প্রতীকী ছবিস্টাফ রিপোর্টার: দেশের প্রতিটি জেলা এবং উপজেলায় মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। মূলত ইসলামী মূল্যবোধের উন্নয়ন এবং ইসলামী সংস্কৃতি বিকাশের উদ্দেশ্যেই সরকারের এই উদ্যোগ। সৌদি সরকার সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের সরকারকে সহযোগিতা করবে। সে লক্ষ্যে ইতিমধ্যে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণের লক্ষ্যে ৮ হাজার ৯৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করে অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকারের বিশেষ লক্ষ্য হচ্ছে ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতি প্রসারে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণ করা। সরকার চায় মসজিদগুলো ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে। ওসব মডেল মসজিদে নারী-পুরুষের আলাদা অজু করা ও নামাজ পড়ার ব্যবস্থা থাকবে। থাকবে গ্রন্থাগার, সম্মেলন কক্ষ ও গবেষণা কেন্দ্রও। তাছাড়া শিশুদের জন্যও শিক্ষা সুবিধা থাকবে। পাশাপাশি ওসব মসজিদে অতিথিশালা ও বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণ সুবিধাও রাখা হচ্ছে। একই সাথে মসজিদগুলোতে মৃতদেহ গোসল করানো এবং হজযাত্রী ও ইমামদের প্রশিক্ষণের সুবিধাও থাকবে। প্রতিটি মসজিদ একই মডেলের হবে।

৫ বা ৬তলা বিশিষ্ট ওসব মডেল মসজিদের জন্য জায়গা লাগবে প্রায় ৪০ শতক। আর প্রতিটি মসজিদ তৈরিতে প্রাথমিকভাবে সম্ভাব্য ব্যয় প্রায় সাড়ে ১৪ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। ওসব মসজিদ নির্মাণে ইতিমধ্যে ৮০ ভাগ জায়গা নির্বাচন করা হয়েছে। অধিকাংশ উপজেলায় বর্তমানে যেখানে ছোট মসজিদ রয়েছে কিন্তু জরাজীর্ণ এমন জায়গায় ওই মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হবে। বর্তমানে বিদ্যমান ওই জরাজীর্ণ ছোট মসজিদ ভেঙে সেখানে নতুন করে ওই মডেল মসজিদ তৈরি করা হবে। কোনো কোনো উপজেলায় উপজেলা কমপ্লেক্সের ভেতরের খালি জায়গায় করা হবে ওই মসজিদ। আবার কোনো কোনো উপজেলায় নাগরিকরা মসজিদের জন্য জায়গা দান করেছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে ওসব মসজিদ পরিচালিত হবে।

সূত্র জানায়, দেশজুড়ে মডেল মসজিদ নির্মাণে ৮ হাজার ৯৩ কোটি ৯২ হাজার টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। তার মধ্যে সৌদি আরব সরকার দেবে ৬ হাজার ৮৭৩ কোটি ৯১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। বাকি ১ হাজার ২১৯ কোটি ৯ লাখ ২৪ হাজার টাকা দেবে সরকার। চলতি বছর থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ওসব মসজিদের নকশাও চূড়ান্ত করা হয়েছে। বর্তমানে ওই নকশা স্থাপত্য অধিদফতরের ভেটিংয়ের অপেক্ষায় রয়েছে। আর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

সূত্র আরো জানায়, প্রধানমন্ত্রী গতবছরের জুনে সৌদি আরব সফরকালে সৌদি বাদশাহর সাথে আলোচনায় দেশব্যাপী মডেল মসজিদ নির্মাণের বিষয়টি তুলে ধরে সহযোগিতার প্রস্তাব করেন। সৌদি আরব সরকার শেখ হাসিনার প্রস্তাব গ্রহণ করেন। সফর শেষে দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী ওই মডেল মসজিদের নকশা তৈরিসহ সামগ্রিক বিষয়ে প্রস্তুতির নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মাধ্যমে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় আর্থিক সহযোগিতা চেয়ে পাঠালে সৌদি সরকার তাতে সম্মতি দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল জানান, মডেল মসজিদগুলো নির্মাণের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে। ইতিমধ্যে জায়গা নির্বাচনসহ বেশ কিছু কাজ এগিয়ে রাখা হয়েছে। এখন জাতীয় অর্থনৈতিক নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) অনুমোদন পেলে বাকি কাজ করা হবে।

সাম্প্রতিক