স্টাফ রিপোর্টার: অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রস্তাবিত ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের বাজেট পরিমার্জনের দাবি জানিয়েছেন সংসদে বেশ কয়েকজন এমপি। বুধবার বাজেট আলোচনায় অংশ এমপিরা বলেন, বাজেট বড় হলেই কৃতিত্বের কিছু নেই। বাজেটকে বাস্তবায়ন করতে হবে। এবারের বাজেটে অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে। তাই প্রস্তাবিত বাজেট পুনর্বিবেচনা করা হোক। পরিমার্জন করা হোক। জাতীয় পার্টি ও জাসদের সংসদ সদস্যরা বাজেট পরিমার্জনের দাবি করলেও প্রস্তাবিত বাজেটকে গণমুখী ও জনক্যলাণকর বলে দাবি করেন সরকারি দলের এমপিরা। তারা বলেন, এবারের বাজেট বাস্তবায়ন করা গেলে দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে সফলভাবে হাঁটবে। আলোচনায় অংশ নিয়ে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবারের বাজেট বাস্তবায়ন হবে। ক্রীড়াক্ষেত্র সহ সবদিক দিয়ে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ক্রীড়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন আর অজানা আর অচেনা নয়। এ অবস্থানে আসার পেছনে প্রধানমন্ত্রীর অবদান সবচেয়ে বেশি। কারণ তিনি একজন ক্রীড়ামোদী মানুষ। বাংলাদেশের মানুষ পারে এবং সেটা আমরা করে দেখিয়েছি। ক্রীড়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনেক অবদান রয়েছে। শরীয়তপুরের এমপি বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, অর্থমন্ত্রী জাতির জন্য আশা জাগানিয়া বাজেট দিয়েছেন। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নানা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি আশ্চর্য হয়েছি খালেদা জিয়ার মন্তব্যে।
তিনি বলেছেন, এটা লুটপাটের বাজেট। ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়া ও তার পরিবার এই বাংলাদেশকে লুটপাটের রাজত্ব বানিয়েছিলো। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, বাজেট দেখলে বোঝা যায় বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছে। তারুণ্যের স্ফুলিঙ্গের জন্য বাজেটে তরুণদের সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্ব ও পরামর্শে ডিজিটাল দেশে পরিণত হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। জাতীয় পার্টির অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মিলন বলেন, অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় জাতীয় পার্টি এখন ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী দল। দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে বলা হচ্ছে এজন্য অবদান রয়েছে জাতীয় পার্টির। বাজেট যত বড়ই হোক তা যদি বাস্তবায়ন করা না যায় তাহলে জনগণ আস্থা হারাবে। ঘাটতি বাজেট বাস্তবায়ন করা তো আরও কঠিন। অর্থমন্ত্রী দেশের সকল নাগরিকের ওপর ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছেন। আজ যে শিশুটি জন্ম নিলো তার মাথায়ও ঋণের বোঝা রয়েছে। এই বাজেটে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ খুশি হতে পারেনি বলে মিডিয়ায় খবর এসেছে। তিনি বলেন, আবগারি শুল্কের কারণে মানুষ আতঙ্কে রয়েছে। কিছু বিষয় ছাড়া বাজেটের অনেক ইতিবাচক দিক আলোচনার বাইরে চলে গেছে। অনেক কিছু করার পরও ভ্যাট আর আবগারি শুল্কের কারণে জনমনে বিরক্তি তৈরি হয়েছে। জাসদের সংসদ সদস্য শিরিন আখতার বলেন, ১৪ দল আর সরকার একসঙ্গে দুটি যুদ্ধ করছে। একটি সংবিধান সম্মত রাখার যুদ্ধ আরেকটি অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য যুদ্ধ। আমরা মনে করি, এবারকার বাজেটকে অনেক ভালো বলা যায়। জাসদ বারবারই প্রগতিশীল কর নীতির কথা বলেছে। এবারের বাজেট গরিবদের জন্য আরও সহনীয় করা যেতে পারে। কৃষিখাতে গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
এ খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি করছি। জাসদ আশা করে বাজেটের পরিমার্জন করা হবে। নাটোর-২ আসনের শফিকুল ইসলাম শিমুল বলেন, নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা দরকার। প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা হচ্ছে। সবদিক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এবারের বাজেট গণমুখী ও জনকল্যাণমুখী হয়েছে। সিলেট-২ আসনে জাতীয় পার্টির এমপি ইয়াহিয়া চৌধুরী বলেন, বাজেট বড় হলে কৃতিত্বের কিছু নেই। বাজেটকে বাস্তবায়ন করতে হবে। এবারের বাজেটে অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে। তাই এবারের বাজেট পুনর্বিবেচনা করা হোক। পরিমার্জন করা হোক। এদিকে, ব্যাংক গ্রাহকদের ওপর আরোপিত আবগারি শুল্কের হার পরিবর্তন হতে পারে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বুধবার সচিবালয়ে অর্থনৈতিক বিষয় ও ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী একথা বলেন। তিনি জানান, এ নিয়ে সংসদে আলোচনা হয়েছে। আবগারি শুল্কের হার কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানের সংসদে আবগারি শুল্কের হার নিয়ে কথা বলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এম এ মান্নান এ বিষয়ে কথা বলার অথরিটি নয়। গত মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে ব্যাংক হিসাবে বাজেটে প্রস্তাবিত বাড়তি আবগারি শুল্ক তুলে নেওয়ার বিষয়ে সরকারের উচ্চ মহলে ‘চিন্তা-ভাবনা’ চলছে বলে আশ্বস্ত করেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী। এ বিষয়ে সরকারের কোনো পরিকল্পনা নেই বলেও সংসদে বাজেট নিয়ে সাধারণ আলোচনায় তিনি জানান। গত ১ জুন অর্থমন্ত্রীর ঘোষিত বাজেটে ব্যাংক গ্রাহকদের ওপর বাড়তি হারে আবগারি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করার পর থেকেই এ নিয়ে আলোচনা চলছে।
< Prev | Next > |
---|