takaস্টাফ রিপোর্টার: দেশের বেশির ভাগ বেসরকারি ব্যাংকেই বর্তমানে নগদ টাকার সংকট চলছে। মূলত ব্যাংকিং খাতে আমানতের পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে কমে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ২০১২ সালে ব্যাংকিং খাতে যেখানে আমানত প্রবৃদ্ধি ছিল ২০ শতাংশ, বর্তমানে তা নেমে এসেছে ৬ শতাংশে। কিন্তু ব্যাংকগুলোতে ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে বেসরকারি অনেক ব্যাংকই সুদ হার বাড়িয়ে আমানত সংগ্রহে নেমেছে। ব্যাংকাররা বলছেন, বাজেটে ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাবে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের ভীতি তৈরি হয়েছে। অনেক গ্রাহক ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নিয়েছে। যা ব্যাংকিং খাতে ঋণ ও আমানত প্রবৃদ্ধির ব্যবধান বাড়িয়ে দিচ্ছে। ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ২০১৫ সাল শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে আমানতের পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৪৫ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা। একই সময়ে ঋণ ছিল ৬ লাখ ১৭ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা। ওই হিসাবে ২০১৫ সাল শেষে ব্যাংকগুলোর হাতে ১ লাখ ২৮ হাজার ২০৩ কোটি টাকার উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল। ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্যের ওই পরিমাণ ২০১৬ সালের ডিসেম্বর শেষে ১ লাখ ২৮ হাজার ৯ কোটি টাকায় নেমে আসে। আর চলতি বছরের এপ্রিল শেষে ব্যাংকগুলোর উদ্বৃত্ত তারল্যের পরিমাণ ১ লাখ ১২ হাজার ৩১৭ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। এপ্রিল শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৫৭ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। একই সময়ে ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ৭ লাখ ৪৫ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা। গত সপ্তাহে কলমানি বাজারে গড়ে ৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ সুদে লেনদেন করেছে ব্যাংকগুলো। যদিও বছরের শুরুতে কলমানি বাজারের গড় সুদহার ছিল সাড়ে ৩ শতাংশ। কলমানি বাজারে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ও অগ্রণী ব্যাংক ৮৬৭ ও ৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে। আর কলমানি বাজার থেকে ঋণ নেয়া সবক’টি ব্যাংকই ছিল দেশের বেসরকারি খাতের।

সূত্র জানায়, ব্যাংকিং খাতে আমানত কমলেও ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। আর বাড়তে থাকা ঋণ প্রবৃদ্ধির সাথে তাল মেলাতে বেসরকারি অনেক ব্যাংকই বাড়তি সুদ প্রস্তাব করে আমানত বাড়াতে চাচ্ছে। অনেক ব্যাংক তিন মাস মেয়াদি এফডিআরে সুদহার ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনলেও এখন ৭ শতাংশ প্রস্তাব করছে। এভাবে আমানতের সুদহার বাড়লে ব্যাংকের কস্ট অব ফান্ড বেড়ে যাবে। দেশের ব্যাংকিং খাতে বড় ধরনের আমানত প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২০১২ সালে। তারপর থেকেই ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে ওই প্রবৃদ্ধি। ২০১৩ সালে আমানত প্রবৃদ্ধি হয় ১৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ। পরের বছর ওই প্রবৃদ্ধি আরো কমে দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশে। ২০১৫ সালে ব্যাংক আমানতে ১৩ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও ২০১৬ সালে তা দাঁড়ায় ১২ দশমিক ৭৮ শতাংশে। আর ২০১৭ সালের জানুয়ারি-এপ্রিল সময়ে আমানত প্রবৃদ্ধি অস্বাভাবিক কমে মাত্র ৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান জানান, ঈদের আগে ব্যাংকগুলোয় স্বাভাবিকভাবেই নগদ টাকার চাহিদা বেশি থাকে। সে হিসাবে বেসরকারি কিছু ব্যাংকে নগদ টাকার কিছুটা সংকট থাকতে পারে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বেড়েছে। ব্যাংকিং খাতে এই মুহূর্তে যে পরিমাণ উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে, তাতে আমানতের সুদহার বাড়ার কথা নয়। সরকার যদি ব্যাংকিং খাত থেকে টাকা নেয়া শুরু করে, তবেই আমানতের সংকট হবে।

সাম্প্রতিক