এ.কে.এম শামছুল হক রেনু
বিশ্বে প্রায় সময়ই যেমনি কিছু অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটে থাকে, তেমনি কিছু রাজা, বাদশাহ, প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও জমিদার থেকে শুরু করে শাসন প্রশাসন সহ বিভিন্ন পর্ষদে ক্ষমতাসীন মানুষ নামের ব্রেকেটে বন্দী কিছু অদ্ভুত মানবের দৃশ্যপট ঘটে থাকে। তাদের সংখ্যা যাহাই হোক না কেন, ওরাই সারা বিশ্বে চাঞ্চল্য ও তীর্যক সমালোচনার সৃষ্টি করে থাকে। যেমন বর্তমান বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, উত্তর কুরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এমনিভাবে একসময় উগান্ডার প্রেসিডেন্ট ইদি আমিন এমন কিছু কাজ করে সারা বিশ্বে আলোচিত ও সমালোচিত হয়ে ছিলেন। এ প্রসঙ্গে হালাকু খান, নাদির শাহ, তৈমুর লং, হিটলার, মুসোলিনী, জার, চেংগিস খান, চিয়াং কাইশা, চসেস্কু, টিক্কা খান, ইয়াহিয়ার নামকেও বাদ দেয়া যায়না। ব্রিটিশ আমল থেকে এ পর্যন্ত নিজের স্বার্থ হাসিল ও ক্ষমতার জন্য যে সমস্ত রাজা, বাদশাহ, রাষ্ট্রের কর্ণধার ও জমিদারদের মধ্যে যারা ইতিহাসের নিকৃষ্টতম অবয়বে আসিন হয়েছে, সংখ্যানুপাতে তাদের আমল নামাকেও কম করে দেখার সুযোগ একেবারেই পরাহত। ৭০ দশকের আগে তদানীন্তন পাকিস্তান আমলে এ দেশের শহর, বন্দর ও হাট বাজার ফুটপাতে এক সময় ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান, তুরস্ক ও সৌদির অগনিত নারী পুরুষ চাকু, কেচি, আতরদানী, সুরমা, আতর, হালুয়া, খেজুর, খুরমা ও বিভিন্ন প্রসাধীন সামগ্রী বিক্রী করতে দেখা যেত। এমনকি কাবুলী ওয়ালাদের বাকিতে হালুয়া বিক্রী নিয়ে রয়েছে অজস্র অমানবিক ঘটনা। ওরা বাকিতে হালুয়া বিক্রী করার পর ক্রেতার মৃত্যু হলে, মৃত ব্যক্তির কবরে এসে লাঠি দিয়ে আঘাত করত এবং গগণ বিদারী চিৎকার করে বলতো হে মৃত অমুক “হালুয়াকা রুপিয়া দো”। এরপর সৌদি আরব সহ ইরাক, ইরান, কুয়েত, বাহরাইন, আরব আমিরাত ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের প্রভূত তেলের সন্ধ্যান মিললে ওরা আস্তে আস্তে এ দেশে আতর, চশমা, চাকু, কেচি, হালুয়া বিক্রী ও ফেরী ছেড়ে দিয়ে নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করে।
আজ সেই সমস্ত দেশে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার হতে প্রচুর লোক কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে গমন করে থাকে। অনেকের ধারণা যখন এক সময় মধ্যপ্রাচ্য সহ অন্যান্য দেশে তেল সম্পদ শেষ হয়ে পড়বে এবং ওরা বেঁহুশ থেকে সজাগ হবে, তখন ওরা আবার বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফেরি করে আবার এগুলো বিক্রী করবে। সেই ভবিষ্যৎ হয়তোবা অনেক দুরে নয়। কিন্তু দেখা যায় সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ মাসব্যাপী জাঁকজমকপূর্ণভাবে এশিয়া সফরে বেরিয়ে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ব্রুনাই ও চীন সফর করেই নাকি ঘরে ফিরবেন। চীন থেকে ভারত মহাসাগরিয় দ্বীপে মালদ্বীপ নাকি যাওয়া হচ্ছে না। বিদেশ সফরে বেরিয়ে এসে প্রথমেই ইন্দোনেশিয়া সফরকালে
বিশেষ বিমানে করে শত শত লোক লষ্কর বুঝাই করে সাথে নিয়ে আসে অত্যাধুনিক গাড়ীর বহর, ৪৬০ টনের মতো রসদ সামগ্রী ও মাল সামানা। যা গোটা বিশ্বকে যেমনি তাক লাগিয়েছে এক সময়ের উগান্ডার প্রেসিডেন্ট (ঐড়ঃ যবধফবফ নষধপশ সধহ) হট হেডেড ব্ল্যাকম্যান বা ব্ল্যাক ম্যাড খ্যাত ইদি আমিনকেও হার মানিয়েছে। এটাকে দুনিয়ার মানুষ সমালোচনার দিকে দেখলেও এতে সৌদি বাদশাহর টনক নড়েনি। বরং সৌদি বাদশাহ ভালোভাবেই বিদেশ সফরে এসে শান শৌকতে দিন কাটাচ্ছেন। জানা যায়, একসময় এক সৌদি যুবরাজ একস্থান থেকে অন্যস্থানে তার পোষা বাজপাখি নেয়ার ব্যাপারে একটি বিশেষ বিমান ভাড়া করে। তা দেখে অনেকেই আর্শ্চয হয়ে পড়ে। অন্য একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, পৃথিবীতে যত বিলাস বহুল হোটেল রয়েছে তার সিংহভাগ গ্রাহক হচ্ছে এরাবিয়ানরা। তাই বলা হয়, বিলাসিতার অপর নাম এরাবিয়ানরা।
এ প্রসঙ্গে একটি গল্প এ নিবন্ধে উল্লেখ করা হলো। কোন এক সময় এমনিভাবে এক জমিদার সৌদি বাদশাহর মতো তার পাইক পেয়াদা বরকন্দাজ স্ত্রী, পুত্র, পরিজন, বন্ধবান্ধব, গুনগ্রাহী, চাটুকার ও শিল্পীসহ বিশাল হাতীর বহর নিয়ে সফরে বেড় হয়। সেই সময় ছিল না বিমান, হেলিকাপ্টার, পাজারো, লিমুজিন ও উন্নত মানের গাড়ী। সফরে গিয়ে জমিদার যে দিকেই যেত বিশাল হাতীর বহর প্রজাদের ফসল ক্ষেত মাড়িয়ে যেভাবে উঠতি ক্ষেতের ফসল নষ্ট করতো, তেমনি দুই পাশের অসংখ্যা ফলন্ত কলাগাছ, ফলফলাদির বাগান নির্মূল করে দিত। তাতে যেমন প্রজাদের ভোগান্তির শেষ হতনা, তেমনি জমিদারের সাথে থাকা তার অগণিত লোকজন, তীর ধনুক ও অশ্বারোহী বাহিনী এবং হাতীর বহরের ন্যায় মানুষের ফলফলাদি যে যেভাবে পারে বিনা বাধায় ভক্ষণ করা সহ নিয়ে যেত। একদিন সম্রাজ্যের রাজার সাথে ঐ জমিদারের মত বিরোধ দেখা দিলে রাজা জমিদারকে তার জমিদারী হতে বাদ দিয়ে দেয়। তা জেনে জমিদার ও তার তল্পী বাহকদের বিরুদ্ধে জমিদারের সমস্ত অত্যাচারীত প্রজা এক হয়ে জমিদারের প্রাসাদ রাগে, ক্ষোভে ও দুঃখে পুড়িয়ে দিয়ে, তার স্ত্রী পুত্র পরিজন, পাইক পেয়াদা ও জমিদারের জি হুজুর মার্কা খান সামাদেরকেও প্রজারা রেহাই দেয়নি। তেমনিভাবে জমিদারের বিশাল হাতির পালে আঘাত করলে হাতিগুলো দিগি¦দিক এদিক সেদিক ছুটাছুটি শুরু করে যেমনি প্রাণে রক্ষা পায়, তেমনি পালের বহরের কিছু হাতী প্রজাদের সাথে সামিল হয়ে জমিদারের অবশিষ্ট সবকিছুকে পায়ে পিষে ধুলিসাৎ করে দেয়। তখন বেঁচে যাওয়া জমিদারকে হাতীর শোঁড় দিয়ে আছাড় দিয়ে মজা দেখে। এতে করে হাতীর নিকট থেকে প্রজারা জমিদারকে ছাড়িয়ে আনে। প্রজাদের উদ্দেশ্য ছিল, এই না মরা না বাঁচা অপরিনামদর্শী জমিদার যেমন তার জীবদ্দশাতেই পরিণতি দেখে যেতে পারে।
এক সময় যেমন ব্রিটিশ ও কয়েক বছর আগে সোভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমানে রাশিয়া) বিশ্বে বি¯তৃতি ঘটিয়ে যেমন বেশ আগেই পিছু হটেছে, তেমনিভাবে তেল সম্পদের সুবাদে যেভাবে সৌদি বাদশাহ আনন্দ উল্লাস ও অবসর যাপনের জন্য সফরে বেড়িয়েছে, এটাকে নিয়েও অনেকেই জমিদারের পরিণতির মতো সৌদি বাদশাহর ভবিষ্যৎ নিয়েও চিন্তা করতে কুন্ঠাবোধ করছেনা।
ইয়েমেন, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান ও নাইজেরিয়ায় যে সময় চরম দুঃখ, কষ্ট, এক বেলা আহার, ঔষধ ও বস্ত্রের অভাবে সে সমস্ত দেশের নারী পুরুষ ও দেশের শিশুরা অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে, এই মুহুর্তে বিশ্বের বিত্তশালী দেশের বাদশাহ এদিকে না তাকিয়ে যেভাবে আনন্দ উল্লাস করার জন্য এত বড় বিশাল বহর, ৪৬০ টনের রসদ সামগ্রী, মাল সামানা ও অন্যান্য জিনিষ পত্র নিয়ে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে ফূর্তি আমোদের জন্য বেড়িয়েছেন এবং বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার অভিজাত অবসর যাপন কেন্দ্রে রয়েছেন, তার জন্য তিনি দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের মানুষের কাছে নানাভাবে সমালোচিত হচ্ছেন। বাদশাহর নিজ দেশে এ ব্যাপারে ক্ষোভ থাকলেও পরিণতির কথা জেনে সৌদি আরবের মানুষ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে পারেনি। জানা যায়, সৌদি বাদশাহ ও বাদশাহর পরিবারের বিরুদ্ধে কোন সমালোচনাতো দুরের কথা বিপক্ষে নাকি কোন কথা বলাই মস্ত বড় অপরাধ। যার শাস্তি নাকি শিরচ্ছেদ। তাছাড়া বাদশাহর বিরুদ্ধে বা রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে কেহ কোন প্রতিবাদ করলে নাকি বাদশাহর বাহিনী তাদের কে এমনভাবে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়, যাদের কোন খুঁজ খবর পাওয়া যায়না। সৌদি আরবের মক্কা নগরীতেই বিশ্ব মানবতার মহামানব, আখেরী জামানার নবী, আমাদের প্রিয় নবী, আল্লাহর হাবীব হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জন্মভূমি। বিশ্ব মানবতার জন্য যার অবদানের তুলনা নেই। ওনার কারণেই আল্লাহ রাব্বুল আল আমীন দুনিয়া সৃষ্টি করেছেন। মানুষের সুখ শান্তির জন্য এত কিছুর সৃষ্টি করেছেন। তাই এ প্রসঙ্গটি অন্ততপক্ষে বিবেচনায় এনে আরাম, আয়েশ ও অবকাশ যাপনের সফরটি বাদ দেয়াকে সমীচিন বলে অনেকেই মনে করে থাকে। এ কাজটি শুধু তার ললাটেই কালিমা লেপন করেনি, তামাম দুনিয়ার মুসলীম দেশগুলোর রাজা, বাদশাহ, সম্রাট, প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি ও রাষ্ট্র নায়কদের মান, সম্মান, ইজ্জত ও জৌলুসকে কম খাটো করেনি। এমনিতেই মুসলমানদের উজ্জ্বল ভাবমূর্তিকে হেয় ও খাটো করার জন্য দুনিয়ার ইহুদি নাসারা সহ অনেক অমুসলীম দেশ মুসলমানদের বিরুদ্ধে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দ্বিধাবোধ করছে না। আর বাদশাহর এই চূতা ও দৃষ্টান্ত চক্রান্তকারীদের দাবার গুটিকে যথেষ্ট সামনে এগিয়ে দিয়েছে বলে অনেক বিশ্লেষকদের অভিমত হিসেবে প্রকাশ হচ্ছে। অনেকে বলেছেন, সৌদি বাদশাহ হিসেবে এত বড় বিশাল
বহর ও ৪৬০ টন রসদ সামগ্রী না নিয়ে যদি বিদেশ সফরে না বেড় হতেন তবে দুনিয়ার মানুষের কাছে হয়তো সমালোচিত হওয়ার কথা ছিল না।
১০/০৩/১৭ ইং শুক্রবার বিবিসি ও গার্ডিয়ানের খবরে জানা যায়, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান স্টেফান ও ব্রাইয়েন নিরাপত্তা পরিষদকে জানায় ইয়েমেন, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান ও নাইজেরিয়া চারটি দেশের অন্ততঃ দুই কোটি মানুষ চরম দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে। চলতি বছরে ১৪ লাখ শিশু খাদ্যাভাবে মারা যাবে বলে ইতোমধ্যে হুঁশিয়ারী করেছে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক জরুরী তহবিল ইউনিসেফ। ও ব্রাইয়েন আরো বলেন, এ বিপর্যয় মোকাবিলায় জুলাইয়ের মধ্যে সব মিলিয়ে ৪৪০ কোটি ডলার প্রয়োজন। জাতিসংঘ সৃষ্টি হওয়ার ১৯৪৫ সালের পর এটা এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় মানবিক বিপর্যয়। বর্তমানে চারটি দেশে দুই কোটি মানুষ ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত। এ মুহুর্তে সমন্বিত পদক্ষেপ না নেয়া হলে অসংখ্যা লোকজন না খেয়ে মারা যাবে। আরো বিপুল সংখ্যাক লোক রোগে ভুগবে এবং মারাত্মক রোগাক্রান্ত হয়ে মৃর্ত্যুর ঝুঁকিতে পড়বে। ভয়াবহ বিপর্যয় এড়াতে অনুদান সংগ্রহ করে ইয়েমেন, দক্ষিণ সুদান, সোমালিয়া এবং উত্তর পূর্ব নাইজেরিয়ার মানুষের নিরাপদে ও নির্বিঘেœ মানবিক ত্রাণ পাঠানোর আহবান জানিয়েছেন ও ব্রাইয়েন। গত মাসে জাতিসংঘের মহাসচিক আন্তোলিও সুতেরেসও একই তাগিদ করেছিলেন। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, ২০১৭ সালের জন্য জাতিসংঘ এ পর্যন্ত মাত্র ৯ কোটি ডলার ফান্ড পেয়েছে।
তথ্য ও সূত্রে আরো জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৬ মার্চ থেকে অব্যাহত সৌদি আগ্রাসনের কারণে এ চারদেশের মধ্যে সবচেয়ে শোচনীয় হয়ে পড়েছে ইয়েমেন। দেশটির ১ কোটি ৮৮ লাখ অর্থাৎ দুই তৃতীয়াংশের বেশী মানুষের ত্রাণ সহায়তার জরুরী প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। তাছাড়া একবেলা খাবার খেলে পরের বেলায় খাবার কি করে জুটবে, তা দেশটির ৭০ লাখ মানুষ জানেওনা। ইয়েমেনের ১ কোটি ৭১ লাখ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে বলে গত মাসেই ঘোষণা করেছে জাতিসংঘের তিন সংস্থা। ও ব্রাইয়েন বলেছেন, ইয়েমেনের ১ কোটি ২০ লাখ মানুষের সহায়তার জন্য ২০১৭ সালের জন্য ২১০ কোটি ডলারের প্রয়োজন। অথচ মাত্র ৬ শতাংশ ফান্ড জমা হয়েছে। ও ব্রাইয়েনের দেয়া তথ্যমতে দক্ষিণ ইয়েমেনের দুর্ভিক্ষ মানব সৃষ্ট। গত বছর যেখানে ১৪ লাখ মানুষের মানবিক সহায়তার প্রয়োজন ছিল, যেখানে চলতি বছর প্রায় ৭৫ লাখ মানুষের মানবিক সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়া সোমালিয়ায় ৬২ লাখ ও নাইজেরিয়ায় ২৬ লাখ লোক দুর্ভিক্ষ ও মহামারীতে আক্রান্ত।
জানা যায়, নিপীড়িত, অত্যাচারিত, বিপর্যস্ত, আদি মুসলীম রোহিঙ্গারা যেভাবে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে বেঁচে আছে, তাদের বেলাতেও সৌদি আরবসহ অন্যান্য প্রাচুর্যশীল মুসলীম দেশগুলো যেভাবে এগিয়ে আসার প্রয়োজন ছিল কিন্তু সেভাবে এগিয়ে আসেনি। তবে বাংলাদেশ মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশ হিসেবে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের ব্যাপারে চেষ্টা করে যাচ্ছে। অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থী মিয়ানমার থেকে অমানবিক অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে। বিত্তশালী মুসলীম দেশ হিসেবে সৌদি আরব সহ অন্যান্য দেশ দুনিয়ার সকল ধর্মের নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়ালে ইসলাম ধর্মের সুমহান আদর্শ, ঐতিহ্য, বিশ্বব্যাপী আরো সম্প্রাসারিত ও প্রশংসার উচ্চাসনে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। মানবিক বিপর্যয়ে দুর্ভোগে ও দুর্ভিক্ষে নিপতিত এসব দেশ সমূহের পাশে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, নির্বিশেষে সকলেরই এগিয়ে আসা উচিত। এ ব্যাপারে আমাদেরও উচিত যতটকু সম্ভব সরকারী বেসরকারী পর্যায়ে বাড়তি সকল প্রকার ব্যয়, কৃচ্ছতা করে তাদের পাশে দাড়ানো। মানুষ মানুষের জন্য। দুঃসময়ে সেবা, কল্যাণ, সাহায্য ও সহযোগীতার হাত বাড়ানোই মানব ধর্ম। ৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এ দেশের অসহায় মানুষের পাশে দুনিয়ার যে সমস্ত দেশ সাহায্য সহযোগীতার হাত বাড়িয়েছিল, তাদেরকে কোনদিন যেমন এদেশের মানুষ ভুলবেনা তেমনি যুগ যুগ ধরে তাদেরকে গভীরভাবে স্মরণ করবে। বর্তমানে অমানবিকভাবে যেভাবে ইয়েমেন, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান ও নাইজেরিয়ায় নারী, পুরুষ ও শিশু খাদ্যের অভাবে যেমনি বিপর্যস্ত যদি তাদের পাশে সৌদি আরব ও সৌদি বাদশাহ এগিয়ে আসে, তবে তাদের প্রতি বিশ্ববিবেকের জয়ধ্বনি ও তাদের দান, অনুদান ও মহানুভবতার তুলনা হবে বিরল।
এ.কে.এম শামছুল হক রেনু
লেখক কলামিষ্ট
< Prev | Next > |
---|