সকল মানুষের জন্য-মানবতার জন্য।
অবশ্য এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে- ধেয়ে আসা হারিকেন (ঘূর্ণিঝড়) 'ইরমা' গতি বাড়িয়ে ধেয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। ভয়াল এই ঘূর্ণিঝড়ের চোখ রাঙানিতে কয়েক লাখ বাসিন্দাকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের কর্তৃপক্ষ। শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড় ফ্লোরিডা ও এর আশপাশের রাজ্যে 'বিধ্বংসী তান্ডব' চালাবে বলে সতর্ক করেছে দেশটির জরুরি সেবা বিষয়ক কেন্দ্রীয় সংস্থা (ফেমা)। সপ্তাহব্যাপী ক্যারিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ তা-ব চালিয়ে অন্তত ২১ জনের প্রাণহানির পর পাঁচ মাত্রার এই ঘূর্ণিঝড়টি শুক্রবার কিউবাতে আছড়ে পড়ে। হারিকেন ইরমার আঘাতে এরই মধ্যে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ১২ লাখ মানুষ। গত এক শতাব্দির মধ্যে আটলান্টিক মহাসাগরে সৃষ্ট সবচেয়ে শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড়টি ফ্লোরিডায় আঘাত হানতে পারে বলে ধারণা করছেন আবহাওয়াবিদরা। তীব্র বাতাস ও বন্যার মাধ্যমে ইরমা যুক্তরাষ্ট্রের চতুর্থ বৃহত্তম এই রাজ্যটিতে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ে আসছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইরমা আঘাত হানার পর ফ্লোরিডার বেশ কিছু অঞ্চলে আগামী কয়েক দিন বিদ্যুৎ থাকবে না। তাই এ রাজ্যের প্রায় পাঁচ লাখ লোককে বাড়ি খালি করে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সবাইকে সতর্ক করে ফ্লোরিডার গভর্নর রিক স্কট বলেছেন, 'আমাদের হাতে সময় কম; আপনি যদি খালি করে ফেলার নির্দেশ দেয়া অঞ্চলগুলোর মধ্যে থাকেন, তাহলে এখনই চলে যান। এটা এমন এক সর্বনাশা ঝড় হতে যাচ্ছে, যা আমাদের রাজ্য আগে দেখেনি।' তিনি আরও বলেন, 'মনে রাখবেন, আমরা আপনার ঘরবাড়ি আবার বানাতে পারব। কিন্তু আপনার জীবনকে নয়।' উপকূল থেকে উপকূলে এই ঝড় প্রভাব ফেলবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। রাজ্যের ২৫ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ৫৬ লাখ লোককে সরে যেতে বলা হয়েছে। ইরমাকে 'ঐতিহাসিক ধ্বংসযজ্ঞের ক্ষমতাসম্পন্ন ঝড়' অভিহিত করে এক ভিডিওবার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টে ডোনাল্ড ট্রাম্প জনগণকে সরকারি কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশনা মেনে চলতে অনুরোধ করেছেন। ফ্লোরিডার পাম বিচে ট্রাম্পের রিসোর্ট মার-আ-লাগো খালি করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ঘণ্টায় ২৫০ কিলোমিটার গতিবেগের বাতাস নিয়ে ইরমা এখন চার মাত্রার ঝড়ে পরিণত হয়ে মিয়ামির ৪৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছে বলে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টারের সর্বশেষ আবহাওয়া বার্তায় জানানো হয়। ঝড়টি পুনরায় শক্তি অর্জন করে পাঁচ মাত্রার হারিকেন হিসেবেই ফ্লোরিডার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে আছড়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার। ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টারের স্কেল অনুযায়ী, পাঁচ মাত্রার ঘূর্ণিঝড়ই সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়। ১৮৫১ সালের পর থেকে তিনবার এই ধরনের পাঁচ মাত্রার ঝড় যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হেনেছে। সর্বশেষ ১৯৯২ সালে যে পাঁচ মাত্রার হারিকেন অ্যান্ড্রুর দেখা মিলেছিল, ইরমা তার চেয়েও অনেক অনেক শক্তিশালী বলে ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এমন একটা পরিস্থিতিতে খুব বলতে ইচ্ছে করছে- ছল চাতুরি ছলাকলা ট্রাম্প দেখাবার আগে/ ইরমা এসে দিচ্ছে হানা যা ছিলো তার ভাগে। আমি মনে করি এই আঘাত ফ্লোরিডায় হানার মূল কারণ অন্যায়। আর কিউবায় ঘুরে দাড়ানোর জন্য-নিবেদিত থাকার জন্য সতর্কতা। বাংলাদেশে স্বাধীনতা আন্দোলনে নিবেদিত থাকা বীর সৈনিকেরা যেমন নিজের জীবন উৎসর্গ করে এগিয়ে গেছেন; এখন স্বাধীনতা রক্ষার আন্দোলনে নিবেদিত থাকা কালোহীন আলোকিত সমাজ-রাষ্ট্র গড়ার সৈনিকেরাও একইভাবে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে রাখার জন্য নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আর তাই বিশ্বের সকল বন্ধদেশের প্রতি ভালোবাসার হাত বাড়ানোর কোন বিকল্প অন্তত তারুণ্যময় আমাদের কাছে নাই। তাই রোহিঙ্গাদের পাশে যেমন দাঁড়াই; একইভাবে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের সকলকালের বন্ধুদেশ কিউবার পাশেও দাঁড়াই।
গণমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী কিউবার সিয়েগো দে আভিলাতে ইরমা আঘাত হানার পর উত্তরের কেন্দ্রীয় উপকূল এলাকার চিত্র ধীরে ধীরে ক্যারিবীয় অন্য অঞ্চলগুলোর ভূতুড়ে এলাকার মতো হয়ে গেছে। এখনো কিউবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সন্ধ্যার সংবাদে উত্তাল সমুদ্র, ধূসর আকাশ, ভারী বৃষ্টি, নুয়ে পড়া পাম গাছ, উপকূলে আছড়ে পড়া বিশাল বিশাল ঢেউ এবং অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার খবর দেয়া হয়েছে। দেশটির আবহাওয়াবিদরা সতর্ক করে বলছেন, উত্তর উপকূলের পশ্চিম বরাবর সানক্তি স্পিরিচাস ও ভিলা ক্লারা প্রদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ইরমার ধ্বংসযজ্ঞ আরও স্পষ্ট হবে। এরপর এটি উত্তরদিক বরাবর ফ্লোরিডার দিকে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই পথে ৫০টিরও বেশি হোটেল ও চমৎকার সমুদ্রতীর আছে, যেগুলো কিউবার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার মত অবিরত তৈরি হওয়া বর্তমানে নতুন প্রজন্মের পক্ষ থেকে কেবল শুভ কামনাই নয়; আন্তরিক ভালোবাসা সবসময় আমাদের পক্ষ থেকে; নতুন প্রজন্মের পক্ষ থেকে; নতুনধারার পক্ষ থেকে ক্রমশ সাহসের সাথে আরো দৃঢ়ভাবে বেড়ে ওঠার জন্য...

মোমিন মেহেদী : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ-এনডিবি

সাম্প্রতিক