স্টাফ রিপোর্টার: সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তার যথাযথ প্রস্তুতি নেই। বরং উৎপাদন কম হওয়ায় এখনই গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং করে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে চাহিদা আরো বাড়লে সামাল দেয়াই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। আর নির্দিষ্ট সময়ে বিদ্যুৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত আরো ১ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটের তরল জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ধারণা করা হচ্ছে আগামী দুই বছর দেশে বিদ্যুৎ চাহিদা যে পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে উৎপাদন সেই অনুপাতে বৃদ্ধি পাবে না। ফলে এখনই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ না নেয়া হলে ভয়ঙ্কর সঙ্কটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর সঙ্কট সামালের কথা মাথায় রেখে সম্প্রতি আরো ১ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটের তেলচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
সূত্র জানায়, সরকার সম্প্রতি যে ১ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটের নতুন নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে তার মধ্যে ৭০০ মেগাওয়াটের বার্জ মাউন্টেড এবং ১ হাজার মেগাওয়াটের স্থায়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। আর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সবই বিনা দরপত্রে বিদ্যুৎ জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বিশেষ আইনের মাধ্যমে নির্মাণের চিন্তা করছে বিদ্যুত বিভাগ। বার্জ মাউন্টেড ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে কক্সবাবাজের ২০০ মেগাওয়াট, ময়মনসিংহে ২০০ মেগাওয়াট, চাঁদপুর, নওয়াপাড়া এবং বাগেরহাটে ১০০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। চট্টগ্রামের মিরেরসরাইতে ৩০০ মেগাওয়াট ছাড়াও মাগুরা, যশোর, লালমনিরহাট, নওগাঁওর নিয়ামতপুর, জয়পুরহাটে ১০০ মেগাওয়াট এবং গাজীপুরের ভালুকাতে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। ওসব বিদ্যুত কেন্দ্রের পাওয়ার ইভাক্যুয়েশন কিভাবে হবে তাও নির্ধারণ করেছে বিদ্যুত বিভাগ। ইতিমধ্যে বিদ্যুৎ খাতের ওই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ একটি কমিটি করেছে। সরাসরি আবেদনের ভিত্তিতে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্র নির্মাণের সুযোগ পাবেন। তবে ওসব ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের অবশ্যই বিদ্যুৎ উৎপাদনের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
সূত্র আরো জানায়, বিদ্যুৎ খাতে সরকারের বড় প্রকল্পগুলোর মধ্যে কেবল পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ যথাসময়ে শেষ হবে। অন্য কোনো বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজই নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হবে না। তাতে বিশাল বিদ্যুৎ ঘাটতিতে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে। কারণ ২০২৫ সাল নাগাদ যে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে তাতে মাত্র ৩টি বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ওই ৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে পায়রা, রামপাল এবং মাতারবাড়ি। ওসব কেন্দ্র থেকে সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু সরকারের ২০২১ সাল নাগাদ দেশে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনা রয়েছে। ইতিাধ্যে প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও কোনো প্রকল্পেরই অগ্রগতি না থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ে চিন্তিত সরকার।
এদিকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, আগামী বছর থেকে রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অবসরে যাওয়া শুরু হবে। ওসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো তেলচালিত। তেলচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ব্যয় বেশি। সরকার ২০০৯ সালের পর রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের সময় বলেছিল বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে এলে ওসব কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হবে। কিন্তু এখন এসে আবার তেলের দিকেই ঝুঁকতে হচ্ছে। ওসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র ছোট আকারের হওয়ায় উৎপাদন ব্যয় বেশি পড়ে। যাতে বাজেটে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারকে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হয়।
অন্যদিকে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সম্প্রতি বলেন, বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যে পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছিল তার মধ্যে কয়লাভিত্তিক সব কেন্দ্র আসবে না। তার মধ্যে সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র আসতে পারে। সেজন্য সরকার বিকল্প হিসেবে এলএনজির কথা চিন্তা করছে।
< Prev | Next > |
---|