নাইম আবদুল্লাহ
altপ্র শান্ত মহাসাগর তীরে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসি বাংলাদেশীদের ৫০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম লেখক ও সাংবাদিকদের সংগঠন 'সিডনি প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া কাউন্সিল'র জমকালো অভিষেক সন্ধ্যা ও গালা ডিনার অনুষ্ঠিত হলো সিডনির চার তারকা খচিত নভোটেল ব্রাইটনের গ্র্যান্ড বলরুমে।

গত ৩০ এপ্রিল (রোববার) মাল্টিকালচারাল অস্ট্রেলিয়ান নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এই অভিষেক সন্ধ্যায় অস্ট্রেলিয়া প্রবাসি বাংলাদেশি সাংবাদিকদের ইতিহাসে সূচিত হলো আরেকটি নতুন অধ্যায়। এই প্রথম বাংলাদেশীদের কোনো অনুষ্ঠানে অষ্ট্রেলিয়ান সরকারের চার স্তরের উর্ধতন কর্মকর্তা, নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ ও ফেডারেল পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তা, নিউ সাউথ ওয়েলস প্রিমিয়ারের প্রতিনিধি, বিভিন্ন দূতাবাস প্রতিনিধি, বিরোধী দলীয় নেতা, মন্ত্রী, ফেডারেল এমপি, স্টেট এমপি, কাউন্সিলর, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলার, আইনজীবি, বুদ্ধিজীবি, লেখক, কবি, অষ্ট্রেলিয়ান মূলধারার বিভিন্ন চ্যানেলের সিনিয়র সাংবাদিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, মাল্টিকালচারাল সংগঠনের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ সহ বিএনপি, আওয়ামীলীগ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, জিয়া পরিষদ বিভিন্ন সামাজিক সমগঠনের শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

  • ডঃ এনামুল হক, সভাপতি - সিডনি প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া কাউন্সিল
  • মোহাম্মেদ আব্দুল মতিন, সাধারণ সম্পাদক - সিডনি প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া কাউন্সিল
  • রাশেদ শ্রাবন, কার্যকরী সদস্য - সিডনি প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া কাউন্সিল
  • ডঃ রতন কুণ্ডু, কার্যকরী সদস্য - সিডনি প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া কাউন্সিল

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার আধলে লাল-সবুজের আলোক-রশ্মি দিয়ে সাজানো নভোটেলের গ্র্যান্ড বলরুম ছিল কানায় কানায় পূর্ন। চার্লস স্টার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার ও কোর্স কো-অর্ডিনেটর এবং গবেষক শিবলি আবদুল্লাহর অসাধারণ উপস্থাপনায় সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে চোট্ট সোনামনি সামাহ আবদুল্লাহর সুরেলা কন্ঠে পবিত্র কোরআন থেকে সুরা হুজরাত এর সাংবাদিকতা সম্পর্কিত আয়াত-৬ এবং মাল্টিকালচারিজম সম্পর্কিত আয়াত-১৩ তেলওয়াত ও তরজমার মধ্য দিয়ে ভাব-গাম্ভীর পরিবেশে 'সিডনি প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া কাউন্সিল'র' অভিষেক সন্ধ্যার শুভ সূচনা করা হয়। এরপর বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংগীতের অডিও এবং ভিজুয়াল পরিবেশন করা হয়।

শুরুতে সিডনি প্রবাসী স্থানীয় শিল্পী সৈয়দ আশিক সুজন বাপ্পা মজুমদারের গান পরিবেশন করেন। পরেও তিনি অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ে গান পরিবেশন করে স্রোতাদের সুরের বন্যায় বিমোহিত করে রাখেন।

অভিষেক সন্ধ্যার সমন্বয়কারী সিডনি প্রেস ও মিডিয়া কাউন্সিলের কার্যকরী পরিষদের সদস্য রাশেদ শ্রবণের শুভেচ্ছা বক্তব্যের পর কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মেদ আব্দুল মতিন তাঁর স্বাগত বক্তব্যের শুরুতে বলেন, ‘এই পৃথিবীতে যতগুলো সফল ইতিহাস রয়েছে, তার চেয়েও বড় ইতিহাস রয়েছে সহযোগিতার ইতিহাস’। প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া কাউন্সিল গঠনের সূচনালগ্ন থেকে আজকের এই সফল 'অভিষেক সন্ধ্যা' পর্যন্ত যারা বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের প্রতি তিনি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানান।

তিনি আরো বলেন, ‘সাংবাদিকতার মানকে গ্রহনযোগ্য স্থানে পৌঁছে দিতে সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে একটি প্লাটফরম তৈরীর লক্ষেই ২০১৪ সালের গোড়ার দিকে নাইম আবদুল্লাহ এবং আমি অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক ও সাংবাদিকের জন্য একটি স্বতন্ত্র প্লাটফর্ম তৈরীর পরিকল্পনা গ্রহণ করি’। এই সময় তিনি সংগঠনটিকে বাস্তব রূপ দেয়ার জন্য সিডনি প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া কাউন্সিল’র সকল উদ্যোক্তা, সদস্য, কমিউনিটির বিশিষ্টজনদের কথা গভীর কৃতজ্ঞতা সাথে স্মরণ করেন। তিনি আরো বলেন, ‘আজকের পর থেকে কমিউনিটিতে আমাদের উপর দায়িত্ব আরো বেড়ে গেলো এবং তা পালনের জন্য আমি আপনাদের সকলের সহযোগিতা কামনা করছি’। এরপর কার্যকরী পরিষদের সদস্য ডঃ রতন লাল কুণ্ডু  অতিথিদের উপস্থিতি অবহিত করেন এবং তাঁদের উপস্থিতির জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

তারপর সিডনি প্রেস ও মিডিয়া কাউন্সিলের বিভিন্ন কর্মসূচির উপর তিনটি ডকুমেন্টারি উপস্থিত অতিথিদেরকে দেখানো হয়।
আলোচনা পর্বে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন, অস্ট্রেলিয়ার শ্যাডো সহকারী মিনিষ্টার ম্যাট থিস্টলথওয়েট, নিউ সাউথ ওয়েলস পার্লামেন্টের বিরোধী দলীয় উপনেতা মাইকেল ডেলি, নিউ সাউথ ওয়েলস প্রিমিয়ার পক্ষে লিবারেল পার্টির সংসদ সদস্য ম্যাক্সওয়েল বিলার্ড এম এল সি, এফ এম রেডিওর ব্রডকাস্টার প্রফেসর জিম থ্যাকার্ড, অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন এর আন্তর্জাতিক বিভাগের সাংবাদিক ডেভিড হুয়া, গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মোয়াজ্জেম হোসেন, ক্যান্টারবেরী সিটি কাউন্সিলের সাবেক কাউন্সিলর মাইকেল হাওয়ার্ট ও এ্যাবাসকার সভাপতি নাসিম সামাদ।

অনুষ্ঠানে লিবারেল পার্টির সংসদ সদস্য ম্যাক্সওয়েল বিলার্ড এম এল সি তার বক্তব্যের শুরুতেই এই অনুষ্ঠানে নিউ সাউথ ওয়েলস প্রিমিয়ার গ্লাডিস ব্যারেজিক্লিয়ান উপস্হিত হতে না পারার কারনে আন্তরিকভাবে দূঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমি ও একসময় মিডিয়াতে ছিলাম, সমাজে মিডিয়ার অবদান প্রশংসার দাবী রাখে। এই সময় তিনি নিউ সাউথ ওয়েলসের মাল্টি কালচারাল বিষয়ক কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরেন এবং সংগঠনটির সফলতা কামনা করেন।

অন্যদিকে নিউ সাউথ ওয়েলস পার্লামেন্টের বিরোধী দলীয় উপনেতা মাইকেল ডেলি সাংবাদিকদের সাথে রাজনীতিবিদদের সম্পর্কের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, সাংবাদিকরা সবসময় রাজনীতিবিদদের বন্ধু হয় না। গণমাধ্যমের ভূমিকার কারনণই রাজনীতিবিদরা ভাল পথে চলেন। তিনি সিডনি প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া কাউন্সিলের উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

শ্যাডো সহকারী মিনিষ্টার ম্যাট থিস্টলথওয়েট তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই সিডনি প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া কাউন্সিল পক্ষ থেকে এই ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, অস্ট্রেলিয়ান সমাজে আপনাদের ভূমিকার জন্য অভিনন্দন জানাই।

অন্যন্য আলোচকদের মধ্যে প্রফেসর জিম থ্যাকার্ড তার বক্তব্যে সাংগঠনিকভাবে কাজ করার উপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, এর ফলে জবাবদিহিতা তৈরি হয় এবং গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. মোয়াজ্জেম হোসেন সমাজে মিডিয়ার গুরুত্ব ও মাইগ্রেশন প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোকপাত করেন। তিনি প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া কাউন্সিল'র সকল সদস্যদের অভিনন্দন জানান। তিনি নিজে একাডেমিক না হলে পুরোদস্তুর সাংবাদিকই হতেন বলে জানান। এছাড়া তারলেখা বিভিন্ন আর্টিকেল নিয়ে কথা বলেন।

সিডনি প্রেস ও মিডিয়া কাউন্সিলের সভাপতি ডঃ এনামুল হক দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আজকে সিডনি প্রেসও মিডিয়া কাউন্সিল নামের যে নবীন প্লাট ফর্মটি নূতন যাত্রা করলো, অদূর ভবিষ্যতে আমরা অস্ট্রেলিয়ার মূলধারার গণমাধ্যমের সাথে কাজ করার পাশাপাশি অন্যান্য কমিউনিটির মিডিয়াকে আমাদের সাথে অন্তর্ভুক্ত করণের মাধ্যমে সংবাদ আদান প্রদানের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহন করবো’।

তিনি অভিষেক সন্ধ্যা' সফল করার জন্য যারা মেধা, শ্রম, পরামর্শ, স্পনসর সহ নানাভাবে যারা সহায়তা করেছেন তাদের প্রতি সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞতা জানান। এছাড়াও এই সংগঠনের সকল শুভানুধ্যায়ী, লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবি, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, অস্ট্রেলিয়ার মূলধারার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ফেডারেলএমপি, স্টেট এমপি, কাউন্সিলর,শিল্পী, কলাকুশলীসহ সবাইকে আন্তরিক অভিবাদন জানান।

তাঁর বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে তিনি উপস্থিত অতিথিদের সামনে সংগঠনের কার্য নির্বাহী কমিটি সদস্যদের পরিচয় করিয়ে দেন। এই সময় একে একে মঞ্চে আসেন সিডনি প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া কাউন্সিলের সাধারন সম্পাদক মোহাম্মেদ আব্দুল মতিন, সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দু্ল্লাহ ইউসুফ, সহ-সভাপতি মোঃ রেজাউল হক, সহ-সভাপতি শিবলী আব্দুল্লাহ, যুগ্ম সম্পাদক আউয়াল খান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কাজী আলমগীর, মিডিয়া ও কমিউনিকেশন সম্পাদক সায়মন সরোয়ার, কার্য্য নির্বাহী পরিষদের সদস্য ডঃ রতন লাল কুন্ডু, আকিদুল ইসলাম, নাইম আব্দুল্লাহ, রাশেদ শ্রাবন এবং আসিফ ইকবাল। এই সময় অতিথিগন করতালি দিয়ে এই কমিটিকে অভিনন্দিত করেন।

রাতের ফুল কোর্স ডিনারের পর অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

সাম্প্রতিক