rental elecস্টাফ রিপোর্টার: সরকার আবারো ব্যয়বহুল রেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্পে ঝুঁকছে। মূলত বিদ্যুৎ খাতের বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের স্থবিরতার কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার। কারণ কয়লাকে প্রধান জ্বালানি ধরে বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনা করা হয়েছিল। ২০১৭-১৮ সালের মধ্যে ওই মহাপরিকল্পনা অনুসাওে বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালু হলে স্বল্পমেয়াদের তেলভিত্তিক ছোট রেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো বন্ধ করে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু সরকারের ওই পরিকল্পনা সফলতার মুখ দেখেনি। বরং কয়লা ও গ্যাসভিত্তিক বড় বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে স্থবিরতা বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার আবারো ব্যয়বহুল তেলভিত্তিক ছোট রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দিকে ঝুঁকছে। কারণ সরকারের হাতে এখন ওই ব্যয়বহুল রেন্টাল ছাড়া সরকারের হাতে আপাতত আর কোনো বিকল্প নেই। বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ২০১০ সালে বিদ্যুৎ খাতের মাস্টারপ্ল্যান প্রণীত হয়। বলা হয়েছিল ২০১৭ সালে ৫৫ শতাংশ বিদ্যুৎ আসবে গ্যাস থেকে, ২৪ শতাংশ আসবে কয়লা থেকে এবং তেল থেকে আসবে ১৫ শতাংশ বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুসারে বর্তমানে গ্যাস থেকে আসছে ৬২ শতাংশ, তেল থেকে আসছে প্রায় ৩০ শতাংশ। আর কয়লা থেকে আসছে মাত্র ২ শতাংশ বিদ্যুৎ। অর্থাৎ কয়লাভিত্তিক প্রকল্পগুলো একপ্রকার স্থবির। নানা কারণে সেগুলো বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। নির্ধারিত মেয়াদে কোনোটিই চালু হয়নি। মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করতে চায়। তার মধ্যে ৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ কয়লা থেকে উৎপাদন করার কথা। কিন্তু ৩টি প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন ছাড়া বাকি কয়লাভিত্তিক বড় প্রকল্পগুলোর কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে সরকার আবারো মহাপরিকল্পনায় পরিবর্তন আনছে। এবার এলএনজিকে প্রাধান্য দিয়ে মহাপরিকল্পনা সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ আমদানি করা এলএনজি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।

সূত্র জানায়, বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে সরকার চলতি বছর দেশের ১০ জেলায় প্রতিটি ১০০ মেগাওয়াটের ১০টি ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করার পরিকল্পনা নিয়েছে। নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর, নোয়াখালী, বাগেরহাট, বগুড়া, জামালপুর, ফেনী, মেঘনাঘাট, ঠাকুরগাঁও, রংপুর ও শান্তাহারে ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো স্থাপন করা হবে। ইতিমধ্যে ৬টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন পেয়েছে। বাকিগুলোর অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন। ওই প্রকল্পগুলো দর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। তাতেও আগামী দুই বছরের চাহিদা পূরণ নিয়ে সংশয় রয়েছে। তাই আরো ৩ হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। তার মধ্যে ১৭শ' মেগাওয়াটের জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। যার মধ্যে ৭০০ মেগাওয়াট হবে বার্জ মাউন্টেড বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কেন্দ্রগুলো বিনা দরপত্রে বিদ্যুৎ-জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বিশেষ আইনের মাধ্যমে নির্মাণ করা হবে। তার মধ্যে কক্সবাজারে ২০০ মেগাওয়াট, ময়মনসিংহে ২০০ মেগাওয়াট এবং চাঁদপুর, নওয়াপাড়া ও বাগেরহাটে ১০০ মেগাওয়াটের বার্জ মাউন্টেড বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। তাছাড়া চট্টগ্রামের মিরসরাইতে ৩০০ মেগাওয়াট, ময়মনসিংহের ভালুকাতে ২০০ মেগাওয়াট এবং মাগুরা, যশোর, লালমনিরহাট, নওগাঁর নিয়ামতপুর ও জয়পুরহাটে ১০০ মেগাওয়াটের তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। অন্য এলাকার চাহিদার ওপর ভিত্তি করে বাকি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সরকার চাইছে আগামী বছরের মধ্যেই কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন শুরু করতে। ইতিমধ্যে প্রায় দুই ডজন কোম্পানির ৬০টির মতো বিদ্যুৎ কেন্দ্রেরর প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে জমা পড়েছে। তার মধ্যে ইউনাইটেড পাওয়ার মোট এক হাজার ৩৫০ মেগাওয়াটের ৮টি প্রকল্পের প্রস্তাব জমা দিয়েছে। আরেক বড় কোম্পানি সামিট গ্রুপ ৯৫০ মেগাওয়াটের ৫টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রস্তাব দাখিল করেছে।

সূত্র আরো জানায়, গ্যাস এবং কয়লাভিত্তিক স্থায়ী ও বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু না হলে গ্রাহকরা মানসম্মত বিদ্যুৎ সেবা না পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একই সাথে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয়ও কমবে না। বর্তমানে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম। তাই সরকার তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকেই ঝুঁকছে। কিন্তু তেলের দাম বেড়ে গেলে দেশের অর্থনীতিতে চাপ বাড়বে। বর্তমানে সরকার যেসব বিদ্যুৎ প্রকল্পের অনুমোদন দিচ্ছে সেগুলো তেলভিত্তিক ছোট প্রকল্প এবং ব্যয়বহুল। বেসরকারি ওসব কেন্দ্র থেকে সরকারকে বিদ্যুৎ কিনতে হবে অনেক বেশি দামে। আর জাতীয় গ্রিডে যতদিন রেন্টাল বিদ্যুৎ যোগ হবে, ততদিন ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়তে থাকবে। কারণ বেসরকারি ব্যয়বহুল ওই বিদ্যুৎ বেশি দামে পিডিবিকে কিনতে হয়। ফলে গ্রাহক পর্যায়ে ক্রমান্বয়ে দাম বাড়ানো ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। মূলত বর্তমান সরকারের আমলেই বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু ছোট রেন্টাল বিদ্যুতের বহু প্রকল্প চালু হলেও ব্যয়সাশ্রয়ী বড় বড় প্রকল্প তেমন চালু হয়নি। বিশেষ করে কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদনে পিছিয়ে পড়েছে সরকার।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ সচিব আহমদ কায়কাউস জানান, বড় প্রকল্পগুলো সময়মতো চালু হচ্ছে না। তাই তেলভিত্তিক ছোট বিদ্যুৎ কেন্দ্র ছাড়া আপাতত কোনো বিকল্প নেই।
অন্যদিকে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যে পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছিল, তার মধ্যে কয়লাভিত্তিক সব কেন্দ্র চালু হবে না। সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ভবিষ্যতে চালু হতে পারে। সেজন্য সরকার বিকল্প হিসেবে এলএনজির কথা চিন্তা করছে।

সাম্প্রতিক