ddfbgf5hgjস্টাফ রিপোর্টার: এদেশে কর্মরত বেসরকারি মেরিন একাডেমিগুলো বিশ্বমানের নাবিক ও ক্রু তৈরিতে পিছিয়ে রয়েছে। কোনো রকম জোড়াতালি দিয়ে চলছে অন্তত ৫টি বেসরকারি মেরিন একাডেমি। ওসব প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় শিক্ষক, পর্যাপ্ত ক্লাসরুম, ওয়ার্কশপ, গবেষণাগারের কোনো না কোনোটির ঘাটতি লেগেই আছে। এমন পরিস্থিতিতে মেরিন শিক্ষার নামে খুলে বসা ওসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছে নৌপরিবহন অধিদফতর। শিক্ষা এবং অবকাঠামো উন্নয়নে সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে কাক্ষিত মান অর্জন করতে হবে। নইলে একাডেমি বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। নৌপরিবহন অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজে বড় বেতনে চাকরির স্বপ্ন দেখিয়ে বেসরকারি মেরিন একাডেমিগুলো শিক্ষার্থী ভর্তি কওে এবং শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা টিউশন ও অন্যান্য ফি নেয়া আদায় করছে। কিন্তু বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই আন্তর্জাতিক মানের নাবিক ও ক্রু তৈরি করতে পারেনি। সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরার ওয়েস্টার্ন মেরিটাইম একাডেমি কার্যক্রম নিয়ে নৌপরিবহন অধিদফতরের ৩ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সরেজমিন পরিদর্শন করে। তাতে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত সমস্যার চিত্র বেরিয়ে এসেছে। সরেজমিনে কর্মকর্তারা দেখতে পান, ৫তলা ভবনের ১৪ হাজার বর্গফুট ফ্লোর স্পেসে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। গাইডলাইন অনুযায়ী একটি ক্যাম্পাসের সাইজ ন্যূনতম ৩০ হাজার বর্গফুট হতে হবে। থাকতে হবে ওয়ার্কশপ ও ফায়ার ফাইটিং ট্রেনিং সুবিধা, ল্যাংগুয়েজ ল্যাব, প্যারেড গ্রাউন্ড ও খেলার মাঠ। ২০১২ সালে অনুমোদনপ্রাপ্ত ওই প্রতিষ্ঠানটি ২০১৫ সালে ‘সি’ গ্রেড অর্জন করে। ২০১৬ সালে মানের আরো অবনতি হয়ে ‘ডি’ গ্রেড অর্জন করে। ওসব বিষয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের কোনো বক্তব্য নেই। ওই প্রতিষ্ঠানটিকে আগামী ৯ আগস্ট পর্যন্ত সময় দিয়ে বলা হয়েছে, গাইডলাইনের শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে অনুমোদন বাতিল করা হবে। তাছাড়া চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে ওশান মেরিটাইম একাডেমিকে (ওএমএ) আগামী ৯ আগস্টের মধ্যে শিক্ষার মান ও পরিবেশ উন্নত করতে সময়সীমা বেঁধে দিয়ে চিঠি দিয়েছে নৌপরিবহন অধিদফতর। অন্যথায় ওই প্রতিষ্ঠানটিরও পরিচালনার অনুমোদন বাতিল করা হবে। ২০১২ সালে অনুমোদন পাওয়া ওই প্রতিষ্ঠান ২০১৫ ও ২০১৬ সালে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মানের গ্রেডিংয়ে সর্বনিন্ম ‘ডি’ পেয়েছে। একইভাবে চট্টগ্রামের আরেক প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল মেরিন একাডেমি অব বাংলাদেশ এবং ঢাকার প্যাসিফিক মেরিটাইম একাডেমির পর্যাপ্ত প্রাতিষ্ঠানিক ও অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা নেই। ওই দুটি প্রতিষ্ঠানও বন্ধ করে দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

সূত্র জানায়, ইউনাইটেড মেরিটাইম একাডেমি কিছুটা ভালো অবস্থানে থাকলেও গাইডলাইনের অনেক শর্ত পূরণ করতে পারেনি। রাজধানীর এফডিসির পাশে ওই প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত সুবিধা ভালো। তবে তার সার্ভাইভাল ট্রেনিং একাডেমি, প্যারেড গ্রাউন্ড ও খেলার মাঠ নেই। দুই বছরে ওই প্রতিষ্ঠানের ১৩২ ক্যাডেট পাস করেছে। তার মধ্যে ৬১ ক্যাডেট জাহাজে চাকরি পেয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানকে আগামী ৯ আগস্টের মধ্যে প্রয়োজনীয় সব শর্ত পূরণে সময় দিয়েছে নৌপরিবহন অধিদফতর। যদিও প্রতিষ্ঠানটির ক্যাম্পাসে ওসব সুবিধাদি তৈরির মতো স্পেস নেই। তবে রাজধানীর সাঁতারকুলে প্রতিষ্ঠানটির আরেকটি ক্যাম্পাস করা হচ্ছে, সেখানে ওসব সুবিধাদি নিশ্চিত করা যেতে পারে। বিশ্বমানের নাবিক ও ক্রু তৈরিতে যে প্রতিষ্ঠানগুলো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সেগুলো হচ্ছে- ওয়েস্টার্ন মেরিটাইম একাডেমি, ওশান মেরিটাইম একাডেমি (ওএমএ), ন্যাশনাল মেরিন একাডেমি অব বাংলাদেশ এবং প্যাসিফিক মেরিটাইম একাডেমি। তাছাড়া ইউনাইটেড মেরিটাইম একাডেমি প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করেনি।

এ প্রসঙ্গে নৌপরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমোডর সৈয়দ আরিফুল ইসলাম জানান, উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত টিম কয়েকটি বেসরকারি মেরিন একাডেমি পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দিয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান গাইডলাইন পূরণে ব্যর্থ হয়েছে সেগুলোকে নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতিমধ্যে মানসম্মত শিক্ষা দিতে পারেনি এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আর কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখা হয়েছে।

সাম্প্রতিক