old busস্টাফ রিপোর্টার: ঈদ ঘরে জলপথ ও সড়ক পথে আনফিট লঞ্চ-বাস রাস্তায় নামতে শুরু করেছে। সড়ক পথে বেহাল দশায় আনফিট বাস এবং বিদ্যমান প্রাকৃতিক পরিস্থিতিতে নৌপথে আনফিট লঞ্চ দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। ফলে অনেক সময় ঈদ আনন্দ অনেকের জন্যই বিষাদময় হয়ে উঠছে। যোগাযোগ খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ঈদ ঘিরে ইতিমধ্যে শতাধিক লক্কড়-ঝক্কড় ও আনফিট লঞ্চ বুড়িগঙ্গা নদীতে নেমে পড়েছে। ওসব লঞ্চে যথারীতি যাত্রীও পরিবহন করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে দোতলা ও তিনতলা ওসব লঞ্চ অতিশয় ঝুঁকিপূর্ণ। আর বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের মতে নদীতে চলাচলকারী শতকরা ৫০ ভাগ লঞ্চেরই কোনো রেজিস্ট্রেশন নেই। পাশাপাশি সড়কপথে যাত্রী পরিবহনে নতনু রঙ মেখে লক্কড়-ঝক্কড় গাড়িগুলোও রাস্তায় নামতে শুরু করেছে। যদিও এবারও কর্তৃপক্ষ কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে, কোনোভাবেই ফিটনেসবিহীন কোনো যান মহাসড়কে চলতে দেয়া হবে না। বিআরটিএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, 'লক্কড়-ঝক্কড় বুঝি না। যেসব গাড়ির ফিটনেস থাকবে না, সেগুলো রাস্তায় চলতে দেয়া হবে না। সড়কে ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকবে। তারা ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু প্রতিদিনই একাধিক ফিটনেসবিহীন গাড়ি যাত্রী পরিবহনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কোনো কোনো গাড়ি যাত্রী বহন করতেও শুরু করেছে। বিভিন্ন নামের কোম্পানির পুরনো গাড়িগুলো রঙ করে নামানো হয়েছে।

সূত্র জানায়, নৌপথে নিরাপদে চলাচলের জন্য লঞ্চের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, ড্রাফট ও উচ্চতা এই চারটি বিষয় বৈজ্ঞানিক ও আনুপাতিকভাবে একে অন্যের সাথে সম্পৃক্ত। কিন্তু যাত্রী ধারণক্ষমতা বাড়াতে মালিকরা খেয়াল খুশিমতো লঞ্চের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা বাড়ায়। ফলে লঞ্চটি ত্রুটিপূর্ণ হয়ে পড়ে। বিশেষ করে ঈদের সময় অসংখ্য আনফিট ও লক্কড়-ঝক্কড় লঞ্চ নদীতে নামে। তাতে যাত্রীদের জীবন নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ছে। অভিযোগ রয়েছে, ফিটনেসবিহীন ওসব লঞ্চ চলাচলে বিআইডব্লিউটিএর কতিপয় কর্মকর্তা মালিকদের উৎসাহিত করছে। বিনিময়ে তারা মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। ইতিমধ্যে ঈদ ঘিওে রাজধানীর সদরঘাট টার্মিনাল এলাকায় মানুষ ভিড় বাড়ছে। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ লঞ্চেই যাতায়াত করেন। ঈদের লঞ্চের চাহিদাও থাকে বেশি। এ সুযোগেই এক শ্রেণির লঞ্চ মালিক ঝুঁকিপূর্ণ লক্কড়-ঝক্কড় ও আনফিট লঞ্চে রঙ লাগিয়ে নৌপথে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ যাত্রীরাও নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা না করেই ওসব লঞ্চে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে। ফলে অজান্তেই অনেক সময় ঘটে যাচ্ছে বড় ধরনের নৌ-দুর্ঘটনা। নদী বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীদেও মতে, শুধু নকশা, কারিগরি কিংবা কাঠামোগত ত্রুটিই নয়, চালকের অদক্ষতার কারণেও বাড়ছে নৌ-দুর্ঘটনা। কারণ প্রতি বছর এপ্রিল থেকে মে ও জুন মাসেই বেশি নৌ-দুর্ঘটনা ঘটে। এই তিন মাস নৌ চলাচলের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক সময় বৈরি আবহাওয়ায় লঞ্চ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মালিকরা তা মানেন না। একইভাবে ঈদ উদযাপন করতে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া অনেকেই ভালো মানের যানবাহনে অগ্রিম টিকিট কিনতে পারেন না। ওসব যাত্রীকে টার্গেট করে বাড়তি ব্যবসার সুযোগ নিতে পুরনো যানবাহন রাস্তায় নামানো হচ্ছে। অধিক মুনাফার উদ্দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে রঙচঙ করা পুরনো যানবাহন ভাড়ায় এনে বিশেষ সার্ভিস নামে রাস্তায় নামায় পরিবহন কোম্পানিগুলো থাকেন। অসহায় মানুষ ঝুঁকি নিয়ে ওসব বাসে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছে। সড়কপথে ওসব পুরনো যান যেখানে-সেখানে বিকল হয়ে মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি করে, তখন অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়তে হয় ঘরমুখো হাজার হাজার মানুষকে।
সূত্র আরো জানায়, বিভিন্ন ডকইয়ার্ড ও গ্যারেজে পুরনো নৌযান ও বাস মেরামতের ধুম চলছে। রাজধানীর ও আশপাশের গ্যারেজগুলোর শ্রমিকরা এখন বিরামহীন কাজ করছে। সেখানে মালিকরা এমন গাড়িও আনে যা চলাচলের উপযোগী নয়। বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে যাত্রাবাড়ী-ডেমরা এলাকার পুরো রাস্তা, জুরাইন, বাবুবাজার, কেরানীগঞ্জ, টঙ্গী, গাজীপুর, সাভার, নবীনগরসহ বিভিন্ন এলাকার গ্যারেজে পুরনো বাস মেরামতের একটানা কাজ চলছে। দীর্ঘদিন বিকল হয়ে পড়ে থাকা দূরপাল্লার গাড়িগুলোকে মেরামত করে রঙতুলির আঁচড়ে নতুন করে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। ওসব গাড়িই দেশের বিভিন্ন রুটে যাত্রী পরিবহনে ব্যবহার হবে। আর বুড়িগঙ্গার কেরানীগঞ্জের তীরজুড়ে চলছে পুরনো লঞ্চে রঙ দেওয়া, জোড়াতালি এবং ধোঁয়া-মোছার কাজ। কেরানীগঞ্জের তেলঘাট থেকে মিরেরবাগ পর্যন্ত ৩০টির মতো ডকইয়ার্ডেই কোনো না কোনো পুরনো লঞ্চে রঙ লাগানো ও মেরামতের কাজ চলছে। প্রতি বছরের মতো এবারও দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মানুষ শঙ্কা নিয়েই ওসব লঞ্চে বাড়ি ফিরবে। আবার বাড়ি থেকে আসবে ঢাকায়।

এদিকে সদরঘাট নৌ-বন্দর ও ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম-পরিচালক মো. জয়নাল আবেদীন জানান, নদীতে শত শত আনফিট লঞ্চ চলছে এমন ঢালাও অভিযোগ সঠিক নয়।

অন্যদিকে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর এম মোজাম্মেল হক জানান, লক্কড়-ঝক্কড় লঞ্চ নদীতে নামতে দেয়া হবে না। ঈদের ৫ দিন আগেই বেশ কয়েকটি মোবাইল কোর্ট থাকবে। র‌্যাব, পুলিশ, আনসারসহ পর্যাপ্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য থাকবে।