স্টাফ রিপোর্টার: সিরাজগঞ্জের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। কমে যাচ্ছে যমুনাসহ অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানি। ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি কমেছে ১৯ সেন্টিমিটার। ফলে নতুন করে কোনো এলাকা প্লাবিত হয়নি। অনেক অঞ্চল থেকে বন্যার পানি নেমে যাচ্ছে।
সোমবার দুপুরের দিকে সিরাজগঞ্জ হার্ডপয়েন্ট এলাকায় যমুনার পানি প্রবাহ ১৩.৮৩ সেন্টিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে। তবে এখনও বিপদসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যমুনার পানি। স্বাভাবিক প্রবাহ ১৩.৩৫ সেন্টিমিটার। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি কমেছে ১৯ সেন্টিমিটার। দুই একদিনের মধ্যে নিম্নাঞ্চলের পানিও নামতে শুরু করবে বলেও জানান তিনি।
প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম জানান, গত রোববার সন্ধ্যায় বাহুকা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙনের মুখটি বন্ধ করা হয়েছে। এটি আরও শক্তিশালীকরণের কাজ চলছে। ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আবদুর রহিম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে কোনো এলাকা বা বাড়িঘর প্লাবিত হয়নি। তবে যেসব মানুষ বন্যা কবলিত হয়েছেন তাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে ৩শ’ ৬৩ মেট্টিক টন চাল ও ৯ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে বলেও এই ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা।
এদিকে, সিরাজগঞ্জে নির্মাণাধীন নদী তীর রক্ষা বাঁধের ভাঙন তিন দিনের চেষ্টার পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। গত রোববার সন্ধ্যার আগে বাঁধটির ভাঙ্গনের স্থান পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয় বলে জানান সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার রতনকান্দি ইউনিয়নের বাহুকা চৌধুরীবাড়ি এলাকায় নির্মাণাধীন রিং বাঁধের ২০ মিটারের মত অংশ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে থাকে। ওইদিন রাত ২টা থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের ৪৫ সদস্যের একটি দল বাঁধ সংস্কারে কাজ শুরু করে। গত রোববার রাতে সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, পানি প্রবাহ ও ভাঙ্গন বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আর আতঙ্কের কিছু নেই।
আগামী কয়েক দিন কাজ চালিয়ে বাঁধটিকে আরও ‘শক্তিশালী’ করা হবে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই কর্মকর্তা। পাউবো কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণেই এই বাঁধে ভাঙন দেখা দেয় বলে শুরু থেকেই অভিযোগ করে আসছে ভাঙনের কারণে প্লাবিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা। বাধ ভাঙার পর আশপাশের কমপক্ষে ১০টি গ্রামে পানি ঢুকে ১০ হাজার মানুষ এবং এলাকার রাস্তাঘাট, বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এদিকে পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম ভাঙন কবলিত বাঁধটি পরিদর্শনের জন্য রাতে সিরাজগঞ্জ এসে পৌঁছেছেন। গতকাল সোমবার সকালে তারা দুজন ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধটি ঘুরে দেখেন। বাঁধ পরিদর্শনের পর তারা কাজিপুরে অন্য একটি প্রকল্প পরিদর্শনে যাবেন বলে তথ্য দিয়েছেন সদর থানার ওসি হেলাল উদ্দিন।
পুরাতন নদীতীর রক্ষা বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় চলতি বছরের মে মাসে ২ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৭৪০ মিটার দীর্ঘ রিং বাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যে বাঁধের ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
< Prev | Next > |
---|