স্টাফ রিপোর্টার: সরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীর রাখার উদ্যোগ নিয়েছে। ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি তালিকাভুক্ত পণ্য মজুদ শুরু করেছে। সে লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়া থেকে ২ হাজার টন মসুর ডাল ও ২ হাজার টন ছোলা আমদানি করা হচ্ছে। পাশাপাশি স্থানীয় বাজার থেকে কেনা হচ্ছে ১ হাজার টন ভোজ্যতেল। সেজন্য টিকে গ্রুপের সাথে টিসিবির সমঝোতা চুক্তিও সই হয়েছে। স্থানীয় বাজার থেকে খেজুরও কেনা হবে। তবে তার পরিমাণ এখনো পরিষ্কার করা হয়নি। টিসিবি এবার আগেভাগেই রমজানের পণ্য মজুদের প্রস্তুতিত নিচ্ছে। নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীর রাখতে এবার শবেবরাতের পর দিন থেকেই টিসিবির কার্যক্রম শুরু করতে চাচ্ছে। সে লক্ষ্যে রাজধানীসহ সারাদেশে ১৭৪টি স্থানে ৫০ থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরত্বে দৈনিক ১ হাজার ৫০০ কেজি বা লিটার সমপরিমাণ টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হবে। যা ঈদের আগের দিন পর্যন্ত অব্যাহত রাখা হবে। টিসিবি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, টিসিবির আমদানি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া মসুর ডাল ও ছোলার প্রথম চালান চলতি মাসেই চট্টগ্রামে এসে পৌঁছাবে। দ্বিতীয় চালান আসবে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে। আর ভোজ্যতেল চাওয়া মাত্র সরবরাহ দেবে টিকে গ্রুপ। তাছাড়া আগেভাগেই নিশ্চিত করা হয়েছে টিসিবির চাহিদাকৃত চিনির নিরাপদ মজুদ। ওই লক্ষ্যে বছর কয়েক আগেই বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের সাথে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। রজমান মাসে সাধারণত গুটিকয়েক পণ্যের ওপরই ভোক্তার অতি নির্ভরতা তৈরি হয়।
সেজন্যই টিসিবির সংশ্লিষ্ট পণ্যের আগাম মজুদ গড়ে তোলার চেষ্টা থাকে। যাতে বেশি চাহিদার সুযোগ নিয়ে কোনো অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফা করতে না পারে এবং বাজারে পণ্যের ন্যায্যমূল্য বজায় থাকে। টিসিবির কার্যক্রম পরিচালনার তা-ই আসল উদ্দেশ্য। যদিও টিসিবি সাময়িক বিরতি দিয়ে বাজার পরিস্থিতি বুঝে সাধারণত তিন পণ্যের ওপরই কার্যক্রম চালিয়ে থাকে। সেগুলো হচ্ছে- চিনি, সয়াবিন তেল ও মসুর ডাল। তবে তার বাইরে প্রতি বছর রমজানে ছোলা ও খেজুরও বিক্রি করে। এছাড়া অত্যাবশ্যকীয় পণ্য পেঁয়াজের আপদকালীন সংকট তৈরি হলে টিসিবি পেঁয়াজ বিক্রিরও উদ্যোগ নেয়।
সূত্র জানায়, নিত্যপণ্যেও বাজার অস্থিতিশীলতা রুখতেই টিসিবি কাজ করে। সে লক্ষ্যে ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় পণ্যের মজুদ টিসিবি নিশ্চিত করেছে। তবে শুধুমাত্র টিসিবি পণ্য বিক্রি বাড়িয়েই বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না। কারণ তার সাথে বৈশ্বিক সংযোগ নিবিড়ভাবে জড়িত। সেখানে সরকার সর্বোচ্চ মনিটরিংয়ের মাধ্যমে বাজারকে সম্ভব সহায়ক রাখার চেষ্টা করবে। সে লক্ষ্যে রমজান বা সারাবছর বাজার স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকারের আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। কোন পণ্যের কতোটা ঘাটতি রয়েছে তা সঠিক মানদ- নির্ধারণ করে দেশে না থাকলে তার আগাম আমদানি অব্যাহত রাখার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। যাতে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বাজার অস্থির করতে পারবে না। তবে সেক্ষেত্রে টিসিবিরও সক্ষমতা থাকতে হবে। কারণ মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বাজার তার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ওঠা-নামা করে। মাঝে-মাঝে খুবই অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। তখন টিসিবি তৎপরতা না দেখাতে পারলে সাধারণ ভোক্তারা খুবই ভোগাস্তিতে পড়বে।
এ প্রসঙ্গে টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু সালেহ মোহাম্মদ গোলাম আম্বিয়া জানান, রমজানকে কেন্দ্র করে টিসিবির বিক্রয়যোগ্য পণ্যের বিপুল পরিমাণ মজুদ গড়ে তোলা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সে মজুদের কেনাকাটার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। খুব শিগগিরই সেই বাফার মজুদ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। কোনো অসাধু চক্র বাজার যাতে অস্থিতিশীল করতে না পারে ওই লক্ষ্যে টিসিবির মজুদ সরবরাহের মাধ্যমে স্থিতিশীল করার সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। কার্যক্রমের আওতায় টিসিবির পণ্যাদি বিক্রয়ে নিয়মিত বরাদ্দ তো থাকবেই। তার পাশাপাশি সরকারি ছুটির দিন বাদে সপ্তাহের বাকি দিনগুলোয়ও নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভ্রাম্যমাণ ট্র্যাকের মাধ্যমে রমজাননির্ভর টিসিবি পণ্য বিক্রি করা হবে।
< Prev | Next > |
---|