transfomerস্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীসহ সারাদেশে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার পুড়ে বিকল হওয়ার ঘটনা বাড়ছে। গত দুই মাসে (মার্চ ও এপ্রিল) ১১ হাজার হাজারেরও বেশি ট্রান্সফরমার বিকল হয়েছে। ফলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও লোডশেডিংয়ে একদিকে যেমন নাকাল জনগণ, অন্যদিকে রাষ্ট্রেরও বিপুল আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। মূলত দুর্বল রক্ষণাবেক্ষণ এবং ওভারলোডিংয়ের কারণেই ট্রান্সফরমার বিকল হওয়ার পরিমাণ বাড়ছে। বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ধারণক্ষমতার বেশি বিদ্যুৎ বিতরণ করা এবং রক্ষণাবেক্ষণ ত্রুটির কারণে গত এপ্রিলে ১৫ হাজার ৮৭১টি ট্রান্সফরমার ওভারলোডেড অবস্থায় ছিল। সেগুলো পুড়ে নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। সারাদেশে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ১৪ হাজার ৭০৫টি, পিডিবির ৬৫৩টি, নেসেকার ২৩০টি, ডিপিডিসির ২১৯টি, ডেসকোর ৭টি এবং ওজোপাডিকোর ৫৭টি ট্রান্সফরমার ওভারলোডেড। গত মার্চ মাসেই সারাদেশে ৪ হাজার ৪১৩টি ট্রান্সফরমার বিকল হয়েছে। এপ্রিলে নষ্ট হয়েছে ৬ হাজার ৭৩৮টি। অর্থাৎ মার্চের চেয়ে এপ্রিলে প্রায় ৫৩ শতাংশ ট্রান্সফরমার বেশি বিকল হয়েছে। মে মাসেও একই ধারা অব্যাহত ছিল। বিদ্যুৎ বিতরণকারী ৬টি সংস্থার মধ্যে ৪টির আওতাধীন এলাকায় ট্রান্সফরমার বেশি পুড়ছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ট্রান্সফরমার। গত মার্চে প্রতিষ্ঠানের ৪ হাজার ৩৫৪টি এবং এপ্রিলে ৬ হাজার ৬৪৪টি ট্রান্সফরমার বিকল হয়েছে। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) আওতাধীন এলাকায় মার্চে ২৬টি ও এপ্রিলে ৪৬টি ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়। ঢাকা ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) মার্চে ১২টি ও এপ্রিলে ২০টি ট্রান্সফরমার পুড়ে যায়। ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) ট্রান্সফরমার মার্চে ১০টি ও এপ্রিলে ১৯টি নষ্ট হয়।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ট্রান্সফরমার মার্চের ১০টি থেকে কমে এপ্রিলে ৮টি নষ্ট হয়। মার্চ ও এপ্রিলে নবগঠিত নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসেকা) একটি করে ট্রান্সফরমার বিকল হয়েছে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে সারাদেশে ৮ লাখ ৯৪ হাজার ৯৫৬টি ট্রান্সফরমার রয়েছে। তার সিংহভাগই আরইবির। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের আওতায় ৮ লাখ ৪৮ হাজার ৬৮৩টি, পিডিবির ১৫ হাজার ২৯৯টি, ডিপিডিসির ১১ হাজার ২৫৯টি, ডেসকোর ৬ হাজার ৪৬৭টি, ওজোপাডিকোর ৬ হাজার ৩১৫টি এবং নেসেকার ৬ হাজার ৯৩৩টি ট্রান্সফরমার রয়েছে।

সূত্র মতে, বৈদ্যুতিক টান্সফরমার বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। গত মে মাসে কক্সবাজার শহরে একটি ট্রান্সফরমার বিস্ফোরিত হয়ে ওই এলাকা বিদ্যুৎহীন ছিল প্রায় ৮ ঘন্টা। বিস্ফোরণে ওই এলাকার একাধিক দোকানপাট ও বাড়িঘরের বৈদ্যুতিক বাতি, টিভি ও ফ্রিজসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক পণ্য সামগ্রী নষ্ট হয়।

বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার বিকল হওয়া প্রসঙ্গে আরইবির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মঈনউদ্দিন জানিয়েছেন, বিতরণ লাইনে ওভারলোড, হঠাৎ করে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া কিংবা বজ্রপাতসহ নানা কারণে ট্রান্সফরমার নষ্ট হচ্ছে। গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুমে ট্রান্সফরমার বিকল হওয়ার ঘটনা বৃদ্ধি বাড়ে। তবে ট্রান্সফরমার বিকল হওয়ার পর যতো দ্রুত সম্ভব তা প্রতিস্থাপন করা হয়। নতুন ৭০ হাজার ট্রান্সফরমার প্রতিস্থাপন করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সেগুলো প্রতিস্থাপিত হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

সাম্প্রতিক