উপযুক্ত নজরদারি, কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এবং জনসচেতনতার অভাবে খাদ্যে ভেজালের মাত্রা ও পরিমাণ দুটোই বেড়ে চলেছে। আগে এই ভেজাল ছিল বড় শহরগুলোতে, এখন তা ছড়িয়ে পড়েছে সারা বাংলাদেশে, এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও।
ফলে হাজার হাজার মানুষ গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যায় পড়ছে, মারাও যাচ্ছে অনেকে। এ অবস্থার পরিবর্তনে কার্যকর পদক্ষেপ নেই বললেই চলে।
শহরাঞ্চলে বিশেষ করে ঢাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানসহ কিছু কিছু পদক্ষেপ মাঝেমধ্যে নেওয়া হয়। ভোক্তাদের মধ্যেও সচেতনতা বাড়ছে। এর সামান্য সুফলও লক্ষ করা যায়। কিন্তু সারা দেশ, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের হাটবাজার ভেজালের কাছে এখন পুরোপুরি অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে পরীক্ষা করে ৩০টি পণ্যের ১৮৩টি নমুনায় ভেজাল পাওয়া গিয়েছিল। এ বছরও চিত্র একই রকম আছে। ১৫টি পণ্যের ১৪৬টি নমুনায়ই ভেজাল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে আছে মিষ্টি, সয়াবিন তেল, সরিষার তেল, সেমাই, লবণ, হলুদ-মরিচের গুঁড়াসহ আরো কয়েকটি পণ্য। গত বছরও মিষ্টির শতভাগ নমুনায় ভেজাল পাওয়া গিয়েছিল, এ বছরও তাই পাওয়া গেছে।
ভেজাল খাদ্য তৈরিতে এমন অনেক রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, যেগুলো মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। অনেক সময় ফল-শাকসবজিতে কীটনাশকের ব্যবহারও স্বাস্থ্যহানি, এমনকি মৃত্যুর কারণ হয়। ভেজালের তালিকাও ছোট নয়। মাছে ও দুধে ফরমালিন, ফল পাকাতে কার্বাইড, মুড়িতে ইউরিয়া, আরো কত কি! সারা দুনিয়ায় ডিডিটি নিষিদ্ধ হলেও বাংলাদেশে শুঁটকি তৈরিতে এখনো তা ব্যবহৃত হয়। গুঁড়া মসলা, চানাচুর ও রঙিন খাবারে ব্যবহার করা হয় শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ও ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কাপড়ের রং। মুরগির খাবার বা পোলট্রি ফিড তৈরি হয় ট্যানারিশিল্পের বর্জ্য দিয়ে। অথচ এই বর্জ্যে ক্রোমিয়ামসহ এমন সব বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য থাকে, যেগুলো মাংসের মাধ্যমে মানবদেহে চলে আসে।
নিরাপদ খাদ্য অধ্যাদেশ ২০০৫ অনুযায়ী খাদ্যে ক্যালসিয়াম কার্বাইড, ফরমালিন, ইটোফেন, কীটনাশক বা বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদানের ব্যবহার নিষিদ্ধ। উন্নত দেশগুলোতে প্রিজারভেটিভ হিসেবে ফরমালিনের ব্যবহার অনেক আগেই নিষিদ্ধ হয়েছে। বাংলাদেশেও আইন আছে, কিন্তু বাস্তবায়ন নেই। দেশে ক্যান্সার, কিডনি ও লিভার রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। চিকিৎসকরা এর জন্য প্রধানত ভেজাল খাদ্যকেই দায়ী করছেন। শুধু খাবার নয়, অসুস্থ হলে যে ওষুধ খেয়ে আমরা বাঁচার চেষ্টা করি, সেই ওষুধেও ভেজাল। এ অবস্থার পরিবর্তন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। সরকারকে বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে।
< Prev | Next > |
---|