fgjg5hgkস্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশে উৎপাদনের তুলনায় চায়ের চাহিদা বেশি থাকায় বিদেশ থেকে চা আমদানি করতে হয়েছে। তবে সম্প্রতি সেই ঘাটতি পূরণ হয়ে চা বিদেশে রপ্তানি হয়েছে এবং বেড়েছে আয়ও। সূত্রমতে, গত কয়েক বছর দেশে চা-পাতার উৎপাদন কম হওয়ায় অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণে বিদেশ থেকে চা আমদানি করতে হয়েছে। আর দেশে চা-পাতার ফলন ভালো হওয়ায় এ বছর গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি চা রপ্তানি হয়েছে। টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টিটিএবি) -এর সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে দেশে চা-পাতা উৎপাদিত হয়েছে ৮৫ দশমিক ০৫ মিলিয়ন কেজি। গত বছর চা-পাতা রপ্তানির পরিমাণ ছিল মাত্র দশমিক ৬২ মিলিয়ন (ছয় লাখ ২০ হাজার) কেজি। আর ২০১৫ সালে চা-পাতা উৎপাদিত হয়েছিল ৬৭ দশমিক ৩৮ মিলিয়ন কেজি। রপ্তানির পরিমাণ ছিল গত বছরের তুলনায় কম। সেই বছর মাত্র দশমিক ৫৫ মিলিয়ন কেজি চা বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়েছিল। তবে, দেশে চা-পাতার বাম্পার ফলন হওয়ায় বছরের শুরুতেই চা রপ্তানির চিত্র পাল্টে গেছে। বছরের প্রথম তিন মাসে চা রপ্তানি হয়েছে ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন কেজি। মৌসুম শেষে উৎপাদন ১০০ মিলিয়ন কেজি ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছে বাগান মালিকরা।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের এক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ২০০১ সালে ১ কোটি ৩০ লাখ কেজি চা রপ্তানি করে ৯০ কোটি টাকা আয় হয়েছিল। বাংলাদেশ থেকে চা রপ্তানি করে সবচেয়ে বেশি আয় হয়েছিল ২০০৮ সালে। ওই বছরে ৮৪ লাখ কেজি চা রপ্তানি করে আয় হয়েছিল ৯৮ কোটি টাকা। এরপর থেকে চা রপ্তানি করে আয়ের পরিমাণ শুধুই কমেছে। ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সময়ে চা রপ্তানি করে আয়ের পরিমাণ ওঠানামা করেছে। ২০০৯ সালেই চা রপ্তানি অর্ধেকে নেমে আসে। ওই বছরে ৩২ লাখ কেজি চা রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৪৪ কোটি টাকা। ২০১০ সালে তা আরও কমে ৯ লাখ কেজি রপ্তানি করে আয় হয় মাত্র ১৮ কোটি টাকা। ২০১১ ও ২০১২ সালে চা রপ্তানি আয় সামান্য বেড়েছে। ২০১৩ সালে আবার কমে যায়। ২০১৪ সালে আবার সামান্য বেড়ে সাড়ে ২৭ লাখ কেজি চা রপ্তানি করে আয় হয় ২৯ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে এই খাত থেকে আয় হয়েছে ৩২ কোটি টাকা। গত ১৬ বছরে দেশে চায়ের চাহিদা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ২০০১ সালে দেশে চায়ের চাহিদা ছিল ৩ কোটি ৭০ লাখ কেজি। প্রতিবছরই এর পরিমাণ বাড়ছে। গত বছর এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৭০ লাখ কেজি। একই সময়ে চায়ের উৎপাদন বেড়েছে মাত্র ২৬ শতাংশ। অথচ চাহিদা বেড়েছে শতভাগ। ফলে উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা বেড়েছে অনেক বেশি। ২০০১ সালে দেশে চা উৎপাদন হয়েছিল ৫ কোটি ৩২ লাখ কেজি। এখন উৎপাদন হচ্ছে ৬ কোটি ৭৪ লাখ কেজি। দেশে উৎপাদিত চায়ের বড় অংশই এখন অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে লাগছে। ফলে রপ্তানির জন্য তেমন চা থাকছে না। যার প্রভাব পড়ছে রপ্তানিতে। এই সমস্যার সমাধান করা গেলে এই খাত থেকে আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। বাংলাদেশ চা বোর্ড ও ইপিবির সূত্র মতে, গত ১৫-২০ বছর আগেও বিশ্বের চা রপ্তানির ১ দশমিক  ৭৪ শতাংশের জোগান দেওয়া হতো বাংলাদেশ থেকে। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের ১১ মাসে চা রপ্তানিতে আয়  হয়েছে মাত্র ১৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

এ কারণে ২০১৬ সালে, চা রপ্তানি খাতে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি  হয়। তবে ২০১৭ সালে এসে দেশে চা-পাতার বাম্পার ফলন হয়েছে। উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রপ্তানিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছর জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে চা রপ্তানিতে আয় হয়েছে ২৩২ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আয় হয়েছে এক কোটি ৮৩ লাখ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ১৪৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে চা রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৮ লাখ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ৭৮ কোটি ৪০ লাখ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৯৫ দশমিক ৯২ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। বাগান মালিকরা জানায়, চা উৎপাদনের অনুকূল আবহাওয়া এবং বাগানে নতুন বিনিয়োগের কারণে চা উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। চা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, কুয়েত, ওমান, সুদান, পাকিস্তান, ইরান, আফগানিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চা রপ্তানি হচ্ছে।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের উপপরিচালক (পরিকল্পনা) মুনির আহমদ বলেন, আমাদের বার্ষিক উৎপাদন গড়ে ৬২ থেকে ৬৭ মিলিয়ন কেজি। দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা ছিল প্রায় ৭৮ মিলিয়ন কেজি। মুনির আহমদ বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ২০১৬ সালে ৮১ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে, যা চায়ের ইতিহাসে সবচেয়ে ভালো উৎপাদন ছিল। এটা হয়েছিল মূলত চায়ের জন্য আদর্শ তাপমাত্রার কারণে। আর ২০১৫ সালে হয়েছে ৬৭ দশমিক ৩৬ মিলিয়ন কেজি। মুনির আহমদ আরো বলেন, আমরা আগের তুলনায় এখন চা উৎপাদনে ভালো করছি। তবে চা উৎপাদন বেশির ভাগ নির্ভর করে আবহাওয়ার ওপর। বর্তমানের যে নিয়মে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে আশা করি সামনে উৎপাদন ভালো হবে। উপপরিচালক বলেন, এখন আমাদের ভালো উৎপাদন হওয়ার পেছনে কারণ হচ্ছে এ খাতে আমরা বিজ্ঞানীদের যুক্ত করতে পেড়েছি। সেইসঙ্গে শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছি।

 

সাম্প্রতিক