shantaবর কাজী আহসানুল করিম একটি বেসরকারী ইউনিভার্সিটির টিচার। পারিবারিক সূত্রে এই বিয়ের আয়োজন। শান্তা অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস ইউনিভার্সিটিতে পোস্ট গ্রাজুয়েশন করছে। আহসানের সাথে শান্তার নাইট এঞ্জেল রেস্টুরেন্টে একবার মাত্র একান্তে কথা হয়েছে। কেমন আছেন, কি করছেন ইত্যাদি কুশল বিনিময় টাইপ কথা। আর মোবাইলেও তেমন কোনো কথা বলা হয়নি। আসলে কি বলবে বা কি প্রসঙ্গে বলবে শান্তা তা খুঁজে পায় না। এ নিয়ে শান্তার বান্ধবীদের হাসি তামাশার অন্ত নেই। ওরা ভেবেই পায় না অজানা অচেনা একটি ছেলেকে সে কিভাবে বিয়ে করছে। শান্তার কিন্তু বেশ ভালই লাগে বিষয়টা ভাবতে। যদি বিয়ের আগেই সব জানাশুনা, কৌতূহল শেষ হয়ে যায় তবে বিয়ের পরের জন্য আর অবশিষ্ট থাকবে কি? বরং বিয়ের পর জানা তারপর ভাবা জীবনে একটা নূতন মাত্রা যোগ করবে।

শান্তার বাবা মা বছরে প্রায় দশমাস ব্যবসার কাজে ঢাকায় আর বাকি দুমাস সিডনিতে কাটায়। সিডনিতে ওদের নিজেদের বাড়িতে বড় ভাই ভাবীর সাথে শান্তা থাকে। শান্তা ভিকারুন্নেসা নুন কলেজ থেকে ইন্টার পাশ করে সিডনিতে গ্রাজুয়েশন করতে আসে। ছোটকাল থেকেই শান্তা পড়াশুনায় খুব মেধাবী। সে ইন্টারে মাত্র একজন টিচারের কাছে বাসায় পড়েছে।

সিডনিতে গ্রাজুয়েশন করার সময় সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে সাইদ ও সজলের সাথে তার পরিচয় হয়। ওরা বারাকপুর কলেজে ইন্টার ফাইনালের ছাত্র। পরিবারে অস্বচ্ছলতার কারণে প্রাইভেট পড়ার সামর্থ্য না থাকলেও ওদের পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ শান্তাকে অবাক করে। শান্তা ওদের ইন্টারনেটে অঙ্কের সমাধান সহ অন্যান্য বিষয়ের নোট করতে আর টেস্ট পেপার থেকে জটিল বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরগুলো বের করতে সাহায্য করে। ছেলে দুটোর অক্লান্ত চেষ্টায় আর শান্তার সহযোগিতায় দুজনেই ইন্টারে খুব ভালো রেজাল্ট করে। তারপর শান্তা ওদের বিভিন্ন কোচিং গাইডগুলো শেষ করতে সাহায্য করে। সাইদ রংপুর মেডিকেলে আর সজল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। ওরা খুব খুশী হয়ে শান্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। আর ওদের সাফল্য শান্তার কাছে নিজের সাফল্য বলে মনে হয়।

শান্তা সজল আর সাইদকে বৌভাতের কার্ড পাঠিয়েছে। বিয়ের অনুষ্ঠানের পর বাসর রাতটা একটু নিরিবিলিতে কাটানোর জন্য ওরা হোটেল রূপসী বাংলায় একটি সুইটে গিয়ে ওঠে। পরদিন অফিসার্স ক্লাবে ওদের বৌভাতের অনুষ্ঠানে সাইদ আর সজলকে দেখে শান্তার খুব ভালো লাগে। ওরা একটা বিশাল ফুলের তোড়া আর রঙিন মোড়কের একটা প্যাকেট ওর হাতে তুলে দেয়।

বউভাতের আনুষ্ঠানিকতা শেষে শান্তা আর আহসান শান্তাদের বাড়িতে ফিরে আসে। পরদিন সবাই মিলে গিফট খুলতে গিয়ে ওরা সম্পূর্ণ নূতন একটি উপহার আবিষ্কার করে। “বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল ভর্তি গাইড” - সংকলনে সাইদ ও সজল। গাইডটি শ্রদ্ধার সাথে উৎসর্গ করা হয়েছে শান্তাকে। আর গাইড বিক্রির সব টাকা বারাকপুর কলেজের ছাত্রছাত্রীদের ইন্টারনেট ও নূতন কম্পিউটার কেনার জন্য ব্যয় করা হবে। শান্তা আনন্দে প্রায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে।

নাইম আবদুল্লাহ
সিডনি প্রবাসী লেখক ও সাংবাদিক

সাম্প্রতিক