fhubr4স্টাফ রিপোর্টার: ঈদের আগাম টিকেট বিক্রির তৃতীয় দিন উপচে পড়া ভিড়ের মধ্যে মাত্র আধা ঘণ্টায় জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ রুটের তিস্তা এক্সপ্রেসের অধিকাংশ টিকেট বিক্রি হয়ে যাওয়ায় হট্টগোল হয়েছে ঢাকার কমলাপুরে। বুধবার সকাল ৮টায় টিকেট বিক্রি শুরুর পর পৌনে ১০টার মধ্যে রংপুর এক্সপ্রেসের সব টিকেটও শেষ হয়ে গেছে বলে কাউন্টার থেকে জানানো হয়। এদিন কমলাপুর থেকে দেওয়া হয় ২৩ জুনের ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকেট। ২৫ জুন ঈদের ছুটি শুরুর আগের দুদিন শুক্র ও শনিবার হওয়ায় ২৩ জুনের টিকেটের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। বুধবারের টিকেটের জন্য কমলাপুরে ক্রেতাদের ভিড় জমতে শুরু করে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে। সকালে কাউন্টার খোলার আগেই টিকেটপ্রত্যাশীদের লাইন স্টেশনের প্রবেশপথ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। সকাল সাড়ে ৮টায় কাউন্টার থেকে জানানো হয়, ঢাকা দেওয়ানগঞ্জ রুটের তিস্তা এক্সপ্রেসের টিকেট আছে শুধু ময়মনসিংহ পর্যন্ত, বাকি টিকেট আছে। এ কথা শুনে যাত্রীরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মোস্তাফিজুর রহমান নামে একজন টিকেটপ্রত্যাশী বলেন, তিনি অপেক্ষায় আছেন মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে। কাউন্টারের সামনে তার সিরিয়াল ছিল ৫২ নম্বরে, কিন্তু তিস্তার টিকেট তিনি পাননি।

তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেন সবচেয়ে বড়। ১৮টা কোচ। সবচেয়ে বেশি আসন এই ট্রেনে। আমার আগে যদি ২০০ টিকেটও বিক্রি হয় তারপরও আমার পাওয়ার কথা। কিন্তু টিকেট থাকবে না এটা কেমন করে হয়? ফরিদ উদ্দিন নামের আরেকজন বলেন, বিক্রি শুরুর আধাঘণ্টার মধ্যে টিকেট বিক্রি শেষ হয়ে যায় কীভাবে? এরকম জোচ্চুরি করলে তারা আমাদের বলে দিক, আমাদের কষ্ট করে আর অপেক্ষা করতে হবে না। যাত্রীদের অভিযোগের বিষয়ে ১৩ নম্বর কাউন্টারে জিজ্ঞাসা করলে সেখান থেকে জানানো হয়, কোনো টিকেট নাই। সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত তিস্তা এক্সপ্রেসের কতগুলো টিকেট বিক্রি হয়েছে জানতে চাইলে কোনো তথ্য দিতে পারেননি ওই কাউন্টারের রেলকর্মী। তিনি বলেন, যা টিকেট আছে তা কম্পিউটারের মনিটরে দেখা যাচ্ছে। আরও তিনটা কাউন্টার থেকে টিকেট বিক্রি হচ্ছে। টিকেট নাই। আপনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর পাশে নারীদের কাউন্টারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানেও তিস্তার টিকেট পাচ্ছেন না কেউ। জামালপুর যাওয়ার টিকেটের জন্য নারীদের কাউন্টারে লাইনে ছিলেন স্বপ্না। সকাল সাড়ে ৮টায় তাকে বলা হয় তিস্তার কোনো টিকেট নাই। স্বপ্না বলেন, তার আগেও কয়েকজন তিস্তার জামালপুরের টিকেট পাননি।

ফলে দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল ট্রেনের টিকেট কিনতে হয়েছে তাকে। টিকেট প্রত্যাশীদের মধ্যে গুঞ্জন, মঙ্গলবার রাত ৮টায় কাউন্টার বন্ধ করে দেওয়া হলেও ১০টার দিকে আবার কাউন্টারের ভেতরে কম্পিউটার চালু করা হয়েছিল, টিকেট প্রিন্ট করার শব্দও নাকি পাওয়া গেছে। তবে কমলাপুরের স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী বলছেন, টিকেট বিক্রি হয়েছে বলেই তাড়াতাড়ি শেষ হয়েছে। আর রাতে কাউন্টারে লোক থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। মোট টিকেটের ৬৫ শতাংশ বিক্রি হয় চারটি কাউন্টার থেকে। ২৩ জুনের যাত্রার জন্য বিভিন্ন ট্রেনের মোট ২৪ হাজার ৮০৬টি বিক্রি হচ্ছে। টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে বলেই অনেকে পাননি। নইলে এত টিকেট যাবে কোথায়? টিকেট বিক্রি শুরুর আধা ঘণ্টা পর কিশোরগঞ্জের এগারসিন্ধুর এক্সপ্রেস এবং কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের শোভন চেয়ার ও শোভন শ্রেণির টিকেট পাওয়া যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন যাত্রীরা। কিশোরগঞ্জের টিকেটের জন্য আসা আরিফুর রহমান জানান, আগেরদিন থেকে তিনি অপেক্ষায়, তারপরও কাক্সিক্ষত টিকেট পাননি। সিরিয়াল ছিল ১০ নম্বরে। কিন্তু টিকেট দেওয়া শুরু করে কিছুক্ষণ পরই জানাল, চেয়ারকোচের কোনো টিকেট নাই। ভাই তাহলে সারারাত দাঁড়াইয়া থেকে কি লাভ হইল? টিকেট গেল কই? ঢাকার একটি রেস্তরাঁর কর্মী সোহাগ মিয়া অভিযোগ করেন, সারির প্রথম ৪ জনকে টিকেট দেওয়ার পর আর কোনো শোভন চেয়ার বা শোভন শ্রেণির টিকেট দেওয়া হচ্ছে না। আমার সিরিয়াল ছিল ৬ নম্বর। আমি শোভন টিকেট পাই নাই। এত টিকেট গেল কই? এতে ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যেও যুদ্ধজয়ের হাসি দেখা গেছে কয়েকজনের মুখে। আতিকুর রহমান তাদেরই একজন। পারাবাত এক্সপ্রেসে কুলাউড়া যাওয়ার টিকেটের জন্য মঙ্গলবার রাত ৯টায় কমলাপুরে এসেছিলেন তিনি। সকালের প্রথমদিকেই টিকেট পেয়েছেন। ফ্যামিলি নিয়ে বাসে যেতে নিরাপদ বোধ করি না, টেনশন লাগে। এজন্য কষ্ট হলেও ট্রেনে যাই। ময়মনসিংহ রুটের টিকেট নিয়ে হট্টগোল বেশি হলেও এদিন চাহিদা বেশি ছিল উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন রুটের টিকেটের। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে জুয়েল আলী জানান, রাজশাহীর টিকেটের জন্য মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে কাউন্টারের সামনে অপেক্ষার পর সকাল ৮টা ১০ এ টিকেট পেয়েছেন তিনি। দেরি করে আসলে এসির টিকেট পাব না, এজন্য সারারাত অপেক্ষা করেছি। অনেক কষ্ট হয়েছে, কিন্তু এখন সব কষ্ট শেষ!

চট্টগ্রাম: ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রির তৃতীয়দিনে চট্টগ্রামেও বাড়ে যাত্রীদের ভিড়। টিকেটের জন্য সেহেরির পর থেকে লাইনে দাঁড়াতে শুরু করেন যাত্রীরা। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর টিকেট হাতে পাচ্ছেন যাত্রীরা। বুধবার সকাল থেকে ২৩ জুনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে। এদিকে টিকেট বিক্রি শুরুর দুই ঘণ্টার মধ্যেই ময়মনসিংহগামী বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের সব টিকেট শেষ হয়ে যায়। তবে অন্যান্য ট্রেনের টিকেট এখনো কাউন্টারে রয়েছে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মো.মিজানুর রহমান বলেন, তৃতীয়দিনে টিকেটের চাহিদা অনেক বেশি। সেহেরির পর থেকে টিকেট নেওয়ার জন্য যাত্রীরা লাইনে দাঁড়িয়েছেন। সকাল আটটায় টিকেট বিক্রি শুরুর দুই ঘণ্টার মধ্যেই বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের সব টিকেট শেষ হয়ে যায়। ২৩ জুন থেকে সরকারি ছুটি শুরু হওয়ায় এদিন পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশিরভাগ মানুষ বাড়িতে যাবেন। তাই এদিনের টিকেটের চাহিদা অনেক বেশি। প্রথম দুদিন চাহিদা কম থাকলেও এখন টিকেটের জন্য যাত্রীদের চাপ বাড়ছে। আগামি দুদিনে টিকেটের চাহিদা আরও বাড়বে। তিনি বলেন, বিজয় ছাড়া অন্য সবগুলো ট্রেনের টিকেট কাউন্টারে রয়েছে। যতক্ষণ টিকেট থাকবে ততক্ষণ যাত্রীরা তা সংগ্রহ করতে পারবেন।

টিকেট বিক্রিতে কোন অনিয়ম বা কালোবাজারি সহ্য করা হবে না। রেলওয়ে সূত্র জানায়, অগ্রিম টিকেট বিক্রি কার্যক্রমে ১৫ জুন ২৪ জুনের ও ১৬ জুন দেওয়া হবে ২৫ জুনের টিকেট। ১৯ জুন ২৮ জুনের, ২০ জুন ২৯ জুনের, ২১ জুন ৩০ জুনের, ২২ জুন ১ জুলাই ও ২৩ জুন ২ জুলাইয়ের ফিরতি টিকেট দেওয়া হবে। পরিবহন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুবর্ণ এক্সপ্রেস প্রতিদিন সকাল সাতটায়, মহানগর গোধূলী বিকেল ৩টায়, চট্টলা এক্সপ্রেস সকাল সোয়া ৮টায়, মহানগর এক্সপ্রেস বেলা সাড়ে ১২টায়, সোনার বাংলা বিকেল ৫টায় এবং তূর্ণা এক্সপ্রেস রাত ১১টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম স্টেশন ছেড়ে যাবে। পাহাড়িকা সকাল সোয়া ৯টায়, উদয়ন এক্সপ্রেস রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে সিলেটের উদ্দেশ্যে, মেঘনা এক্সপ্রেস বিকেল সোয়া পাঁচটায় চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে এবং বিজয় এক্সপ্রেস সকাল ৭টা ২০ মিনিটে ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম ছেড়ে যাবে। কর্ণফুলী এক্সপ্রেস সকাল ১০টায় ও ঢাকা মেইল এক্সপ্রেস রাত সাড়ে ১০টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে, সাগরিকা এক্সপ্রেস সকাল সাড়ে ৭টায় চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে ময়মনসিংহ এক্সপ্রেস বিকেল সাড়ে ৩টায় বাহাদুরাবাদ’র উদ্দেশ্যে ও জালালাবাদ এক্সপ্রেস রাত সাড়ে ৯টায় সিলেটের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম স্টেশন ছেড়ে যাবে। এছাড়া ঈদের আগে ২৩ জুন থেকে চট্টগ্রাম চাঁদপুর রুটে দুই জোড়া স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে। চাঁদপুর স্পেশাল-১ ট্রেনটি সকাল সাড়ে ১১টায় এবং চাঁদপুর স্পেশাল-২ বিকেল সাড়ে তিনটায় চট্টগ্রাম স্টেশন ছেড়ে যাবে।

 

সাম্প্রতিক