স্টাফ রিপোর্টার: চাল আমদানির উপর ধার্যকৃত ২৮ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এতে প্রতি কেজি চালের দাম কমপক্ষে ৬ টাকা কমবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে শুল্ক প্রত্যাহারের এ তথ্য জানিয়ে সাংবাদিকদের তোফায়েল আহমেদ বলেন, দেশে চালের সংকট নেই। মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই চালের ওপর ট্যাক্স কমানো হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই দাম কমবে। দুই একদিনের মধ্যেই এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হবে উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার,জনগণের সরকার।
তিনি জনগণের কষ্টের কথা চিন্তা করে চালের ওপর ধার্য করা ২৫ ভাগ শুল্ক ও ৩ ভাগ সম্পূরক শুল্ক কমিয়ে মোট ১০ ভাগ শুল্ক ধার্যের নির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশের কৃষকদের নিরাপত্তা ও উৎপাদিত ধানের সঠিক দাম নিশ্চিতের জন্যেই ১০ শতাংশ থেকে চাল আমদানি শুল্ক ২৫ ভাগ করেছিল সরকার।
সেই সঙ্গে আরোপ করা হয়েছিল আরো ৩ শতাংশ হারে সম্পূরক কর। কারণ কৃষক ধানের দাম না পেলে আবার সারা দেশে ছিঃ ছিঃ রব ওঠে। পত্রিকায়ও নানা ধরনের কথা লেখা হয়। চালের দাম বৃদ্ধির জন্য মিল মালিকদের দায়ী করে বাণিজ্য মন্ত্রী জানান, হাওড় অঞ্চলে এবার আগাম বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অন্যান্য অঞ্চলেও ফসলে কিছু ক্ষতি হয়েছে। তবে এতটা ক্ষতি হয়নি যে,চাল আমদানি করতে হবে।
মিল মালিকরা বেশি দাম পাওয়ার জন্যই এই কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে। এতদিন বিদেশ থেকে চাল আনতে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্কের সঙ্গে ৩ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি দিতে হত। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে কম্পিটিশন আইন নিয়ে এক কর্মশালার শুরুতেই মন্ত্রী শুল্ক কমানোর এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বলেন, শিগগিরই এ বিষয়ে আদেশ জারি হবে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে বাজার দ্রুতই স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আমরা আশা করছি। ইতোমধ্যে সরকারি পর্যায়েও চাল আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। আশা করা যায় বাজার দ্রুতই স্বাভাবিক হয়ে আসবে। ক্রমাগত দাম বৃদ্ধির মুখে সরকারের চালের মজুদও তলানিতে পৌঁছে যাওয়ায় সম্ভাব্য সংকট মোকাবেলায় ব্যবসায়ীদের চাল আমদানিতে বিনা মার্জিনে ঋণপত্র খোলার সুযোগ দিচ্ছে সরকার।
গত সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে জানায়, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চাল আমদানির এলসি খুলতে ব্যাংকগুলো কোনো ‘মার্জিন’ ধার্য করতে পারবে না।
অর্থাৎ, চাল আমদানির জন্য এলসি (ঋণপত্র) খোলার সময় ব্যবসায়ীদের অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা থাকতে হবে না। তারা বাকিতে চাল আমদানি করতে পারবেন এবং চাল দেশে আসার পর ব্যাংকের ঋণ শোধ করতে পারবেন। হাওরাঞ্চলে বন্যা, দেশের বিভিন্ন এলাকায় অতিবৃষ্টিসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চালের স্বাভাবিক সরবরাহে বিঘœ ঘটায় চালের বাজারে অস্থিতিশীলতা নিরসনে এই উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে চিঠিতে।
দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য চালের দাম গত তিন মাস ধরে বাড়তে থাকায় কষ্টে পড়েছে সাধারণ মানুষ। সরকারি হিসাবে গত এক বছরে মোটা চালের দাম বেড়েছে আট শতাংশের বেশি; চিকন চালের দাম বেড়েছে ২০ শতাংশ পর্যন্ত। সন্তোষজনক বাড়তি মজুদ থাকায় আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে চালের শুল্কহার ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করে সরকার। এর সঙ্গে রেগুলেটরি ডিউটি তিন শতাংশ যোগ হওয়ায় ব্যবসায়ীদের ২৮ শতাংশ শুল্ক গুণতে হয়। ফলে গত দেড় বছর ধরে বেসরকারি পর্যায়েও চাল আমদানি প্রায় বন্ধ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) চাল আমদানিতে এলসি খোলার পরিমাণ কমেছে ৫৪ দশমিক ১০ শতাংশ। আর এলসি নিষ্পত্তির পরিমাণ কমেছে প্রায় ৬৩ শতাংশ। কিন্তু এবার বোরো মৌসুমে আগাম বন্যায় সরকারি হিসাবেই হাওরে ছয় লাখ টনের মতো ধান নষ্ট হওয়ায় এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে (১০ টাকা কেজি দরের চাল) সাড়ে সাত লাখ টন চাল বিতরণ করায় সরকারি মজুদ তলানিতে নেমে আসে।
গতবছর এপ্রিলে যেখানে সরকারি গুদামগুলোতে সাড়ে ৭ লাখ মেট্রিক টনের বেশি চাল ছিল, সেখানে এ বছর ১৫ জুনে তা ১ দশমিক ৯০ লাখ মেট্রিক টনে ঠেকেছে। এই পরিস্থিতিতে বাজারে চালের দাম ক্রমাগত বাড়তে থাকায় সরকারিভাবে মোট ছয় লাখ টন চাল আমদানির পরিকল্পনা করা হয়। পরে সরকারিভাবে ভিয়েতনাম থেকে আরও আড়াই লাখ টন আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন পায়। এর মধ্যে প্রথম দেড় লাখ টনের দরপত্র দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার আরো ৫০ লাখ টন চাল আমদানির দরপত্র চাওয়া হয়েছে।
Next > |
---|