স্টাফ রিপোর্টার: ঈদ ঘিরে সবচেয়ে বেশি বিক্রির আশা থাকলেও এবার টানা বৃষ্টিতে ক্রেতারা দাঁড়াতে না পারায় হতাশার কথা বলছেন ফুটপাতের দোকানিরা। এবার রোজার শুরু থেকেই দুই-এক দিনের বিরতি ছাড়া টানা বৃষ্টির কারণে ঢাকার ফুটপাতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বিকিকিনি সেভাবে জমতে পারেনি।
বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের আগে এক সপ্তাহের কেনাবেচায় ‘পুরো মাসের ক্ষতি’ কাটিয়ে ওঠার আশায় ছিলেন তারা। কিন্তু বৃষ্টির কারণে তাদের সে আশায় গুড়ে বালি।
রাজধানীর মিরপুর, ফার্মগেইট, পল্টন ও গুলিস্তানের ফুটপাতগুলো ঘুরে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মুখ ভার করে বসে থাকতে দেখা গেছে।
একেতো বেচাকেনা কম, তার ওপর বৃষ্টির কারণে বার বার মালপত্র টানাটানি করে বিরক্ত ব্যবসায়ীদের জন্য মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে ‘পুলিশের ঈদ বকশিসের দাবি’।
মিরপুর গার্লস আইডিয়াল স্কুলের পাশের ফুটপাতে ব্যাগ বিক্রি করেন মোহাম্মদ কাসেম।
তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণে তো বসাই মুশকিল। ঈদের বিক্রি শুরুই হয় নাই। আবার পুলিশও তুইল্যা দেয় মাঝে মধ্যে। এমনিতেই বেচাবিক্রি নাই, তার ওপর হেগো ঈদ বকশিস। এমনে কি ব্যবসা করা যায়?
মিরপুর ২ নম্বরের বিভিন্ন বিপণি বিতানের সামনের ফুটপাতে প্যান্ট, শার্ট, গেঞ্জি, লুঙ্গি, গামছা, টুপি, ঘড়ি ও জুতা বিক্রি করেন অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। ঈদ উপলক্ষে হরেক পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসলেও বৃষ্টির উৎপাতে তারা শঙ্কিত। ছেলেদের পোশাক বিক্রেতা জাহাঙ্গীর আলম জানালেন, ঈদ উপলক্ষে বাড়তি শার্ট ও প্যান্ট এনেছেন তিনি। কিন্তু বৃষ্টির কারণে বিক্রি তেমন হচ্ছে না। কাপড়গুলা সাজাইছি আর গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হইছে, প্রত্যেকটা দিন যদি এমন হয়, তাইলে কেমনে বেচাকেনা করুম? বার বার কাপড় তুলতে আবার সাজাইতেই দিন শ্যাষ।
ফার্মগেইটের ফুটপাতের ব্যবসায়ীরাও বৃষ্টি বিড়ম্বনায় হতাশার কথা জানালেন।
ওই এলাকার ফুটপাতে কাপড় নিয়ে বসা আবদুল হাই বলেন, আমরা তো রাস্তায়ই দোকানদারি করি। মার্কেটে তো বসার সাধ্য আমাগো নাই, কিন্তু এইবার পুরা রোজার মাসে বৃষ্টির কারণে লাভ করতে পারি নাই। এই বৃষ্টিতে কাদাপানির মধ্যে তো সবাই বাইর হইতেও চায় না। পল্টন ও গুলিস্তানে ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা বৃষ্টি উপেক্ষা করেই পলিথিন টানিয়ে কোনোরকমে দোকান সচল রেখেছেন। বৃষ্টিতে বহুত মুসিবতে পড়ছি। বার বার পলিথিন দিয়া ঢাকতে হয়, কাপড় ভিজেও যায়, বলেন পল্টনের কাপড় বিক্রেতা রতন আলী। কি আর করমুৃ বাড়িত বইসা থাকলে তো আর বিক্রি হইব না। পোলাপাইন নিয়া তো ঈদ করন লাগব।
গুলিস্তানের জুতা বিক্রেতা শমসের আলীর অবশ্য ততটা হতাশ নন। বিক্রি হইতাছে, তয় বৃষ্টিটা না হইলে আরও হইত। আমরা গরিব মানুষ, রাস্তায় বিক্রি করা ছাড়া উপায়ও তো নাই।
শুধুমাত্র ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা নন, বিপাকে আছেন ফুটপাতের দোকানে কেনাকাটা করতে আসা নিম্ন আয়ের মানুষও।
নিম্ন আয়ের মানুষের অনেকেই রোজার প্রথম দিকে বড় বড় বিপণি বিতানে ঢুঁ মেরে পোশাক নেড়েচেড়ে দেখে শখ মেটালেও শেষ মেষ তাদের চাহিদা মেটানোর আশ্রয়স্থল হয় ফুটপাতের এই দোকানগুলো।
ফার্মগেইটের ফুটপাতের দোকানে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন আকলিমা খাতুন। ইচ্ছে থাকলেও বড় বিপণি বিতান থেকে মনমত পোশাক কেনার সামর্থ্য নেই তার।
“মার্কেট থেইকা তো কাপড় কেনার সামর্থ্য আমার নাই। মাইয়ার লেইগা কাপড় কিনতে আসছি, ছোট মানুষ। ওদেরই তো ঈদ।”
পুরান ঢাকার বকশীবাজার থেকে গুলিস্তানে কাপড় কিনতে আসা কালাম শেখ বলেন, “বৃষ্টির কারণে এই কয়দিন আসিনি। আজ আসছি, তাও বৃষ্টি। আমরা তো আর মার্কেট থেকে কিনতে পারব না। বৃষ্টিতেই দেখে কিনব, যেমন পাই।”
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু কলেজের শিক্ষার্থী নূর এ আলম গুলিস্তানের ফুটপাতে এসেছিলেন শার্ট কিনতে।
তিনি বলেন, “ফুটপাতে কিছুটা কম দামে কাপড় কেনা যায়। অনেক সময় গার্মেন্টের ভালো কাপড়ও মিলে যায়। দেখি কিছু পাই কিনা।”
< Prev | Next > |
---|