সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জের হাওরের পানিতে প্রাথমিকভাবে ইউরেনিয়ামের বা তেজস্ক্রিয়তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং স্বাভাবিকভাবে যে ধরনের ইউরেনিয়াম বা তেজস্ক্রিয় পরিবেশে থাকে তার চেয়েও অনেক কম রয়েছে। রোববার সকালে সুনামগঞ্জের দেখার হাওরের পানি পরীক্ষা শেষে এ তথ্য দিয়েছেন পরমাণু শক্তি কমিশনের ফিজিক্যাল সায়েন্স অ্যাটোনমিক্যাল কমিশনের সদস্য ড. দিলীপ কুমার সাহা।
তিনি বলেন, পরিবেশে স্বাভাবিকভাবে ০.২০ মাত্রার তেজস্ক্রিয়তা থাকে সেক্ষেত্রে হাওরে রয়েছে ০.১০ যা প্রায় অর্ধেক। সুনামগঞ্জের হাওরে মাছ এবং জলজ প্রাণী মারা যাওয়ার ঘটনায় ইউরেনিয়ামের বা তেজস্ক্রিয়তার কোনো প্রভাব আছে কিনা তা পরীক্ষা করতে শনিবার রাতে সুনামগঞ্জে পৌঁছায় আনবিক শক্তি কমিশনের তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল।
প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আনবিক শক্তি কমিশনের সদস্য ড. দীলিপ কুমার সাহা। অন্যান্য দুই সদস্য হলেন- ড. বিলকিস আরা বেগম এবং কমিশনের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. দেবাশীস পাল।
প্রতিনিধি দলটি সকালে কাজ শুরু করেন সুনামগঞ্জের দেখার হাওরে। পানিতে নেমে দীর্ঘক্ষণ ইউরেনিয়াম বা তেজস্ক্রিয় পরীক্ষা করেন তারা। পরে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. দিলীপ কুমার সাহা জানান, দেখার হাওরের পানিতে ইউরেনিয়ামের বা তেজস্ক্রিয়তার কোনো প্রমাণ পাননি তারা।
ড. দিলীপ কুমার সাহা বলেন, ‘আপনারা যেটা আশঙ্কা করছিলেন, যে এখানে ইউরেনিয়াম বা তেজস্ক্রিয় কোনো পদার্থের ইফেক্টের জন্য এই মাছগুলো মারা গেছে। আমরা রেডিও অ্যাকটিভি পরিমাপের যে মিটার, সেটা নিয়া আসছি। আমরা খুব ক্লোজলি, পানি ও কচুরিপানার খুব কাছ থেকে সেই সার্ভে মিটার দিয়ে রেডিও অ্যাকটিভিটি পরিমাপের চেষ্টা করেছি। তাতে আমরা যেটা দেখেছি, বাংলাদেশের নরমাল যে ব্যাকগ্রাউন্ড লেবেল, রেডিও অ্যাকটিভিটির মিনিমাম যে ব্যাকগ্রাউন্ড থাকার কথা, তার থেকেও অনেক পরিমাণের লেবেল এখানে পাওয়া গেছে।’
‘এর অর্থ হলো, এখানে কোনোভাবেই ইউরেনিয়াম বা অন্য কোনো রেডিও অ্যাকটিভির জন্য এখানে মাছগুলো মরে নাই। যেটা পেপারে আসছে বা আরো অন্য সংগঠন পরীক্ষা করে বলছে… এখানে সার ব্যবহার করা হয় ধানচাষের জন্য বা কীটনাশক দেয়া হয়। এগুলো পানির সঙ্গে বিক্রিয়া করে হয়তো অ্যামোনিয়া গ্যাস তৈরি করছে, যার ফলে পানিতে অ্যামোনিয়া গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে হয়তো অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেছে। এ জন্য মাছগুলো মারা গেছে।’
ড. দিলীপ কুমার সাহা আরো বলেন, ‘আর পানির ভেতরে একটা জিনিসের পচন হলে, সেখানে দুর্গন্ধ বের হতেই পারে। রং পরিবর্তন হতেই পারে, এর জন্য হয়তো এটা হয়েছে। পরমাণু শক্তি কমিশনের পক্ষ থেকে গতকাল শনিবার হাওরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে যথেষ্ট পরিমাণের নমুনা, যেমন—পানি, মরা মাছ, মরা হাঁস, কচুরিপানা, সেডিমেন্ট সংগ্রহ করে আমরা ঢাকায় পাঠিয়েছে। আজকেও আমরা আরো জায়গায় পর্যবেক্ষণ করব।’
পরে ঢাকায় গিয়ে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা এই পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেবেন। তখন আসলে প্রকৃত অবস্থাটা জানা যাবে বলে মন্তব্য করেন ড. দিলীপ।
এদিকে, গতকাল সারা দিন বিভিন্ন হাওরে কাজ শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল পানি ও জলজ উদ্ভিদ সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছে। তারাও তাদের ল্যাবে নিয়ে বাকি পরীক্ষা করে দেখবেন।
একইভাবে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দলটিও তিন দিন কাজ শেষে সিলেটে ফিরে গেছে। দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, হাওরের বাঁধ নির্মাণের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে। তার অনুসন্ধানে এই তিন দিন কাজ করেছেন তাঁরা।
দুদকের প্রতিনিধিদল বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোগ সংগ্রহ করেছে। যারাই অভিযোগ দিয়েছেন, তাদের কাছ থেকে অভিযোগ সংগ্রহ করা হয়েছে। যদি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রামাণিত হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা।
< Prev | Next > |
---|