rice-bdস্টাফ রিপোর্টার: হু হু করে বেড়েই চলেছে চালের দাম। ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিয়ে কারসাজির মাধ্যমে চালের দাম একটানা বাড়িয়ে অতি মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে। দেশে চালের সংকট এমন পর্যায়ে যায়নি যে এভাবে লাগামহীনভাবে দাম বাড়বে। এমন পরিস্থিতিতে চালের বাজার কড়া নজরদারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কারণ এক মাসের ব্যবধানে বিভিন্ন ধরনের চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় হাওরাঞ্চলের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সারাদেশে প্রত্যাশিত পরিমাণ বোরো ফসল উৎপাদিত হয়েছে। নতুন ধানও বাজারে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে চালের দাম এতো বাড়ার কথা নয়। চালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে সরকার নড়েচড়ে বসেছে। সেজন্য ধান ছাঁটাই, চালের মজুদ, বাজারে চাল সরবরাহ ও বাজার পরিস্থিতি কঠোরভাবে নজরদারির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় খাদ্যশস্য ব্যবসায়ী ও চালকল মালিকদের গুদাম পরিদর্শন করে তারা সরকারি বিধান যথাযথভাবে পালন করছেন কিনা তা যাচাই করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বেসরকারি পর্যায়ে চালের সরবরাহ অবাধ ও নিরুপদ্রব কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে। লাইসেন্সের শর্ত মোতাবেক খাদ্যশস্য ব্যবসায়ীদের নিয়মিতভাবে মজুদের হিসাব দাখিল নিশ্চিত করতে এবং তা যাচাই করার জন্য গুদাম পরীক্ষা করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে খাদ্য অধিদফতর থেকে তালিকাভুক্ত চালকল মালিকরা সরকারের সাথে চুক্তির পর চাল সরবরাহ করছে কিনা তা তদারকির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গুদামে চাল মজুদের হালনাগাদ তথ্য জানতে চেয়ে খাদ্য অধিদপ্তর থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল ও রংপুরের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, সরকার দি কন্ট্রোল অব এসেনসিয়াল কমোডিটিস অ্যাক্ট ১৯৫৬ ক্ষমতা বলে লাইসেন্সের মাধ্যমে আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী ও চালকল মালিককে ধান-চাল মজুদের সর্বোচ্চ পরিমাণ ও মেয়াদ নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। কিন্তু ওই নির্দেশ সঠিকভাবে অনুসরণ না করার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হচ্ছে। সেজন্য খাদ্য অধিদপ্তরের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমেও চালকল মালিকদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। তারা কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চাল নিয়ে কারসাজি করছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চালের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে কিনা তাও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। চুক্তি অনুযায়ী চাল না দিলে জরিমানা গুনতে হবে। প্রয়োজনে লাইসেন্স বাতিল করা হবে। তারপরও চালকল মালিকরা সরকারকে চাল সরবরাহে অনেকটা আনাগ্রহ দেখাচ্ছে। আর তাতেই খাদ্যশস্য অভিযান সংগ্রহে ভাটা পড়েছে।

সূত্র আরো জানায়, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চলতি অর্থবছরে ২২ হাজার ৪৬৩ চালকল মালিকের সাথে বোরো চাল সংগ্রহের জন্য চুক্তি করে সরকার। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা সরকারি গুদামে ৮ লাখ টন চাল সরবরাহ করবে। কিন্তু ঘোষণার একমাস সময় পেরিয়ে গেলেও গুদামে ঢুকেছে মাত্র ৭ হাজার ২৭৮ টন চাল। চাল সংগ্রহের জন্য খাদ্যমন্ত্রী নিজে উত্তরাঞ্চলে মিল মালিকদের সাথে বৈঠক করেছেন। তারপরও খাদ্যশস্য সংগ্রহে কাক্সিক্ষ গতি আসেনি। অথচ আমদানি করা চাল চলতি মাসের মধ্যে দেশে আসার সম্ভাবনা খুবই কম। পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও আপৎকালীন পরিস্থিতি সামল দিতে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ধান-চাল সংগ্রহেও আশাব্যঞ্জক সাড়া মিলছে না। চলতি বছর প্রতিকেজি চাল ৩৪ টাকা করে সংগ্রহ করার ঘোষণা দেয় সরকার। কিন্তু চালকলের মালিকরা তাতে সাড়া দিচ্ছেন না। তারা প্রতিকেজি চালে আরও ৪ টাকা বেশি চায়।

এদিকে বাংলাদেশ অটো, মেজর, হাসকিং ও মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী সমকালকে জানান, উৎপাদন খরচ দিলেই সরকারি গুদামে চাল দিতে রাজি আমরা। এক কেজি ধান কিনে তা মিলে ভাঙিয়ে চালে পরিণত করতে হলে ৩৭ থেকে ৩৮ টাকা খরচ হয়। তাই লোকসান দিয়ে ৩৪ টাকা কেজিতে চাল দেয়া সম্ভব নয়।

অন্যদিকে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরকারের কাছে চাল বিক্রির লাইসেন্স পেয়েছে। লাইসেন্স দেয়ার সময় অনেকের ক্ষেত্রে যোগ্যতা বিবেচনা করা হয়নি। চালকল নেই, বিদ্যুৎ সংযোগ নেই অথচ চাতাল দেখেই অনেককে চাল সরবরাহের অনুমতি দেয়া হয়েছে। দেশের শস্যভা-ারখ্যাত উত্তরবঙ্গে যাচাই-বাছাই ছাড়া অনেকেই লাইসেন্স পেয়েছে।

নীতিমালা অনুযায়ী চালকল মালিক হিসেবে লাইসেন্স পেতে হলে ব্যবসায়ীদের ধান-চাল শুকানোর চাতাল, চালকল, বিদ্যুৎ সংযোগ, গুদাম ব্যবসার অনুমতিপত্র, পরিবেশের ছাড়পত্র ও আয়করের কাগজপত্র থাকতে হয়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ওসব শর্ত পূরণ হয়নি। ওসব চাতাল মালিকরাই খাদ্য সংগ্রহ অভিযানে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ অতীতে বাজারমূল্য থেকে বেশি দামে তারাই চাল বিক্রির সুযোগ পেয়েছিল। এবার বাজার পরিস্থিতি তাদের প্রতিকূলে।
এ প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম জানান, মজুদের সংকট কাটাতে সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। দুঃসময়ে যারা পাশে থাকে না সরকার তাদের ক্ষেত্রে কোনো অনুকম্পা দেখাবে না। শর্ত না মানলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাম্প্রতিক