স্টাফ রিপোর্টার: চলতি বছরের ৩১ মে পর্যন্ত শুধু ঢাকা মহানগরীতেই বৈধ গাড়ির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ২৫ হাজার। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরেই রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার ১৮টি গাড়ির। অন্যদিকে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৪ মাসে সারাদেশে ৯২৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৮৮৮ জন নিহত এবং ৭১৬ জন আহত হয়েছেন। বুধবার জাতীয় সংসদে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য বেগম পিনু খানের প্রশ্নের লিখিত জবাবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জাতীয় সংসদকে এ তথ্য জানান। সরকারদলীয় সংসদ সদস্য দিদারুল আলমের প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় সারা বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে, এটি ঠিক নয়, বরং সরকারের বাস্তবধর্মী পরিকল্পনায় দুর্ঘটনা উত্তরোত্তর কমছে। পুলিশ রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০০৮ সালে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৪২৭টি এবং ২০১৬ সালে যা কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ৫৬৬টিতে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত গত ৪ মাসে সারাদেশে ৯২৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৮৮৮ জন নিহত এবং ৭১৬ জন আহত হয়েছেন। জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি ২০৩০-এর অনুসমর্থনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।
মন্ত্রী জানান, সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস করতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ধারাবাহিকভাবে প্রকল্প, কার্যক্রম ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে সড়ক দুর্ঘটনা ও দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমছে। তিনি আরও জানান, ইঞ্জিনিয়ারিং উদ্যোগ হিসেবে সরকার সারা দেশের মহাসড়ক নেটওয়ার্ক পরীক্ষা করে ২২৭টি ব্ল্যাক স্পট চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে শতাধিক ব্ল্যাক স্পটে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। দেশের ২২টি জাতীয় মহাসড়কে থ্রি-হুইলার বা অনুরূপ যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ফরিদুল হক খানের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, সরকার ২০০৯-২০১৬ মেয়াদে (বর্তমান সরকারের দু’মেয়াদের ৮ বছর) সারাদেশে ৭৩২টি সেতু এবং ৩ হাজার ২৩৪টি কালভার্ট নির্মাণ/পুনঃনির্মাণ করেছে। সংসদ সদস্য আবদুল মতিনের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আরও জানান, সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের অব্যবহৃত ফাঁকা জায়গায় প্রায়ই অসাধু লোকজন দখল করে। এ সমস্ত অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করার জন্য মাঠ পর্যায়ের সব সড়ক বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে যে সব স্থানে অবৈধ দখলদার রয়েছে সেখানে উচ্ছেদ কার্যক্রম চলমান। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এ মুহূর্তে নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মৌলভীবাজার, রাঙামাটি, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, বরিশাল, মেহেরপুর ও পিরোজপুর এলাকায় এ কার্যক্রম চলছে।
এদিকে, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়েকে আধুনিক, যুগোপযোগী, নিরাপদ, সাশ্রয়ী, পরিবেশ বান্ধব, নির্ভরযোগ্য ও যাত্রীসেবামূলক গণপরিবহন হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছে সরকার। রূপকল্প-২০২১ সামনে রেখে রেলওয়ের বহুমাত্রিক উন্নয়ন, সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সামগ্রিক কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে ২০১১ সালেই সরকার স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় গঠন করেছে বলে জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। ঢাকা-১ আসনের সংসদ সদস্য সালমা ইসলামের এক প্রশ্নের জাবাবে এসব তথ্য দেন তিনি। মন্ত্রী জানান, গুরুত্বপূর্ণ সেকশনগুলো ডাবল লাইন উন্নীত হলে অধিক সংখ্যক ট্রেন চালানো সম্ভব হবে। এতে রেল সেবার আওতা আরও বাড়বে এবং রেল ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে। দেশের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল করিডোর ডাবল লাইনের কাজ চলমান রয়েছে বলেও জানান মুজিবুল হক। তিনি বলেন, ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণের কাজ এবং ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লাইনের সমান্তরাল একটি ডুয়েল গেজ লাইনের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরাল একটি স্বতন্ত্র ডুয়েল গেজ রেল ব্রিজের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। খুলনা থেকে দর্শনা পর্যন্ত ডাবল লাইন নির্মাণে কাজ ভারতীয় ঋণে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঈশ্বরদী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত রেললাইনকে ডাবল লাইনের কাজ চীন সরকারের সঙ্গে জি টু জি ভিত্তিতে বাস্তবায়নের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে। একই পদ্ধতিতে জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ-জামালপুর লাইনেও বর্তমান লাইনের সমান্তরাল একটি ডুয়েল গেজ লাইন নির্মাণ করা হবে বলে সংসদে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক।
যশোর জেলার নাভারন থেকে সাতক্ষীরার মুন্সীগঞ্জ পর্যন্ত রেললাইন তৈরির প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে সংসদে জানান রেল মন্ত্রী। সাতক্ষীরা-১ আসনের সংসদ সদস্য মুস্তফা লুৎফুল্লাহর এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান তিনি। মুজিবুল হক বলেন, যশোর জেলার নাভারন থেকে সাতক্ষীরা জেলার মুন্সীগঞ্জ পর্যন্ত রেললাইন তৈরির পরিকল্পনা সরকারের আছে। ইতোমধ্যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে। সমীক্ষা অনুযায়ী নাভারন থেকে সাতক্ষীরা এবং সাতক্ষীরা থেকে মুন্সীগঞ্জ পর্যন্ত রেললাইন তৈরির জন্য দুটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্প দুটি বাস্তবায়নের জন্য এক হাজার ৬৫৬ কোটি ২৪ লাখ এবং চার হাজার ২৯১ কোটি ৬১ লাখ টাকার প্রয়োজন হবে। টাকার সংস্থান সরকারিভাবে করা অসুবিধা হতে পারে মনে করে এরইমধ্যে বিদেশি অর্থায়নের সুবিধার্থে দুটি পিডিপিপি অনুদান হয়েছে। অর্থায়ন চূড়ান্ত হলেই এর বাস্তবায়ন শুরু হবে। মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের সদস্য সুকুমার রঞ্জন সরকারের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে রেলওয়ের তিন হাজার ৭৫২ একরের বেশি জমি অবৈধ দখলে রয়েছে। এই পরিমাণ জমি দখলমুক্ত করা একটি চলমান প্রক্রিয়া। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এর ১৬৫ একরের সামান্য বেশি জমি থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়েছে। পঞ্চগড়-২ আসনের সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম সুজনের অপর এক প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী সংসদকে জানান, বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ের অব্যবহৃত জমির পরিমাণ ১০ হাজার ৮৪৩ একরেরও বেশি। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অব্যবহৃত রেলের জমি ব্যবহার করে পিপিপির আওতায় আধুনিক হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ, আন্তর্জাতিক মানের ৫ তারকা হোটেল কাম বাণিজ্যিক ভবন, বহুতল শপিং কমপ্লেক্স কাম বাণিজ্যিক ভবন ও গেস্ট হাউজ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রেলমন্ত্রী জানান, এই উদ্যোগের আওতায় চট্টগ্রামস্থ জাকির হোসেন রোডে ৫ তারকা হোটেল, চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতাল সংলগ্ন খালি জায়গায় একটি মেডিকেল কলেজ ও নার্সিং ইনস্টিটিউট স্থাপন এবং চট্টগ্রাম ও খুলনায় শপিং কমপ্লেক্স কাম গেস্ট হাউজ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, এমপি সানজিদা খানমের প্রশ্নে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক জানান, দেশে প্রতিবছর কাপড়ের চাহিদা ২ হাজার ৪০০ মিলিয়ন মিটার। এর মধ্যে ১৭০০-২০০০ মিলিয়ন মিটারের (৭০-৮৩ শতাংশ) চাহিদা দেশে উৎপাদিত কাপড় থেকে মেটানো হয়। বাকিটা চীন, জাপান, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি হয়। মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থ বছরের মে পর্যন্ত বস্ত্র খাত থেকে প্রায় ২৬ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিদেশি মুদ্রা এসেছে।
< Prev | Next > |
---|