zxmgn5uআন্তর্জাতিক : সৌদি আরবের নেতৃত্বে আরব দেশগুলোকে কাতারের ওপর থেকে স্থল, নৌ ও বিমান নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে জার্মানি। শুক্রবার কাতারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রাহমান আল থানি-র সঙ্গে বৈঠকের পর এ আহ্বান জানান জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গ্যাব্রিয়েল। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স। জার্মানিতে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিদ্যমান সংকট নিরসনে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ওপর জোর দেন সিগমার গ্যাব্রিয়েল। তিনি বলেন, আরব দেশগুলো কর্তৃক কাতারকে একঘরে করে ফেলা একটা সম্মিলিত শাস্তি। এই অবরোধ আন্তর্জাতিক আইনের পরিষ্কার লঙ্ঘন। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিশ্বাস কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে কথা বলা উচিত। এ বিষয়ে আমাদের মার্কিন সহকর্মী এবং এ অঞ্চলের সব সহকর্মীদের কথা বলতে হবে। আমাদের অবশ্যই সমাধানের পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে হবে। বিশেষ করে কাতারের নৌ এবং বিমানসীমায় আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে। সিগমার গ্যাব্রিয়েল বলেন, খাদ্য সরবরাহসহ আরও নানা বিষয়ে কাতারের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে।

এদিকে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর এবার দেশটির বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। সৌদি আরবের আরেক মিত্র বাহরাইন বলেছে, দোহা’র বিরুদ্ধে যে কোনও পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়টি আলোচনার টেবিলে রয়েছে। উত্তেজনা প্রশনে কুয়েতের আমিরের আন্তরিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আক্রমণাত্মক ভাষায় কথা বলছে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন ছয় আরব দেশ। সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনওয়ার গারগাশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, প্রয়োজনে কাতারের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। ফ্রান্স ২৪ টেলিভিশনকে তিনি বলেন, পরবর্তী পদক্ষেপের অর্থই হচ্ছে কাতারের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা। আনওয়ার গারগাশ বলেন, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে অর্থায়নের ব্যপারে কাতারকে তার নীতি বদলাতে হবে। এ ব্যাপারে দেশটির কাছ থেকে কঠিন প্রতিশ্রুতি আদায়ের প্রয়োজন রয়েছে। সন্ত্রাসীদের অর্থায়নের ব্যাপারে সৌদি নেতৃত্বাধীন আরব দেশগুলোর দাবি অবশ্য বরাবরই প্রত্যাখ্যান করে আসছে দোহা। কাতার বলছে, তাদের বিরুদ্ধে আনা এমন অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। দোহা’র ওপর রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার এবং খবরদারি করতেই এসব কথা বলা হচ্ছে। এটা কাতারের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত। বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ খালিদ বিন আহমেদ আল খলিফা সৌদি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, কাতার আদৌ তার আচরণ বদলাবে কিনা-এ ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের স্বার্থ রক্ষায় কোনও দ্বিধা করবো না।

কাতার থেকে সুরক্ষায় আমাদের সামনে যে রাস্তা কোনও বিকল্প গ্রহণের পথ উন্মুক্ত রয়েছে। ইরানের কাছ থেকে কাতারকে দূরে থাকারও আহ্বান জানিয়েছেন বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কাতারের অবশ্যই আমাদের প্রধন শত্রু ইরানের কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে এবং সন্ত্রাসের সমর্থনে প্রচারণা বন্ধ করতে হবে। তাদের বুঝতে হবে যে আমাদের সঙ্গেই তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। আমাদর শত্রুদের সঙ্গে নয়। আমাদের শত্রু সবসময় আমাদের আলাদা করতে চায়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তুরস্ক ও ইরানমুখী হচ্ছে দোহা। এরইমধ্যে খাবার আমদানির ব্যাপারে দেশ দুটির সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা শুরু করেছেন কাতারি কর্মকর্তারা। দেশটির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে তুরস্ক, ইরান এবং অন্য দেশগুলো থেকে খাদ্য ও পানি সংগ্রহের বিষয়ে আলোচনা চলছে। এতোদিন পর্যন্ত কাতারে খাদ্য সামগ্রীর প্রধান সরবরাহকারী দেশ ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব। কিন্তু দেশগুলোর পক্ষ থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করার ফলে যে কোনও ধরনের খাদ্যঘাটতির ঝুঁকি মোকাবিলায় খাবার আমদানির এ নতুন বাজারের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা। কাতার এয়ারওয়েজ-এর কার্গো ফ্লাইটের মাধ্যমে আমদানিকৃত পণ্যসামগ্রী দেশে নিয়ে আসা হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা রয়টার্স-কে বলেন, গত চার সপ্তাহ ধরে বাজারে পর্যাপ্ত খাদ্যশস্যের সরবরাহ রয়েছে। এ ছাড়া সরকারিভাবেও বিশাল মজুদ রয়েছে। তুরস্কের রফতানিকারক সংস্থার প্রধান রয়টার্সকে বলেন, কাতারের খাদ্য ও পানির চাহিদা পূরণে তুর্কি রফতানিকারকরা প্রস্তুত রয়েছেন। সম্পর্ক ছিন্নের ঘটনায় কাতারি নাগরিকদের উদ্বিগ্ন না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে দোহা। এক বিবৃতিতে কাতারের অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশে খাবারের পর্যাপ্ত যোগান রয়েছে। দামও স্থিতিশীল অবস্থায় আছে। তাই এসব নিয়ে কাতারিদের উদ্বেগের কোনও কারণ নেই।

 

সাম্প্রতিক