is naমূল কথায় যাওয়ার আগে চলুন পুরানো একটা গল্প নতুনভাবে মনে করা যাক। চলছে আমেরিকার জাতীয় নির্বাচন। রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক দলের দু’সদস্য নিজ নিজ দলের প্রচারে নেমেছে। তবে আশ্চার্যের বিষয়, দু’জনেই ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থীর জন্য ভোট চাচ্ছে ! ভাবছেন বোধহয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের মতো রিপাবলিকান দলের কর্মীও ডেমোক্রেটিক দলের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে এ কর্ম করছে ! আসলে ঘটনা তা নয় ! তবে, কিভাবে ? শুনুন তবে!

যিনি ডেমোক্রেট দলের সদস্য তিনি সিএনজিতে উঠে এর চালকের সাথে ন¤্র ও সদয়ভাবে খুব ভালো ব্যবহার করছে, ড্রাইভারকে আপনি বলে সম্বোধন করছে, ঠিকঠাক ভাড়া পরিশোধ করে বিদায় বেলায় শুধু একবার আহ্বান করে ড্রাইভারের কাছে অনুরোধ রেখেছে, আমাকে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে ডেমোক্রেটিক পার্টি মনোনীত প্রার্থীকে আপনার মূল্যবান ভোট দিয়ে আমেরিকার সম্মৃদ্ধিতে সহায়তা করবেন। অন্যদিকে রিপাবলিকান পার্টির অনুসারীও সিএনজিতে চেপেছে, সিএনজির চালকের সাথে চরম অভদ্র আচরণ করেছে, গালি-গালাজের যতোটুকু জানা ছিলো তাও সিএনজির ড্রাইভারকে দিয়েছে, দু’একটি চড়-থাপ্পরও বাদ যায়নি। সিগারেটের ধোঁয়া ড্রাইভারের চোখ-মুখের দিকে ফুঁকেছে, তুই তুকারি করে নেমে যাওয়ার সময় সিএনজির ভাড়া না মিটিয়ে উপরন্ত চোখ লাল লাল করে শাসিয়ে বলে গেছে, আমি ডেমোক্রেটিক দলের নেতা ! ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থীকে ভোট না দিলে তুইসহ তোর চৌদ্দগোষ্ঠীর খবর আছে ! রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থীর জন্য নতুন করে আর ভোট চাওয়ার দরকার আছে ? এবার চলুন জঙ্গীদের মুখ থেকে উচ্চারিত ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনির ব্যাপারে কিছু বলা যাক।

বাংলাদেশে এ যাবৎ যতোগুলো জঙ্গি হামলা ঘটেছে তার প্রায় প্রত্যেকটিতে জঙ্গিরা ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বণি তুলে সাধারণ মানুষের ওপর হামলে পড়েছে এবং নীরিহ মানুষ হত্যা করেছে। মানবতা বিবর্জিত কাজের সাথে ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বণির সাজুয্য কোথায় তা একমাত্র জঙ্গিগোষ্ঠীই ভালো বলতে পারবে। অথচ যে মহান আল্লাহ ও তার প্রেরিত শ্রেষ্ঠ পুরুষ হযরত মুহাম্মদ সা. অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যাকে সবচেয়ে বড় পাপ বলে বারবার ঘোষণা দিলেন এবং পরিণামে কঠোর শাস্তির যে হুঁশিয়ারী দিলেন সেই আল্লাহর দোহাই দিয়ে যারা ধর্মের অপব্যাখ্যা করে মানবতাবিরোধী কাজের সাথে নিজেদেরকে জড়িয়েছে তারা একদিকে যেমন মানবতার শত্রু অন্যদিকে কপটমূর্খ। তাদের মূর্খতার কারণেই আজ ইসলামের দুর্ণাম হচ্ছে। এরা ইসলামকে ব্যানার হিসেবে ব্যবহার করে এদের অনৈতিক কর্মকান্ডের বৈধতা দিতে ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সহানুভূতি আদায় করতে চায়। অথচ ইসলামের সাথে এদের এবং এদের হীন কর্মকান্ডের নূন্যতম সম্পর্ক নাই।

ইসলাম শান্তির ধর্ম। বিশ্বের বুকে আর কোথাও এমন কোন ধর্ম ও জীবন ব্যবস্থার সন্ধান পাওয়া যাবে না যা ইসলামের চেয়ে বেশি পরিণত, অধিক পূর্ণ। অথচ মুসলিম নামধারী গুটিক’তক মানুষের ধর্ম অসর্থিত কাজের কারনে আজ ইসলামকে পার্থিবভাবে কোনঠাসা অবস্থানে পৌঁছতে হয়েছে। ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বণি উচ্চারণ করে মহান রবের বড়ত্ব-শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা দেয়া চলে কিন্তু মানুষ হত্যায়, মানবতা বিরোধী কর্মকান্ডের পরিচালনায় যারা ইসলামের এমন মহৎ ঘোষণার অপব্যবহার করে ইসলাম ও মুসলমানের শরীরে কলুষিত আভা লেপন করার চক্রান্ত ফেঁদেছে তারা ইসলাম নামক সত্য ধর্মের ওপর অধিষ্ঠিত নাই। এরা অন্যকোন তৃতীয় শক্তির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেই ইসলামের দুর্ণাম ঘটাচ্ছে।
আল্লাহর জমীনে আল্লাহ প্রেরিত জীবন বিধান বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর ওপর অবশ্য পালনীয় তবে এর অর্থ এই নয় যে, সেটা ধর্মের অপব্যাখ্যা করে কিংবা সহিংসতা অবলম্বন করে সে উদ্দেশ্যকে পূর্ণ করতে হবে। ইসলাম এটা বলেনি, সমর্থনও করেনি। যারা জেনে-বুঝে অথবা না বুঝে মানবতা বিধ্বংসী কর্মকান্ড সম্প্রসারণের সাথে ‘আল্লাহু আকবর’ কিংবা এরূপ ধর্মের অন্যান্য কোন শ্বাশ্বত ঘোষণাকে একাকার করে ফেলছেন, আল্লাহর ওয়াস্তে তারা বিরত হোন। উগ্রতা, জঙ্গিবাদ কিংবা বিচ্ছিন্নবাদ ধর্ম কিংবা মানবীয় দৃষ্টিকোন সমর্থিত কোন পন্থা হতে পারেনা। পৃথিবীতে বহু শব্দ, বাক্য আছে-অমানবিক কর্মকান্ড পরিচালনায় সেসব ব্যবহার করুণ। ইসলাম নামক পবিত্র ধর্মের কোন পবিত্র শব্দকে অনৈসলামিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে ধর্মের দুর্ণাম করা যেমন উচিত হচ্ছে না তেমনি সাধারণ মুসলমানদের প্রতি জগৎবাসীর বিতৃষ্ণভাব উদয়ের আবহ দয়া করে সৃষ্টি করবেন না।

‘আল্লাহ আকবর’ ধ্বনির মহত্বের অপব্যবহার করে যারা ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করছে তাদের বিরুদ্ধে ঐকব্যদ্ধ হওয়া আজ মুসলিম মিল্লাতের জন্য অত্যাবশ্যকীয় দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে বিপথগামী এসব তরুন ও নর-নারীকে ফেরাতে না পারলে রাষ্ট্রীয় জীবনে একদিকে যেমন অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়াত্মক পরিবেশ তৈরি হবে তেমনি অন্যদিকে ইসলাম ধর্মের চিরায়ত সৌন্দর্যের ওপর কালিমা লেপন হবে এবং ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে এসে জীবনকে ধণ্য করতে চায় তারও সংশয়ে পতিত হবে। যারা প্রকৃত ইসলামের অনুসারী সাচ্চা মুসলিম তাদের কেউ যেমন জঙ্গীবাদকে সমর্থন করবে না, তেমনি এদেরকে সামগ্রিকভাবে বয়কট করে মানবতার পক্ষেই জয়গান গাইবে। ইসলাম সর্বদাই শান্তি ও আলোর পথকে নির্দেশ করে। যারা ইসলামের এ অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করবে, আল্লাহর কসম, তাদেরকে কাল-হাশরের ময়দানে মহান প্রভূ কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তির মুখোমুখি করবেন।

রাজু আহমেদ। কলামিষ্ট।
fb.com/rajucolumnist/

সাম্প্রতিক