কিশোরগঞ্জ প্রেসক্লাবের ৫০ বছর পূর্তি উৎসব অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত প্রধান মেহমান হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ফজলে কবির ০৮/০৭/২০১৭ ইং শনিবার এসেছিলেন। তিনি এক সময় কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ছিলেন। তাছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব সহ বিভিন্ন সরকারী উচ্চপদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। অবসরে থাকাকালীন সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর হিসেবে স্থলাভিষিক্ত হন। জানা যায়, তার সহধমির্নীও অতিরিক্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
জেলা প্রশাসক হিসেবে তিনি ন্যায়, নিষ্ঠা, সততা, আদর্শ ও ভালোবাসার মাধ্যমে কিশোরগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষের নিকট একজন সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে অনাবিল সম্মান ও ভালোবাসা খুঁড়িয়ে ছিলেন। এমনিভাবে কিশোরগঞ্জের প্রথম জেলা প্রশাসক হিসেবে বর্তমান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা ও অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম.এ মান্নান জেলার মানুষের অকৃত্রিম সম্মান ও ভালোবাসা অর্জন করেছিলেন। “মানুষ মানুষের জন্য” এ উক্তির যথার্থতা রেখে গেছেন জেলা প্রশাসক এম.এ মান্নান ও জেলা প্রশাসক ফজরে কবির। তাদের আচার আচরণ, বেশভূষা, চালচলনে ছিল সাদাসিধে ও আড়ম্বরহীনতার সুস্পষ্ট চাপ। তাদের কাছে ধনী, দরিদ্র, ক্ষমতাহীন, ক্ষমতাসীনদের মধ্যে ছিল না কোন ব্যবধান। বাস্তবিক অর্থেই অনেকের মধ্যে এ দুজন জেলা প্রশাসক মানুষের অকৃত্রিম øেহ, শ্রদ্ধা, অকৃত্রিম সম্মান ও ভালোবাসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তেমনিভাবে কিশোরগঞ্জের প্রথম ও প্রয়াত জেলা ও দায়রা জজ মোঃ রুহুল আমিন, এক সময়ের পুলিশ সুপার ও বর্তমানে ডিআইজি সাইফুল আলম ও মল্লিক ফখরুল ইসলামের কথাও জেলার মানুষ সম্মানের সাথে স্মরণ করে থাকে। ন্যায়, নিষ্টা ও আদর্শের জন্য বর্তমান জেলা প্রশাসক মোঃ আজিমুদ্দিন বিশ্বাস এবং পুলিশ সুপার মোঃ আনোয়ার হোসেন খানও জেলার মানুষের নিকট গ্রহণযোগ্য কর্মকর্তা হিসেবে সমাধিত। জেলা প্রশাসক এম.এ মান্নান ও ফজলে কবিরের কাছ থেকে সমাজের দুর্দশা গ্রস্থ ও অবহেলিত এবং দুঃখ কষ্টে পীড়িত কোন মানুষ কখনও কিছু আবদার করে খালি হাতে ফিরে যায়নি।
অগণিত অবহেলিত মানুষের চিকিৎসা, পড়াশুনার ব্যবস্থা এমনকি অসহায় মানুষের বিবাহ সাদীতে তাদের পাশে থেকে যথাসাধ্য সহযোগীতা এবং যথাসাধ্য দুঃখ বেদনা লাগবের ত্রুটি হয়নি তাদের। তদোপরি এলাকার জনগণ পেয়েছে
প্রশাসনিক ন্যায় বিচার। ফজলে কবির কিশোরগঞ্জে একটি অনুষ্ঠানে আসবেন, এই কথা জানাজানি হওয়ার পর এলাকার সকল স্তরের মানুষের মাঝে অভূতপূর্ব আনন্দ উৎসাহের সৃষ্টি হয়। আগের দিন ০৭/০৭/২০১৭ ইং শুক্রবার রাত ৯ টার দিকে ফজলে কবির কিশোরগঞ্জ সাকির্ট হাউজে পৌঁছলে ফজলে কবির কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোঃ আজিমুদ্দিন বিশ্বাস সহ জেলা প্রশাসনের সকল শ্রেণীর কর্মকর্তাগণ যেভাবে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানিয়ে বরণ করে তেমনিভাবে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক, জেলা উপজেলায় কর্মরত কর্মকর্তা, কর্মচারীরাও অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করে থাকে। সেখানে ছিল না মন্ত্রী এমপিদের বরণের মতো রাজনৈতিক নেতা কর্মিদের হৈ, হৈ, রৈ, রৈ ও ঠেলা ধাক্কার অবস্থা। তাকে বরণের সময় সাকির্ট হাউজ ছিল আনন্দের অশ্রুধারা। তিনিও হাঁসিমুখে সকলকে আন্তরিকভাবে বরণ করে নেন। তম্মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা তাদের প্রতিষ্ঠানে ক্ষণিকের জন্য নেয়ার আবদার জানিয়ে থাকে। যে দৃশ্য অভূতপূর্ব, অম্লান ও যা ভুলার নয়। এমনিভাবে পরের দিন ০৮/০৭/২০১৭ ইং শনিবারও শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে সাক্ষাৎ পর্ব ও কুশলাদি বিনিময় করে প্রেসক্লাবের ৫০ বছর পূর্তি উৎসব অনুষ্ঠানে তিনি যোগদান করেন।
সেখান থেকে ফিরে এসে তিনি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বিভিন্ন ব্যাংকের স্থানীয় ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে সভায় মিলিত হন। তৎপরবর্তী সময় এত ব্যস্ততার মাঝেও কালেকটরেট কর্মচারী ক্লাবের নব নির্বাচিত কর্মকর্তা ও সাধারণ কর্মচারীদের সাথে জেলা প্রশাসকের অফিস কক্ষে মত বিনিময়ে মিলিত হন। কালেকটরেট কর্মচারী ক্লাবের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে মত বিনিময় ও সাক্ষাৎ পর্বে তিনি যেমন চিরচেনা কর্মকর্তা, কর্মচারীদের দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে যান, তেমনি কালেকটরেটের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও আনন্দে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে। সেই মত বিনিময় ও সাক্ষাৎপর্বে ছিল না কোন আড়ম্বর ও অকৃত্রিমতার চাপ। তিনি তাদের সাথেই একসময় প্রায় দুই বছরেরও অধিক সময় জেলায় একসাথে কাজ করেছেন। সেই সময় কালেকটরেট কর্মচারী ক্লাবের সভাপতি খাদেমুল ইসলাম, সহ-সভাপতি হাসান মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, শংকর ঠাকুর সহ মিজানুর রহমান, আঃ কাদির, মহসিন, মালাই উদ্দিন ও অন্যরা তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও ভালোবাসার মাধ্যমে বরণ করে থাকে।
সেই সময়ও জেলা প্রশাসকের কক্ষে এলাকার শ্রেণী পেশার মানুষসহ সাধারণ মানুষ তাকে একনজর দেখার জন্য ভীড় করে থাকে। তিনি যখন ব্যাংকারদের সাথে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সভা করতে ছিলেন তখনও জেলা প্রশাসনের অফিস লন কানায় কানায় মানুষের উপস্থিতির কমতি ছিল না। ব্যাংকারদের এর সাথে মত বিনিময়কালে ঋণ খেলাপীদের কাছ থেকে ঋণ আদায় করার ব্যাপারে যেমনি তিনি পরামর্শ দেন, তেমনি ক্ষুদ্র, প্রান্তিক চাষী এবং হাওড় অঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্থ সাধারণ কৃষকরা যেন কোন অবস্থাতে বিড়ম্বনার শিকার না হয় এ ব্যাপারেও সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য ব্যাংকারদের প্রতি নিদের্শনা প্রদান করে থাকেন বলে জানা যায়। ব্যাংকারদের অনুষ্ঠানে উপস্থিত কিশোরগঞ্জ মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ম্যানেজার আবুল কাশেম খন্দকারের কাছ থেকে জানা যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর মহোদয়ের নির্দেশনা ও বক্তব্য ব্যাংকারদের অনুপ্রানিত, সময়োপযোগী ও মাইল ফলক হিসেবে মনে রাখার মতো। তিনি যখন জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ব্যাংকারদের সভা ও কালেকটরেট কর্মচারীদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ পর্ব শেষে বিদায় নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিচ্ছিলেন তখনও শ্রেণী পেশার মানুষ, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা কর্মচারীগণ আরেকবার হাত মিলানোর জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠে। বিদায়ের সময় অনেকেই বলেছিল “যেতে নাহি দিব, তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়”। অনেকেই রবীন্দ্রনাথের “পোষ্ট মাষ্টার” গল্পে রতন যেমন বলতে ছিল “দাদা বাবু যদি আবার ফিরে আসেন”। অনেকের মাঝে এমন অভিব্যক্তির সুর যে দানা বাঁধেনি তা নয়। অনেকেই অনুচ্চারিত মনে পোষ্ট মাষ্টার গল্পের রতনের মতো হয়তো বলতে ছিল আমাদের প্রাণ প্রিয় জেলা প্রশাসক যদি আমাদের মাঝে আবার ফিরে আসে। যদিও হয়তো অনেকেই জানেনা ইচ্ছা থাকলেও তিনি আর জেলা প্রশাসক হিসেবে কিশোরগঞ্জে ফিরে আসার সুযোগ নেই। কারণ তিনি এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর। যার দায়িত্ব কতর্ব্য ও পদবী অনেক ওপরে অধিষ্ঠিত। ঘুরে ফিরে বার বার একই কথা মানুষ মানুষের জন্য কিছু করলে তাকে সহজে ভুলে যায় না। সমাজে অকৃতজ্ঞ, বজ্জাত, হিংসাপরায়ন মানুষ থাকলেও যুগে যুগে কৃতজ্ঞতা জানানোর মানুষের পাল্লা আজো
ভারী। ফজলে কবির কিশোরগঞ্জ এসে সকল শ্রেণী পেশার মানুষের যে অকৃত্রিম ভালোবাসা, ফুলেল শুভেচ্ছা নিয়ে গেছেন এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার মতো অনেক কিছু রয়েছে।
দেশের ছোট বড় সরকারী কর্মকর্তাগণ যদি এমনিভাবে এম.এ মান্নান ও ফজলে কবিরের মতো ন্যায়, নিষ্টা, সততা ও আদর্শ দিয়ে মানুষকে ভালোবাসে তবে সমাজে তাদের মর্যাদা যেমনি গৌরবোজ্জল তেমনি প্রশংসীত হওয়ার কথা। আর যদি ক্ষমতায় ও গুরুত্বপূর্ণ সরকারী পদে থেকে মানুষকে মানুষের মতো মনে না করা হয়, অধস্তন কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে তুচ্ছ, তাচ্ছিল্য মনে করা হয়। অফিসের লালবাতি জ্বালিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প গুজব ও বেরসিক সময় কাটিয়ে সময়ের অপব্যবহার করে সময় হওয়ার আগে ভাগেই অফিস ত্যাগ করা হয়। তবে তাদের ব্যাপারে কোন প্রতিবাদ না হলেও ভালোবার্তা বয়ে আনার সুযোগ পরাহত। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ফজলে কবিরের কিশোরগঞ্জে আগমন ও বিদায় বেলায় যে অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে তেমনি এক সময়ের প্রায় জেলা প্রশাসক বা অনেক বড় মাপের কর্মকর্তা হিসেবে কেহ জেলায় আসলে বা চলে গেলে মানুষ খবরই রাখেনা। এটাকে আমলনামা এবং কৃতকর্মের দুর্ভাগ্যজনক ফলাফল বলে অনেকেই মনে করে থাকে। জানা যায় কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক হিসেবে এম.এ মান্নান ও জেলা প্রশাসক হিসেবে ফজলে কবির কার্যশেষে কিশোরগঞ্জ থেকে অন্যত্র পোষ্টিং নিয়ে চলে যাওয়ার সময় তাদের বাস ভবনে যেমনি সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, শিক্ষক শিক্ষিকা, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সাধারণ মানুষ যেভাবে অশ্রুসিক্ত হৃদয়ে বিদায় জানায় তা যুগ যুগ স্মরণীয় হয়ে থাকার কথা।
ফজলে কবির কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক থাকাকালীন এক সময় গলায় দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হলে, তা জেনে জেলার বিভিন্ন মসজিদে রোগমুক্তির জন্য সর্ব শক্তিমান আল্লাহর দরবারে দোয়া প্রার্থনা করা হয়। তেমনিভাবে অনেকেই তার রোগ মুক্তির জন্য নিজ উদ্যোগে দোয়ার ব্যবস্থা করে থাকে। অনেকেই তাহাকে বিদেশে গিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে চায়। কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন সহ জেলার অন্যান্য উপজেলার কর্মকর্তা কর্মচারীরা সাহায্যের হাত বাড়াতে চায়। তিনি বলতেন “আপনারা আমার জন্য দোয়া করলেই ইনশাল্লাহ আমি ভালো হয়ে যাব”। আল্লাহর কাছে আপনাদের দোয়াই যথেষ্ট। কিন্তু দেখা যায় সর্বশক্তিমান আল্লাহর রহমতে যেমনি তিনি আরোগ্য লাভ করেছেন, তেমনি সচিব হিসেবে অবসরে যাওয়ার পরও তিনি দেশের গৌরবোজ্জল মর্যাদা পূর্ণ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।
কৃতকর্ম, মানুষের দোয়া ও ভালোবাসা মানুষকে মর্যাদার শীর্ষে নিতে পারে এর বড় উদাহরণ বর্তমান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ফজলে কবির। মানুষকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য মনে না করে ন্যায়, নীতি, আদর্শ নিয়ে সরকারী কর্ম পরিসর সহ সকল স্তরের মানুষের ফুলেল শুভেচ্ছা ও ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে এমনিভাবে জেলা প্রশাসক এম.এ মান্নান ও জেলা প্রশাসক ফজলে কবিরের মতো ব্যক্তিত্বের আবির্ভাব যেন যুগে যুগে দেশ, জাতি, জনগণ উপকৃত হয়। ইহাই জন প্রত্যাশা।
এ.কে.এম শামছুল হক রেনু
লেখক কলামিষ্ট
< Prev | Next > |
---|