উম্মে কুলসুম
বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তির। একসময় বাংলাদেশে তথ্য সরবরাহ ছিল পুরোটাই পত্রভিত্তিক, যা ছিল অনেক সময়সাপেক্ষ, কেটে যেত মাসের পর মাস। কিন্তু আজকের বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে এমন অবস্থানে, যেখানে একটা তথ্য শেয়ার করতে কোনো সময়ক্ষেপণ হয় না। শুধু তাই নয়, বর্তমান বিশ্ব মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির রোলমডেল হিসেবে।
তরুণ প্রজন্মের অনেকেই এখন চাকরির পেছনে না ঘুরে ডিজিটাল বিশ্বের সম্ভাবনায় স্বপ্ন দেখে উন্নত জীবনের, স্বপ্ন দেখে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার। এখন আর তরুণ প্রজন্ম দুঃস্বপ্ন দেখে ভূরি ভূরি সার্টিফিকেট আর কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা নিয়ে অফিসের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ানোর, এখন স্বপ্ন দেখে কিছু টাকা সঞ্চয় করে একটি কম্পিউটার কিনে আইসিটি জগতে প্রবেশ করার। যেখানে কর্মক্ষেত্র থাকবে সীমাহীন, কর্ম থাকবে স্বাধীন; কিন্তু প্রতিটি কর্মে থাকবে সৃজনশীলতা। আমার বিশ্বাস, অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের আয়ের সর্বোচ্চ খাতটি হবে আইসিটি খাত। এত অল্প সময়ে ডিজিটাল খাতে বাংলাদেশের যে অগ্রগতি সাধন হয়েছে, তা সত্যিই বিস্ময়কর।
এখনই সময় তৃণমূল পর্যায় থেকে তরুণদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সঠিক পথ দেখানোর। প্রধানমন্ত্রী এ ক্ষেত্রে এক অনন্য মাইলফলক গড়ার যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, যা সত্যিই নন্দিত। যারা এই তরুণদের ডিজিটাল হিসেবে গড়ার কারিগর হিসেবে কাজ করবেন, প্রধানমন্ত্রী তাদের সঠিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ কারিগরে রূপান্তরিত করছেন। আবার চমৎকার সব সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে দক্ষ কারিগরদের তৈরি ডিজিটাল কন্টেন্ট যেন সারা বাংলায় একযোগে নয় লক্ষাধিক শিক্ষক শেয়ার করতে পারেন, সেই লক্ষ্যে সবার জন্য তৈরি করেছেন 'শিক্ষক বাতায়ন' নামে একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি ডাভোসে ঘোষণা দিয়ে এসেছেন, ২০২১ সালের মধ্যে নয় লাখ শিক্ষককে শিক্ষক বাতায়নে সদস্য করা হবে। তাই আমরা প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। সেই লক্ষ্যে আমরা তৃণমূলে কাজ করে যাচ্ছি।
আমি নিজেই একটি বিদ্যালয়ের আইসিটি শিক্ষক এবং উপজেলা আইসিটি কমিটির সভাপতি। মাঠপর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে কিছু প্রতিবন্ধকতা দেখতে পেলাম। সরকার অনেক ল্যাব বিদ্যালয়ে স্থাপন করেছে; কিন্তু অনেক বিদ্যালয়ে এখন পর্যন্ত একটি ল্যাপটপ, প্রজেক্টর, মডেম ও বিদ্যুৎ নেই। সবচেয়ে কষ্টদায়ক ছিল অনেক বিদ্যালয়ের প্রধান, সহকারী শিক্ষক জানতেনই না শিক্ষক বাতায়ন কী, মুক্তপাঠ কী? যদিও এখন তৃণমূলে কাজ করে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। বিড়ম্বনার বিষয়টি হলো, যখন তারা বুঝে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করলেন, বাদ সাধল উপকরণ! আবার অনেক স্থানে বিদ্যুৎ নেই বটে।
আমার একটা উপজেলার চিত্র যদি এই হয় তবে সারাদেশের চিত্র এ থেকে খুব একটা পার্থক্য হবে না। তাই সরকারের কাছে আবেদন থাকবে, আপনারা প্রতিটি বিদ্যালয়ে ল্যাব স্থাপন করুন; কিন্তু এটা বাস্তবায়ন করতে সময় লাগবে। তার আগে বাংলাদেশের প্রতিটি বিদ্যালয়ে কম করে হলেও একটি ল্যাপটপ, প্রজেক্টর ও মডেমের ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন। যেখানে বিদ্যুৎ নেই, সেখানে সোলার সিস্টেম চালু করা হোক।
ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে পাঠ আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করতে পারবে। দক্ষ নাগরিক হয়ে গড়ে উঠবে। শিক্ষার্থীদের অর্জিত জ্ঞান বাস্তবে প্রয়োগ করে বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধ ও প্রযুক্তিশীল দেশ গড়ে তুলতে পারবে। তৃণমূলের শিক্ষকরা শিক্ষক বাতায়ন, মুক্তপাঠসহ আরও অনেক বিষয়ে জানতে পারবেন। মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে ক্লাস উপস্থাপন করে তা ড্যাসবোর্ডে নিয়মিত পাঠাতে পারবেন। একটি ল্যাবের উপকরণ দিয়ে কমপক্ষে ২০টি বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো দিয়ে তাদের কার্যক্রম বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। আর এটা যদি সম্ভব হয়, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের প্রতিটি বাড়ি হবে এক একটি আইসিটি খামার বাড়ি।
< Prev | Next > |
---|