ffgn5fjiস্টাফ রিপোর্টার: রাফোমিটারের মাধ্যমে সড়ক যান চলাচলের জন্য কতোটুকু উপযোগী তা নির্ণয় করা হয়। দেশের সড়কের প্রকৃত অবস্থা নির্ণয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ১৬টি রাফোমিটার রয়েছে। কিন্তু তার মধ্যে ৮টিই নষ্ট। বাকিগুলো দিয়ে এলজিইডির আওতাধীন সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে রাফোমিটারের অভাবে এলজিইডির অধিকাংশ সড়কের অবস্থাই নির্ণয় করা যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্টদের অভিমত হচ্ছে, এলজিইডির সড়ক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রতি জেলায় অন্তত একটি করে রাফোমিটার প্রয়োজন। এলজিইডি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সারা দেশে এলজিইডির আওতায় পল¬ী সড়ক রয়েছে ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫৮৯ কিলোমিটার। সড়কগুলোয় দিন দিন যানবাহনের চাপ বাড়লেও সে অনুযায়ী বাড়ছে না রক্ষণাবেক্ষণ বরাদ্দ। সড়কের যান চলাচলের উপযোগিতা নির্ণয়ে প্রয়োজনীয় যন্ত্রটিও ঢাকা থেকেই সরবরাহ করা হয়। ফলে অধিকাংশ সড়কে ওই পরীক্ষাটি করা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া ২০০৪ সালে এলজিইডির অবকাঠামো নির্মাণে মাটি পরীক্ষার জন্য ১ কোটি টাকা দিয়ে একটি কোন পেনিট্রেশন টেস্ট (সিপিটি) যন্ত্র কেনা হয়। ২০১০ সাল থেকে কিছু বড় অবকাঠামো নির্মাণে যন্ত্রটি ব্যবহার করা হলেও শুধুমাত্র বিশেষজ্ঞের অভাবে তার পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ঝুঁকি নিয়েই অবকাঠামো নির্মাণ করতে হচ্ছে এলজিইডিকে। যন্ত্রটি কেনা হয় নেদারল্যান্ডসের প্রতিষ্ঠান জিইও মিল থেকে। প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে যন্ত্রটির ব্যবহার-সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ গ্রহণের কথা থাকলেও এখনো তা নেয়া হয়নি। যদিও বরিশাল, সিলেট ও টাঙ্গাইলের কিছু বড় সেতু এবং রূপগঞ্জ পাওয়ার প্লান্টের মতো কয়েকটি বড় প্রকল্পে যন্ত্রটির আংশিক ব্যবহার করেছে এলজিইডি। তাছাড়া হাইওয়েসহ সব ধরনের সড়ক, সেতু ও অবকাঠামো নির্মাণেও যন্ত্রটি ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। সেজন্য যন্ত্রটির পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার নিশ্চিত করতে ৪ জন সহযোগীসহ অন্তত একজন বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন বলে মনে করছেন এলজিইডির মান নিয়ন্ত্রণ ইউনিটের কর্মকর্তারা।

সূত্র জানায়, এলজিইডির অধীনে বিদ্যমান সড়ক ও সড়ক অবকাঠামোর বর্তমান সম্পদমূল্য প্রায় ৬১ হাজার কোটি টাকা। গুরুত্বপূর্ণ ওই জাতীয় সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণে ন্যূনতম ৩ থেকে ৪ শতাংশ হারে প্রতি বছর কমপক্ষে ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ প্রয়োজন। অথচ বাজেটে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে তার অর্ধেক। ফলে সঠিক সময়ে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হচ্ছে পল্লী অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ মাধ্যম। এলজিইডিতে শুধুমাত্র রাফোমিটার নয়, সড়কের ভার বহন ক্ষমতা নির্ণয়কারী যন্ত্রও রয়েছে মাত্র দুটি। সরকার নিয়মিত সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের কথা বললেও সেজন্য যথেষ্ট সরঞ্জাম নেই। যা আছে তা দিয়ে সারা দেশের সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব নয়। ফলে বছরের পর বছর অনেক সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে থাকলেও সেগুলো মেরামত করা যাচ্ছে না। আবার কোনো কোনো সড়ক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই মেরামত করা হচ্ছে, যদিও তা কিছুদিন পরই পুরনো অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। ওই ধরনের রক্ষণাবেক্ষণে অপচয় হচ্ছে সরকারি অর্থের।

সূত্র আরো জানায়, গ্রামীণ জনপদের বেশির ভাগ সড়কই দীর্ঘদিন ধরে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। অনেক সড়কে যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা, বর্ষায় কাদার জন্য মানুষের হাঁটতেও কষ্ট হয়। ভুক্তভোগীরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কিংবা প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। ওই বিপুল জনগোষ্ঠীর স্বার্থেই এলজিইডিকে আরো শক্তিশালী ও প্রযুক্তিবান্ধব করে গড়ে তোলা জরুরি।

এ প্রসঙ্গে এলজিইডির রক্ষণাবেক্ষণ ইউনিটের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ আবদুর রহিম জানান, এলজিইডির আওতাধীন যে পরিমাণ সড়ক রয়েছে, তার তুলনায় বিদ্যমান রাফোমিটার অবশ্যই অপর্যাপ্ত। তবে এ কাজে ব্যবহৃত আধুনিক আরেকটি যন্ত্র কেনার প্রক্রিয়া চলছে। শুধু যন্ত্রপাতি কিনলেই হবে না, ওসব যন্ত্র পরিচালনায় দক্ষ লোকবলও জরুরি। সার্বিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অর্থ ও দক্ষ লোকবলের অভাব রয়েছে দীর্ঘদিন ধরেই এলজিইডিতে।

সাম্প্রতিক