porjotonস্টাফ রিপোর্টার: দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশের রয়েছে পর্যটন খাত থেকে সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনা। তবে পর্যটনের এই বিপুল সম্ভাবনার স্ফূরণ সেভাবে ঘটেনি। পর্যটনশিল্পকে এগিয়ে নিতে সরকারের পক্ষ থেকে ২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ ঘোষণাসহ বহুমুখি উদ্যোগ নেওয়া হলেও পর্যাপ্ত উন্নয়ন ঘটেনি এই খাতটিতে।

পর্যটন সম্ভাবনায় বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় বরাবরের মতোই পেছনে থেকে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম কর্তৃক প্রকাশিত ‘ট্রাভেল অ্যান্ড টুরিজম কম্পিটিটিভনেস ইনডেক্স ২০১৭’-তে তবে ১৩৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৫তম। র‌্যাংকিংয়ে আগের বছরের চেয়ে দুই ধাপ উন্নতি হলেও পর্যটন খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশের স্কোর রয়েছে অপরিবর্তিত (২ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট)। আগের বছর ১৪০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২৭তম। আর বাংলাদেশের নিচের দিকের দেশগুলো হচ্ছে ক্যামেরুন, বেনিন, লেসোথো, নাইজেরিয়া, মালি, সিয়েরালিয়ন, মৌরিতানিয়া, কঙ্গো, বুরুন্ডি, চাঁদ ও ইয়েমেন। তালিকার নিচের দিকে থাকা এই দেশগুলোর বেশির ভাগই আফ্রিকার দেশ, যাদের আর্থিক ও নিরাপত্তার অবস্থা নিম্নমানের।

পর্যটন খাতের উন্নয়ন-সংক্রান্ত নীতিমালা, অবকাঠামো, যোগাযোগ, নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবাসহ ১৪টি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে এই তালিকা করা হয়। প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার ছয়টি দেশ পর্যালোচনা করা হয়েছে। এর মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে ভারত। দেশটি বৈশ্বিক র‌্যাংকিংয়ে ৪০তম (স্কোর ৪ দশমিক ১৮) অবস্থানে রয়েছে। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কা ৬৪তম, ভুটান ৭৮তম ও নেপাল ১০৩তম অবস্থানে রয়েছে।

নানা সহিংসতার দেশ পাকিস্তানও বাংলাদেশের চেয়ে এক ধাপ ওপরে ১২৪তম অবস্থানে রয়েছে। অন্যদিকে চার বছরে এ সূচকে ভারতের অবস্থান উন্নতি হয়েছে ২৫ ধাপ।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যেই ভারত তালিকায় ১২ ধাপ উন্নতি করেছে, যা এবারের প্রতিবেদনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অগ্রগতি। অন্যদিকে বাংলাদেশের অগ্রগতি দুই ধাপ হলেও সার্বিক অবস্থা স্থির রয়েছে দুই দশমিক ৮৯ পয়েন্টে। আর ২০১২ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১১৮তম। সে হিসাবে চার বছরে বাংলাদেশের অবস্থার অবনতি হয়েছে সাত ধাপ। ১৪টি বিষয় পর্যালোচনা করে দেশগুলোর অবস্থান নির্ধারণ করেছে ডাব্লিউইএফ। ওই সব বিষয়ের প্রতিটিতেই আলাদা র‌্যাংকিং করেছে সংস্থাটি। এতে দেখা যায়, ব্যবসায়িক পরিবেশে বাংলাদেশ ১০৪তম, পর্যটকদের নিরাপত্তার দিক দিয়ে অবস্থান ১২৩তম, সুস্বাস্থ্য ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় ১০৭তম, মানসম্পদ ও শ্রমবাজারে ১২১তম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে ১১৬তম, ট্রাভেল ও ট্যুরিজম অগ্রাধিকারে ১২৭তম, আন্তর্জাতিক উদারীকরণে ১০৪তম, মূল্য সক্ষমতায় ৮৯তম, পরিবেশগত টেকসই ব্যবস্থাপনায় ১২৮তম, বিমান যোগাযোগ অবকাঠামোয় ১১৩তম, ভূমি ও বন্দর অবকাঠামোয় ৭৪তম, পর্যটক সেবা অবকাঠামোয় ১৩৩তম, প্রাকৃতিক সম্পদে ১০৭তম, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং বাণিজ্যিক ভ্রমণে ৭৪তম বাংলাদেশ।

তালিকার শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে রয়েছে যথাক্রমে স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, কানাডা ও সুইজারল্যান্ড। প্রতিবেদনে বলা হয়, র‌্যাংকিংয়ে পিছিয়ে থাকলেও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর সার্বিক পর্যটন অবস্থার উন্নয়ন হচ্ছে। বিশ্বে সংরক্ষণবাদ ও বাণিজ্য বাধা বৃদ্ধির প্রবণতা থাকলেও দেশগুলোর জনগণের মধ্যে দেয়াল তৈরি না হয়ে সেতুবন্ধ সৃষ্টির আগ্রহ বাড়ছে। এ অবস্থায় যোগাযোগ বৃদ্ধি দেশগুলোর জন্য আবশ্যক হয়ে পড়েছে।

এদিকে, পর্যটন খাত-সংশ্লিষ্টদের মতে, বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের পর্যটন খাত বিকশিত হচ্ছে। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) এ খাতের অবদান ২ শতাংশ ছাড়িয়েছে। তবে ভালো হোটেল, মানসম্মত সেবার অভাব, বিদেশী পর্যটকদের জন্য বিনোদনের অভাব, নিরাপত্তাহীনতা, যোগাযোগ ও যাতায়াত সমস্যা, অবকাঠামোগত দুর্বলতা এবং সরকারের সুনজর ও পরিকল্পনার অভাবে এ খাতের সম্ভাবনা নষ্ট হচ্ছে।

অন্যদিকে প্রতিযোগী দেশগুলো প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাচ্ছে। বেসরকারি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, এতদিন পর্যন্ত কিন্তু বাংলাদেশের পর্যটন খাতে বাজেটের দিক থেকে খুব বড় কোনো স্থান পেত না। তবে এবারই আমাদের পর্যটন খাতে বিশেষভাবে বিপুল অঙ্কেরবাজেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয় পর্যটন খাতে বেসরকারিভাবে যাতে আরো বেশি ইনভেস্টমেন্ট করা হয় সেজন্য নানারকম সুবিধা দেয়া হয়েছে।

পর্যটনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জায়গায় যে রাস্তাঘাট, ব্রিজ তৈরি করা প্রয়োজন, যে কানেকটিভিটি দরকার সেগুলো করা হচ্ছে। এজন্য নতুন নতুন বিমান বন্দর তৈরি হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে দেশের পর্যটন খাতকে এগিয়ে নিতে সরকার গত ২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ ঘোষণা করা হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল, ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিন বছরে ১০ লাখ বিদেশি পর্যটক দেশে নিয়ে আসা।

তিনি বলেন, পর্যটন বর্ষকে ঘিরে দৃশ্যমান তেমন কোনো কর্মসূচি বা প্রচারণাই ছিল না। ২০১৬ সাল শেষ হয়ে ১৭ সাল চলে এল কিন্তু বিদেশি পর্যটক আগমনের হার তেমন একটা হতাশজনক নয়। তবে হ্যাঁ, আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী পর্যটক আসছেন না। যার অনেক কারণও রয়েছে। যেমন,গত বছর দেশে এক ধরনের অস্থিরতা ছিল। এর প্রভাব কিছুটা হলেও এ খাতে লেগেছিল। তার রেশ ধীরে ধীরে দূর হচ্ছে।

দেখুন, আমাদের দেশে একটি গোষ্ঠী আছে, যারা কখনও চায় না যে, দেশ এগিয়ে যাক। তাদের সেই ষড়যন্ত্রের কারণেও আমরা প্রত্যাশা অনুযায়ী এগোতে পারছি না। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এই খাতের যে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা রয়েছে, আগে সেভাবে চিন্তা বা প্রচারও করা হয়নি। এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই খাত থেকেও যে রাজস্ব আয় করা সম্ভব, সেটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

২০১৮ সালের মধ্যে ‘ভিজিট বাংলাদেশ কর্মসূচি’র আওতায় বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা ১০ লাখ এবং এ খাত থেকে আয়ের পরিমাণ প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২০ সাল নাগাদ সারাবিশ্বে পর্যটকের সংখ্যা ১৬০ কোটি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পর্যটকদের প্রায় ৭৩ শতাংশ এশিয়ার দেশগুলোতে ভ্রমণ করবে বলেও ধারনা করা হচ্ছে। সে অনুযায়ী আমাদের পর্যটন কেন্দ্রগুলো ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি, পর্যটন খাতের এসব উদ্যোগ ও কাজের দৃশ্যমান ফল সরকারের চলতি মেয়াদের মধ্যেই দেশবাসী দেখতে পাবে।

গের প্রতিবন্ধকতায় বিদ্যুৎ ও গ্যাস প্রাপ্তিতে বিলম্ব, বিনিয়োগ প্রক্রিয়াকরণে প্রাতিষ্ঠানিক জটিলতা, নিষ্কণ্টক জমির অভাব, ঋণের উচ্চ সুদের হার ইত্যাদি বাধা অপসারণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, ভূমি ব্যবস্থাপনা, রেকর্ড ও রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি আধুনিকায়নের কার্যক্রম দ্রুততর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর্থিক খাতে সংস্কারের মাধ্যমে ঋণের সুদের হার কমানোর পাশাপাশি বিদেশ থেকে স্বল্প সুদে ঋণ গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। বাজেট ঘাটতি সীমিত রাখাসহ ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ব্যক্তিখাতে ঋণের প্রবাহ নির্বিঘœ রাখা হয়েছে। আর্থিক খাতে পরিচালন পদ্ধতিসহ দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ঋণের সুদের হার কমিয়ে বিনিয়োগ উৎসাহিত করা হয়েছে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী।

ভ্যাটের হার জানতে ২৮ জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে: চূড়ান্ত ভ্যাটের হার জানার জন্য ২৮ জুন পর্যন্ত সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মালিকানাধীন বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স ফান্ড লিমিটেডের (বিআইএফএফএল) লভ্যাংশ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের ৬৮ কোটি টাকা লভ্যাংশ দিয়েছে। যার ৪৯ কোটি টাকা বোনাস শেয়ার ও ১৫ কোটি টাকা নগদ লভ্যাংশ। অর্থমন্ত্রী বলেন, ভ্যাট নিয়ে ২৮ জুন কথা হবে। সে দিনই এর চূড়ান্ত হার জানা যাবে। আমি ও প্রধানমন্ত্রী সেদিন সংসদে বক্তৃতা করবো। সেদিন আমিও কিছু কাভার করবো, তিনিও কিছু কাভার করবেন। আবগারি শুল্ক কামানোর বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আলোচনা চলছে।

সাম্প্রতিক