dfhgf5rg॥ এম. কে. দোলন বিশ্বাস ॥

‘আমাদের আমলে যেভাবে উন্নয়ন হচ্ছে, অতিতে কোনো সরকারই তা করতে সাহস দেখায়নি। আমরাই একমাত্র পরিবেশ সেক্টরে অতুলনীয় উন্নয়নে প্রদক্ষেপ নিয়েছি। সুতরাং আওয়ামী লীগ সরকার, বার বার দরকার।’ এরকম নানাবিধ উন্নয়ন ফেরিওয়ালাদের রাসালো স্লোগান ভেদ করে শেষ অবধি বিশ্বে সবচেয়ে দূষিত দেশের তালিকায় ওঠে এসেছে আওয়ামীবাদীদের এগিয়ে যাওয়ার ডিজিটাল বাংলাদেশের নাম।

পরিবেশ সেক্টরের উন্নয়নে বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকার স্তবকরা যে মন্তব্যই করুক না কোনো সেটা বড় কথা নয়। বাস্তবতা হচ্ছে, আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে পরিবেশ দূষিত হওয়ার মাত্রা। শিল্প বর্জ্য, মেডিক্যাল বর্জ্য, প্রাণিজ এবং অন্যান্য বর্জ্যসহ বিভিন্ন রাসায়নিক বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। বায়ু, পানি ও শব্দ দূষণ ঘটনা যেন আজ স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে জীববৈচিত্র্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। পরিবেশের ওপর পড়ছে জলবায়ুর প্রতিকূল প্রভাবও। জলবায়ু পরিবর্তনে জটিল ও কঠিন রোগ দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন প্রাণীকূলের ওপর। পরিবেশের ওপর জলবায়ুর প্রভাবের জন্য ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত, ভেক্টর প্রভাবিত এবং খাদ্যাভাবজনিত রোগসহ নানাবিধ জটিল ও অপরিচিত রোগ হয়ে থাকে। পরিবেশ দূষিত ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে গেছে।
জানা যায়, সবচেয়ে দূষিত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান দশম। আর বায়ু দূষণের দিক দিয়ে বিশ্বের ১৭৮ দেশের মধ্যে সবচেয়ে পেছনে বাংলাদেশের অবস্থান। আট বিষয় বিবেচনা করে ১শ’ স্কেলে বাংলাদেশের স্কোর ২৫ দশমিক ৬১। আর কেবল বায়ু দূষণের কথা বিবেচনা করলে বাংলাদেশের স্কোর ১শ’ এর মধ্যে মাত্র ১৩ দশমিক ৮৩। আর অবস্থান সবার শেষে, অর্থাৎ ১৭৮ নম্বরে। তবে জনস্বাস্থ্য, পয়ঃনিষ্কাশন ও কৃষি খাতের চিত্রে সামান্য উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। গত এক যুগে দূষণ ও পরিবেশের বিচারে বাংলাদেশ পিছিয়েছে।
সর্বশেষ প্রকাশিত ‘গ্লোবাল এনভায়রনমেন্টাল পারফরমেন্স ইনডেক্স ২০১৪’ অনুযায়ী, বিশ্বের ১৭৮ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৯ নম্বরে। পরিবেশ ও জীবনমানের ওপর এর প্রভাব নিয়ে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বৈশ্বিক সূচক প্রকাশ করেন। বাংলাদেশের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় থাকা এই দেশগুলো রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দুর্দশার মধ্যে থাকায় অনেক ক্ষেত্রেই পরিবেশের বিষয়গুলো পাশ কাটিয়ে যায়। জনস্বাস্থ্যের ওপর দূষণের প্রভাব, বায়ুর মান, পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন, পানিসম্পদ, কৃষি, বনায়ন, মৎস্য সম্পদ, জীববৈচিত্র্য ও বাসস্থান এবং আবহাওয়া ও জ্বালানি- এই আট বিষয় বিবেচনা করে ১শ’স্কেলে বাংলাদেশের স্কোর ২৫ দশমিক ৬১।

পরিবেশ ও জলবায়ু : পরিবেশ ও জীবন একে অপরের পরিপূরক। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে অব্যাহত থাকে জীবনচক্র। তবে মানুষের জীবনচক্রে গৃহপালিত প্রাণীর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। আবার প্রাণীদেরও বেঁচে থাকতে নির্ভর করতে হয় পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থার ওপর। পরিবেশের বিপর্যয় মানে জীবনের বিপর্যয়। প্রাণিস্বাস্থ্য, প্রাণী উৎপাদন ব্যবস্থাপনা এবং জলবায়ু পরিবর্তন একটি আন্তঃসম্পর্কিত জটিল প্রক্রিয়া, যার ওপর অনেকাংশেই নির্ভর করে রোগের প্রাদুর্ভাব, উৎপাদন ব্যবস্থাসহ আরও অনেক কিছু। বৈরী জলবায়ুর গ্রাস থেকে রক্ষা পাচ্ছে না বাংলাদেশও। এর পাশাপাশি যোগ হয়েছে পরিবেশ দূষণ। দূষণের দোষে দূষিত হয়ে উঠছে চারপাশ। শিল্প বর্জ্য, মেডিক্যাল বর্জ্য, প্রাণিজ এবং অন্যান্য বর্জ্যসহ বিভিন্ন রাসায়নিক বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। যার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে জীববৈচিত্র্যের ওপর। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গৃহপালিত প্রাণী। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে চারণভূমির অভাবে প্রাণী খাদ্যের অভাব হচ্ছে, তাপজনিত, ভেক্টর বাহিত এবং সংক্রামক রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে প্রাণিসম্পদ উৎপাদন হচ্ছে বাধাগ্রস্ত। অতিবৃষ্টি, উচ্চ তাপমাত্রা এবং খরার ফলে মানুষের অজান্তেই সৃষ্টি হচ্ছে একের পর এক শক্তিশালী ভাইরাস। জলবায়ু পরিবর্তনে বিভিন্ন প্রাণীর জটিল ও কঠিন রোগ দেখা দিচ্ছে। পরিবেশের ওপর জলবায়ুর প্রভাবের জন্য ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত, ভেক্টর প্রভাবিত এবং খাদ্যাভাবজনিত রোগসহ নানাবিধ রোগ হয়ে থাকে। নদীর এক কূল ভেঙ্গে গড়ে উঠছে আরেক কূল। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন পরিবেশ, যা অনেক ক্ষেত্রেই মানুষের জন্য বাসযোগ্য হয়ে ওঠে না। পরিবেশ অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কাজী সারওয়ার ইমতিয়াজ হাশমীও ওপরোক্ত তথ্যাদিও সাথে গণমাধ্যমে দেওয়া বৃবিতে একমত পোষণ করেছেন।

দূর্ষণে নদ-নদী : ঢাকার চার নদীকে দখল, দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে জরুরী ভিত্তিতে এ্যাকশন প্ল্যান নিতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে গঙ্গা এ্যাকশন প্ল্যানের কারিগরি ও প্রযুক্তিগত ব্যবস্থাপনা, অভিজ্ঞতা ও পারস্পরিক সহযোগিতা গ্রহণ করা যেতে পারে। এছাড়া রাইন ও টেমস নদীর উদাহরণও কাজে লাগানো যেতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নদী দূষণ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হলেও দূষণরোধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপই নেয়া হয়নি। দখলরোধে কিছু অভিযান চালানো হয়েছে মাত্র। এছাড়া অন্য কোনো উপায়ে ঢাকার নদীগুলো রক্ষা করা যাবে না। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন গাজীপুর, টঙ্গী, সাভার, কেরানীগঞ্জ, কামরাঙ্গীরচর, রূপগঞ্জ ঢাকা শহরের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চল থেকে নির্গত তরল বর্জ্যর নির্গমনের মুখগুলো নদীর দিক থেকে ঘুরিয়ে নিতে হবে যাতে নদীতে বর্জ্য নিক্ষিপ্ত হতে না পারে। নতুন লাইন তৈরি করে নদীর ধার বরবার কিনারা দিয়ে দূরে বিশাল বাঁধানো কূপ, শোধনাগার বা কারখানা (রিসোর্স অব রিসাইকেল ইউনিট) স্থাপন করতে হবে। ইউরোপে বর্জ্য নিক্ষেপের ৪ হাজার রিসাইকেল ইউনিট রয়েছে। এর মাধ্যমে মিথেন গ্যাস দিয়ে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন করা হয়। ভারতের গঙ্গা এ্যাকশন প্ল্যানে অনুরূপ প্রযুক্তি গ্রহণ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

ভারতের এ্যাকশন প্ল্যানের হিসাবে জানা যায়, প্রতি এক লাখ নাগরিকের জন্য এ ধরনের একটি ইউনিট স্থাপন করা হলে মাথাপিছু ২৫ টাকা ব্যয় হবে। আয় ৩৬ টাকা আয় হবে। এতে প্রকল্প গ্রহণকালীন মাথাপিছু ১১ টাকা লাভ হবে। এছাড়াও ঢাকার পয়ঃনিষ্কাশন ও শিল্প বর্জ্য গৃহস্থালী বর্জ্য নিষ্কাশন, পাগলা পয়ঃনিষ্কাশন শোধনাগার, মেডিক্যাল বর্জ্য সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনার উন্নতি সাধন, হাজারীবাগ ট্যানারি স্থানান্তর ও সেখানে সেন্ট্রাল পরিশোধনাগার স্থাপন করা যেতে পারে। শোধানাগারের নির্গত গ্যাস দ্বারা বিদ্যুত উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব। এছাড়াও শিল্প কারাখানার বর্জ্য শোধনাগার বাধ্যতামূলক করা, বাসাবাড়ির পায়খানার জন্য সেপটিক ট্যাংক ও চোক অয়েল দ্বারা শোধনাগার বাধ্যতামূলক যেতে পারে। পানিতেও বিশেষ আলোড়নের মাধ্যমে অক্সিজেন সৃষ্টি করে রোগ জীবাণু ও বীজাণু বংশবিস্তার রোধ করা। উজানের প্রবাহ ঢাকার চারদিকের নদীর প্রবাহ বৃদ্ধি ও নদীর পানি নবায়ন করা যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা জানান, ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও হাতির ঝিলের চারদিকে ২-৩ কিলোমিটার দূরত্বে রামপুরা খালে প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। ঢাকার বর্জ্য পর্যায়ক্রমে বা স্তরে স্তরে শোধন পরিশোধনের মাধ্যমে ভাটিতেও মেঘনা ও সাগরের সংযোগস্থলে ৩শ’ কিলোমিটার দূরত্বে নিরাপত্তা বেষ্টনী নিশ্চিত করে সাগরের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে বর্জ্য নেয়া যেতে পারে।

শব্দ দূষণ : মহানগরী ঢাকায় সহনীয় মাত্রার দেড় থেকে দুই গুণ বেশি শব্দ বিরাজ করছে। শব্দ দূষণের কারণে উচ্চচাপ, অনিদ্রা, শ্রবণশক্তি হ্রাস, মনসংযোগ কমে যাওয়া, মাথা ব্যথা ও মাথা ধরার জটিলতায় ভুগছে নগরবাসী। শুধু তাই নয়, রাজধানীবাসীকে খিটখিটে মেজাজ, বিরক্তিবোধসহ অস্বাভাবিক আচরণ করার মতো মানসিক ও দৈহিক নানাবিধ সমস্যার পড়তে হচ্ছে। শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ অধিদফতর, সিটি কর্পোরেশন, রাজউক, স্থানীয় সরকার, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) পরিচালিত বিভিন্ন স্থানের শব্দের মাত্রা পরিমাপের ভিত্তিতে পরিচালিত জরিপ প্রতিবেদনে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান জানান, রাজধানীতে নীরব এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা ৭৫ থেকে ৯৭ ডেসিবেল, যা মানমাত্রার চেয়ে দেড় থেকে দু’গুণ বেশি। আবাসিক এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা ৭৬ থেকে ১০৭ ডেসিবেল, যা মানমাত্রার চেয়ে দেড় গুণের বেশি। মিশ্র এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা ৭৩ থেকে ১০২ ডেসিবেল, যা মানমাত্রার চেয়ে দেড় গুণের বেশি। আর বাণিজ্যিক এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা ৭১ থেকে ১০৭ ডেসিবেল, যা মানমাত্রার চেয়ে দেড় গুণ বেশি। জরিপ হতে প্রাপ্ত ফলাফল মানুষের মানসিক ও শারীরিক সমস্যার জন্য অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। এভাবে শব্দ দূষণ চলতে থাকলে শিশুদের মধ্যে বধিরতার হার ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকবে। আর লেখাপড়ায় অমনোযোগী ও বিকার মানসিকতাসম্পন্ন হয়ে গড়ে উঠবে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, উচ্চ শব্দ শিশু, গর্ভবতী মা এবং হৃদরোগীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। শিশুদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে। আকস্মিক উচ্চ শব্দ মানবদেহে রক্তচাপ ও হৃদকম্পন বাড়িয়ে দেয়, মাংসপেশীর সংকোচন করে এবং পরিপাকে বিঘœ ঘটনায়। কণ্ঠনালীর প্রদাহ, আলসার ও মস্তিষ্কের রোগও হতে পারে। হঠাৎ খুব জোরে শব্দ, যেমন যানবাহনের তীব্র হর্ণ বা পটকা ফাটার আওয়াজ মানুষের শিরা ও স্নায়ুতন্ত্রের ওপর প্রচ- চাপ দেয়। উচ্চ শব্দ সৃষ্টিকারী হর্ণ মোটরযানের চালককে বেপরোয়া ও দ্রুত গতিতে যান চালাতে উৎসাহিত করে। এতে সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়।
পরিবেশ ও বন্য প্রাণী : বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের বনাঞ্চলের ওপর আগ্রাসন বেড়েছে। প্রতিনিয়ত বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়ছে। নিরাপদ আবাস হারিয়ে হিং¯্র হয়ে উঠছে বন্যপ্রাণীগুলো। ক্রমাগত জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বন উজাড় হয়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। চাষাবাদের জমি ও বাড়িঘর তৈরির জন্য ক্রমাগতভাবে এসব বন ধ্বংস হচ্ছে। বনাঞ্চলের সবুজ অবয়ব বিনষ্ট হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ফলে হাজার বছরের পরিচিত অনেক প্রজাতির পশু-পাখি চিরতরে হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষ হিসেবে টিকে থাকার জন্য পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা অত্যন্ত প্রয়োজন। তবে এজন্য নেতিবাচক মনোভাব থেকে বের হয়ে আসতে হবে। যা আছে সেখান থেকে আমাদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে শুরু করতে হবে। এক সময় সারাদেশে বাঘ ছিল, এখন তা শুধু সুন্দরবনে গিয়ে ঠেকেছে। বাংলাদেশের ঐতিহ্য বাঘ রক্ষায় আমাদের সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান এবং পরিবেশবিদ আবু নাসের খান জানান, দূষণগুলো বর্তমানে সাংঘাতিকভাবে বেড়ে গেছে। পাড়া-মহল্লাও শব্দ দূষণ বেড়ে গেছে। শব্দ ও বায়ূ এ দুটি দূষণ যে কোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে। তার মতে, পরিবেশের বিভিন্ন দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে সরকার বিভিন্ন সময়ে নানা কার্যক্রম হাতে নিলেও তা বাস্তবে তেমন কাজেই আসেনি। সরকার এখনই যদি পরিবেশের এ দূষণগুলো রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তাহলে অদূর ভবিষ্যতে দূষণগুলো ভয়াবহ রূপ ধারণ করে গোটা বিশ্বকে বিপর্যস্ত করে তুলবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করছেন আবু নাসের খান।
সমন্বয়হীন মন্ত্রণালয়সমূহের মধ্যে : নদীর পানি দূষণমুক্ত করতে আইনের কার্যকরী প্রয়োগে উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বর্তমানে দেশের অনেক নদী রাজনৈতিক দল মদদপুষ্ট ভূমিদস্যুদের দখলে যাওয়া এবং পানি ও পরিবেশ আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় নদী দখল ও দূষণ বাড়ছে। বাংলাদেশে পানি খাতের ব্যবস্থাপনায় সরকারের অন্তত ১৩টি মন্ত্রণালয় যুক্ত থাকায় খাতটিকে অনেক জটিল উল্লেখ তারা, যদি পানি ব্যবস্থাপনায় সুশাসন ও শুদ্ধাচার নিশ্চিত করা না যায় তাহলে জনস্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা, শিল্প উন্নয়ন, বাস্তুসংস্থানসহ মানুষের জীবন ও জীবিকা হুমকির সম্মুখীন হবে।
পরিবেশ দূষণের প্রভাব শিশুমৃত্যুতেও : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারা বিশ্বে ১৫ বছরের নিচে প্রায় এক কোটি শিশু বিভিন্ন পরিবেশ দূষণজনিত কারণ, দূষিত পানি, খাবার এবং দুর্ঘটনায় মারা যায়। ইউনিসেফ পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশের মোট শিশুর প্র্রায় ৪৫ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। এদের সংখ্যা হবে প্রায় তিন কোটির অধিক। এসব শিশুর মাধ্যে আবার ৪১ শতাংশের কোনো আশ্রয় নেই। আবার ৬৪ শতাংশ স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃসেবা থেকে বঞ্চিত। ৫৭ শতাংশ দৈহিক বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায় না। ১৬ ভাগ স্বাস্থ্য সেবা এবং ৩ ভাগ শিশু সুপেয় পানীয় জল থেকে বঞ্চিত। আর এ সমস্ত বঞ্চনার সঙ্গে যখন যোগ হয় পরিবেশ দূষণ, তখন হতদরিদ্র, সুবিধা-বঞ্চিত পরিবারের শিশুরা মারাত্মকভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আক্রান্ত হয়। পরিবেশ দূষণের কারণে বাংলাদেশের শিশুরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক এবিএম আব্দুল্লাহ গণমাধ্যমে জানান, হাসপাতাল-বর্জ্য সাধারণ গৃহস্থালি বর্জ্যরে চেয়েও ক্ষতিকর। সিরিঞ্জ ও স্যালাইনের ব্যাগ হেপাটাইটিস বি ও সিসহ কিছু রোগের জীবাণু ছড়ায়। রক্ত, মূত্রসহ বিভিন্ন তরল বর্জ্য নর্দমায় ফেলে দিলেই তা দূষণমুক্ত হয়ে যায় না। নর্দমার ভেজা, স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে টাইফয়েড ও আমাশয়ের মতো পানিবাহিত রোগের জীবাণু বহুদিন বেঁচে থাকে। রক্ত, পুঁজ, ব্যান্ডেজ, স্যালাইনের ব্যাগের মতো জীবাণুবাহী বর্জ্য পৃথক পাত্রে রাখা দরকার। আবার সুচ, সিরিঞ্জ জীবাণুবাহী বর্জ্য হলেও এতে আহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এগুলোর জন্য পাত্র হবে আলাদা। আর জীবাণু বহন করে না, এমন বর্জ্য রাখার জন্য পৃথক পাত্র থাকা দরকার। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নির্ণয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ গবেষক মুশতাক হোসেন জানান, বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ থেকে শ্বাসতন্ত্রের রোগ, চর্মরোগ এমনকি ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। (তথ্যসূত্র : জনকন্ঠ- ০৫.০৬.২০১৭)
আমরা মনে করি, পরিবেশের বিপর্যয় মানে জীবনের বিপর্যয়। পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহের মধ্যে সমন্বয় না থাকার অভিযোগ রয়েছে। এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে গত ৫ জুন পালিত হয়েছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু কিভাবে পরিবেশের বিপর্যয় থেকে উত্তোরণ ঘটবে, সেবিষয়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বাণীতে আবাস মিলেনি। যা নিতান্তই আশাহত।
(এম. কে. দোলন বিশ্বাস, কলামিস্ট )

সাম্প্রতিক