ঢাকা : তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে পাহাড় ধসে, পানিতে ডুবে, গাছচাপায় ও দেয়ালের নিচে পড়ে অন্তত ১৩৪ জন নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় আহতের সংখ্যা অর্ধশতাধিক।
পাহাড় ধসে নিহত ১২৫ জনের মধ্যে রাঙামাটিতে চার সেনা সদস্যসহ ৯৮ জন, চট্টগ্রামে ২১ জন ও বান্দরবানে ৭ জন। এছাড়া, পাহাড়ি ঢলের পানিতে ডুবে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় পাঁচজন ও রাউজান উপজেলায় একজন এবং রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় একজন মারা গেছেন। চট্টগ্রাম মহানগরের হালিশহর এলাকায় ঝড়ের সময় দেয়াল চাপা পড়ে একজন এবং রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলায় গাছচাপা পড়ে একজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার ভোররাত থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে এসব লাশ উদ্ধার করা হয়। এখনও মাটির নিচে অনেকে চাপা পড়ে থাকায় মৃতের সংখ্যা বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে।
রাঙামাটিতে ৯৮ জনের মৃত্যু
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক (ডিসি) মানজুরুল মান্নান জানান, রাঙামাটি সদরে দুই সেনা কর্মকর্তা ও দুই সেনা সদস্যসহ ৫৩ জন, কাপ্তাইয়ে ১৮ জন ও কাউখালীতে ২৩ জন, বিলাইছড়িতে ২ জন ও জুড়াইছড়িতে ২ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বিকালে ঢাকায় সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “অনেকেই মাটিচাপা পড়ে আছেন। সেনাবাহিনী উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে। ১৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে চার থেকে সাড়ে ৪ হাজার মানুষকে সেখানে রাখা হয়েছে।”
চট্টগ্রামে নিহত ৩০
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মাসুকুর রহমান সিকদার জানিয়েছেন, টানা বৃষ্টিতে পাহাড় ও দেয়াল ধসে এবং বজ্রপাত ও গাছচাপায় চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া, চন্দনাইশ, রাউজান ও বাঁশখালীতে ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রাঙ্গুনিয়ার দুটি এলাকা থেকে ২১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের মইন্যারটেক ও পাহাড়তলী ঘোনায় ১৩ জন এবং রাজানগর ইউনিয়নের জঙ্গল বগাবিল ৮ জনের লাশ উদ্ধার করেছেন উদ্ধারকর্মীরা। আরও কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছেন।
বান্দরবানে ৭ জনের প্রাণহানি
বান্দরবানে বৃষ্টির মধ্যে সোমবার রাতে কয়েক জায়গায় পাহাড় ধসে অন্তত সাতজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন উদয় শংকর চাকমা। এর মধ্যে শহরের কালাঘাটায় এক কলেজছাত্র, লেমুঝিরি ভিতর পাড়ায় একই পরিবারের ৩ শিশু এবং সদর উপজেলার কুহালং ইউনিয়নের গুংগুরু সম্বোনিয়া পাড়ায় আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া, শহরের কালাঘাটা কবরস্থান এলাকায় মাহমুদ মিয়ার বাড়ির ওপর পাহাড় ধসে পড়লে সেখানে রেবি ত্রিপুরা নামের ১৯ বছর বয়সী এক তরুণের মৃত্যু হয়।
বঙ্গোপসাগরে থাকা নিম্নচাপের প্রভাবে গত রোববার রাত থেকেই টানা বৃষ্টি হচ্ছে সারা দেশে। সোমবার এটি বাংলাদেশের উপকূল ও স্থলভাগ অতিক্রম করে। এর প্রভাবে বৃষ্টির পরিমাণ আরো বাড়ে। টানা বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট তলিয়ে গিয়ে গ্রাম-শহরে দুর্ভোগে পড়ে মানুষ। এ কারণে চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর এবং কক্সবাজারে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত জারি করা হয়। অনেক স্থানে বন্ধ করে দেয়া হয় নৌযান চলাচল।
< Prev | Next > |
---|