স্টাফ রিপোর্টার: জঙ্গিবাদ, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ইস্যুতে মিডিয়া ও সাংবাদিকদের নিরপেক্ষ থাকার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী।
শনিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের পিএইচপি ভিআইপি লাউঞ্জে কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ মন্তব্য করেন। ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদকে ছাড় দেওয়া হবে না।
প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে। জঙ্গিবাদের অবসান হবেই। এ ক্ষেত্রে মিডিয়ার নিরপেক্ষ ভূমিকা নেওয়ার সুযোগ নেই।
যেমনভাবে জাতীয় ইস্যুতে নিরপেক্ষ থাকার সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা, স্বাধীনতাবিরোধী-মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার ইস্যুতে নিরপেক্ষ থাকার সুযোগ নেই।
মানবতাবিরোধীদের বিচারের পক্ষ নিতে হবে। মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও মানবতার শত্রু। অগ্রযাত্রার পথে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে এরা। তাদের বিচারে নিরপেক্ষ থাকার সুযোগ নেই। সীতাকু-, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক আত্মঘাতী জঙ্গি হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মনে হয় নতুন করে দেশকে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে।
একসময় বাংলাদেশে আইএস আছে এমনটি প্রমাণের আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ছিল। এর আগে ৬৪ জেলায় একযোগে বোমা হামলা দেখেছি। এর মাধ্যমে মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের উত্থানের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। গুলশানে রেস্টুরেন্টে হামলা, শোলাকিয়ার হামলার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে জাঁতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বেশ কিছু সফল অভিযানও পরিচালনা করেছিল। এবারও আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, সীতাকু-ের মতো ঘটনা চট্টগ্রাম শহরেও ঘটতে পারে। গণমাধ্যমেও আক্রমণ চালানোর ধৃষ্টতা দেখাতে পারে তারা। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
প্রশাসনকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে হবে। আবার প্রশাসন ভুল করলে তাও তুলে ধরতে হবে। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা, পেশাগত মর্যাদা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, রুটি-রুজির অধিকারের জন্য সংকীর্ণ রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি ছেড়ে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বর্তমানে সাংবাদিক সমাজ, ইউনিয়ন দুই রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিভক্ত হওয়ায় রুটি-রুজির আন্দোলন ও জাতীয় ইস্যুতে সাংবাদিক সমাজ সঠিক ভূমিকা রাখতে অনেকটাই ব্যর্থ।
ঐতিহ্য ফিরে পেতে হলে সাংবাদিক ইউনিয়ন ও সাংবাদিক সমাজের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব সভাপতি কলিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কবি শুকলাল দাশের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মোস্তাক আহমদ, সহসভাপতি নিরুপম দাশগুপ্ত, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসিফ সিরাজ, চট্টগ্রাম সাংবাদিক কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির চেয়ারম্যান মঈনুদ্দিন কাদেরী শওকত, প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক শহীদুল্লাহ শাহরিয়ার, সদস্য হেলাল উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ। ধন্যবাদ বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সাংবাদিক-বান্ধব নেত্রী বলে মন্তব্য করে ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনা প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি সরকারি খাতের বাইরে বেসরকারি পর্যায়ে ইলেকট্রনিক মিডিয়া উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। আজ অনেক টেলিভিশন। অনেক কর্মসংস্থান হয়েছে। তিনি সম্পাদকদের মানহানি মামলায় গ্রেফতারের অসম্মান রুখতে সমন জারির আইন করেছেন। এখন সাংবাদিকদের কোমরে দড়ি পরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় না। যদিও সাংবাদিকরা আইনের উর্ধে নন। প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের জন্য কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করেছেন। তিনি বলেন, সাংবাদিকতা সবসময় ঝুঁকিপূর্ণ পেশা। অন্যের বঞ্চনা, নির্যাতনের বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা সোচ্চার। সেভাবে নিজেদের ক্ষেত্রে সোচ্চার হতে পারেন না।
নবম ওয়েজ বোর্ড চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। শিগগির চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হবে। এবারের বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে পৃথকভাবে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক ও কলাকুশলীদের বেতন-ভাতা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। আইনি ও সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে ওয়েজবোর্ড পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়নি। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, দেশের অনেক প্রেসক্লাবে মুক্তিযুদ্ধের কথা যখন বলতে পারিনি তখন এ ক্লাব মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সুদৃঢ় অবস্থান ছিল। সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব সভাপতি কলিম চৌধুরী। তিনি বলেন, আমার ২৭ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে একজন ইকবাল সোবহান চৌধুরীকেই দেখেছি। সাংবাদিকদের সুখে দুঃখে আপনার চেয়ে বেশি কাউকে পাইনি।
আপনি না হলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধু হল হতো না। আমরা কৃতজ্ঞ। শুকলাল দাশ বলেন, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিষ্ঠান। এ ক্লাবেই প্রথম পোড়ামাটির শিল্পকর্মে বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ম্যুরাল স্থাপন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ম্যুরালটি উদ্বোধন করেছেন। চৌধুরী ফরিদ সীতাকু- ও রাজধানীর উত্তরায় আত্মঘাতী জঙ্গি হামলায় উদ্বেগ জানিয়ে এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের করণীয় সম্পর্কে তথ্য উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। হেলাল উদ্দিন চৌধুরী জাতীয় প্রেসক্লাবকে সত্যিকারের জাতীয় মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানান।
< Prev | Next > |
---|